শিব পূজার পূজাসামগ্রী ও সাধারণ নিয়মকানুন এবং ধ্যানমন্ত্র

harhar mahadev



ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, মন্ত্রপাঠে অসমর্থ ব্যক্তিরাও ঈশ্বরের কৃপা পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের যথাযথ ভক্তিসহকারে পূজার মূল অর্থটি হৃদয়ঙ্গম করে পূজা করতে হবে।


তাই মন্ত্রপাঠ প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে, শিব মন্ত্র বা উপচারের বশ নন। আর যাই হোক, যিনি দেবের দেব, তাঁকে আপনি মন্ত্রে ভুলিয়ে উপচার ঘুষ দিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে পারবেন, এমন চিন্তা মনেও স্থান দেবেন না। শিব ভক্তির বশ। ভক্তের হৃদয় তাঁর আড্ডাঘর। শুধুমাত্র ভক্তিদ্বারা পূজা করলে পূজা তাতেই সিদ্ধ হয়। একথাও শাস্ত্রেও স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু আপনার অন্তরের ভক্তি আপনাকে মন্ত্রপাঠে উদ্বুদ্ধ করলে, অবশ্যই মন্ত্র পড়ে পূজা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মন্ত্রপাঠ শুদ্ধ উচ্চারণে হওয়া উচিৎ এবং আপনারও মন্ত্রের অর্থ জেনে তা পাঠ করা উচিত। তা না করলে মন্ত্রপাঠ বৃথা।




পূজাসামগ্রী ও সাধারণ নিয়মকানুন

এই জিনিসগুলি সাজিয়ে নিয়ে পূজা করতে বসবেন।—


১। একটি শিবলিঙ্গ।
২। একটি ছোটো ঘটিতে স্নান করানোর জল।
৩। একটি থালা, একটি গ্লাস ও কোশাকুশি। কোশাকুশি না থাকলে তামা বা পিতলের সাধারণ ছোটো পাত্র ব্যবহার করবেন।
৪। একটু সাদা চন্দন।
৫। একটুখানি আতপ চাল।
৬। কয়েকটি ফুল ও দুটি বেলপাতা (বেলপাতা না থাকলে দুটি তুলসীপাতা দিতে পারেন)।
৭। ধূপ, দীপ।
৮। নৈবেদ্য ও পানীয় জল (আপনার সাধ্য ও ইচ্ছামতো দেবেন। একটা বাতাসা হলেও চলবে।)
৯। প্রণামী (অন্তত একটি টাকা দেবেন। ইচ্ছা করলে বেশিও দিতে পারেন।)
১০। একটি ঘণ্টা।


উপচার সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞাতব্য হল এই যে, চন্দন, ফুল-বেলপাতা, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য এই পঞ্চোপচার পূজার ক্ষেত্রে অপরিহার্য্য। কোনো একটি উপচারের অভাব ঘটলে, সেই উপচারের নাম করে একটু জল দিলেও চলবে। আপনার প্রকৃত ভক্তিই সেই অভাব পূর্ণ করবে, এই কথা জানবেন।


শিবপূজা সর্বদা উত্তরমুখে বসে করবেন এবং শিবলিঙ্গকেও উত্তরমুখী করে রাখবেন। উত্তরদিক ব্রহ্মলোকপথ। তাই পরমব্রহ্মময় শিবের পূজা সর্বদা উত্তরমুখে বসে করাই নিয়ম। শিবলিঙ্গকে তামা বা পাথরের পাত্রে বসানো হয়ে থাকে।


ধ্যানমন্ত্র


ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্।


পদ্মাসীনং সমন্তাৎ স্তুতমমরগণৈর্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানং বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্ত্রং ত্রিনেত্রম্।।


ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।


বাংলা অর্থ— রজতগিরির ন্যায় তাঁহার আভা, যিনি সুন্দর চন্দ্রকে ভূষণরূপে ধারণ করিয়াছেন, যাঁহার দেহ রত্নময় বেশভূষায় উজ্জ্বল, যিনি পদ্মাসনে উপবিষ্ট, আনন্দময় মূর্তি, চতুর্দিকে দেবতারা তাঁহার স্তব করিতেছেন, যিনি ব্যাঘ্রচর্ম- পরিহিত, যিনি জগতের আদি, জগতের কারণ, সকল প্রকার ভয় নাশক, পঞ্চবদন এবং প্রতিটি বদনে তিনটি চক্ষু, সেই মহেশকে নিত্য এইরূপ ধ্যান করিবে।