অনুপ্রেরণার আর এক নাম কালাম স‍্যার-প্রয়াণ দিবসে জানুন সেই মহামানবকে



প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, মিসাইল ম্যান এপিজে আব্দুল কালাম। যুব সমাজের অনুপ্রেরণার আর এক নাম। ১৫ই অক্টোবর ১৯৩১ সালে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবুল পকির জইনুল আবেদিন আব্দুল কালাম জন্মগ্রহণ করেন। এই মহামানব শুধু ভারতের রাষ্ট্রপতিই ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী। ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে পদ অলংকৃত করেছেন। বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে ১৯৩১ সালে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তামিলনাড়ুর অত্যন্ত গরিব পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন তিনি। পিতা জয়নুল আবেদিন পেশায় নৌকা চালক। তাই সংসারে সাহায্য করতে সংবাদপত্রে লেখালেখি করেন তিনি। ২৭শে জুলাই তারিখেই তাঁর প্রয়ান হয়। আজ সেই দিন।


যুব সমাজকে চাকরিপ্রার্থী হওয়ার বদলে, চাকরিদাতা হওয়া প্রয়োজন



বিদ্যালয়ে তিনি সাধারণ মানের ছাত্র থাকলেও ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও কঠোর পরিশ্রমী। শিক্ষাগ্রহণ ছিল তাঁর তীব্র বাসনা। রামনাথপুরম স্কোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল পড়ার পর পদার্থবিদ্যা বিষয়ে সেন্ট জোসেফ'স কলেজ থেকে ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর বিমান প্রযুক্তিবিদ্যা (এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) বিষয় নিয়ে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এম আই টি) থেকে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি।


যদি সূর্যের মতো উজ্জ্বল হতে চাও, তাহলে তোমাকেই প্রথমে সূর্যের মত পুড়তে হবে




তিনি যোদ্ধা পাইলট হওয়ার পরীক্ষায় একটি স্থানের জন্য পিছিয়ে যান। ভারতীয় বিমান বাহিনীতে ৮ জন যোদ্ধা পাইলট নিয়োগ হয় কিন্তু তিনি পরীক্ষায় এসেছিলেন নবম স্থানে। ফলে, যোদ্ধা পাইলট হতে পারেননি তিনি।





১৯৬০ সালে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার এরোনটিক্যাল ডেভলপমেন্ট এস্টব্লিশমেন্টে বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করে একটি ছোট হোভারক্রাফটের নকশা তৈরি করে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় যোগ দেন। ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণকারী যান (এসএলভি-III)-এর প্রকল্প পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৬৫ সালে একটি রকেট প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে নাসার ল্যাংলি রিসার্চ সেন্টার, গোডার্ড স্পেশ ফ্লাইট সেন্টার এবং ওয়ালোপ্স ফ্লাইট ফেসিলিটি পরিদর্শন করেন। তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালের মাঝে পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (পিএসএলভি) এবং এসএলভি-III গড়ার চেষ্টা করেন। তিনি এই কাজে সফল হয়েছিলেন।


তুমি তোমার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারবেনা কিন্তু অভ্যাস পরিবর্তন করতে নিশ্চই পারবে, এবং অভ্যাসই তোমার ভবিষ্যত পরিবর্তন করে দেবে




চল্লিশ বছর তিনি প্রধানত রক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন (ডিআরডিও) ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন।ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশযানবাহী রকেট উন্নয়নের কাজে তার অবদানের জন্য তাকে ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ বা ‘মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়। ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ পরমাণু বোমা পরীক্ষায় তিনি প্রধান সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন।


যদি তুমি ব্যর্থ হও অর্থ্যাৎ FAIL করো, তাহলে মোটেই হাল ছেড়ে দিওনা | কারণ FAIL শব্দটার একটা অন্য মানে আছে First Attempt in Learning অর্থ্যাৎ শিক্ষার প্রথম ধাপ




২০০২ সালে তৎকালীন এনডিএ সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের সমর্থনে ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হন তিনি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি ছিলেন জনতার রাষ্ট্রপতি। ভারতের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্নে ভূষিত হন। তিনি রাষ্ট্রপতি ভবন দখলকারী প্রথম বিজ্ঞানী এবং প্রথম ব্যাচেলরও ছিলেন।


জীবন আর সময় হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক | জীবন শেখায় সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মুল্য দিতে




পাঁচ বছর রাষ্ট্রপতি থাকার পর তিনি শিক্ষাবিদ, লেখক ও জনসেবকের সাধারণ জীবন বেছে নেন। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট শিলং, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট আহমেদাবাদ এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট ইন্দোর -এ ভিজিটিং প্রফেসর হয়েছিলেন। ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে একজন অনারারি ফেলো ছিলেন। তিরুবনন্তপুরমে ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের উপাচার্য, আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক;সহ ভারতের একাধিক গবেষণা ও অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। তিনি হায়দ্রাবাদের আন্তর্জাতিক তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে তথ্য প্রযুক্তি এবং বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি পড়িয়েছিলেন। ২০১২ সালের মে মাসে কালাম ভারতের যুব সমাজের জন্য দুর্নীতিকে পরাজিত করার কেন্দ্রীয় থিম সহ হোয়াট ক্যান গিভ মুভমেন্ট নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছিলেন।




কালাম একাধিক বই ও ডকুমেন্ট্রি লিখেছিলেন। ইন্ডিয়া ২০২০, মিশন ইন্ডিয়া, ইউ আর ব্রন টু ব্লোসমস, টার্গেট ৩ বিলিয়ন সহ একাধিক বই লিখেছেন তিনি। তাঁর প্রতিভা সারা ভারতের যুব সমাজের কাছে অনুপ্রেরনা হয়ে দাঁড়িয়ে।


“স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো | স্বপ্ন হলো সেটাই যা পূরণের অদম্য ইচ্ছা তোমায় ঘুমাতে দেবে না”


কালাম ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি পেয়েছিলেন। ভারত সরকার ১৯৮১ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৯০ সালে পদ্মবিভূষণ, ১৯৯৭ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারত রত্ন পান। এছাড়াও তিনি একাধিক সম্মানে সম্মানিত হন। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) গবেষকরা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন (আইএসএস) এর ফিল্টারগুলিতে একটি নতুন জীবাণু আবিষ্কার করেছিলেন এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আবদুল কালামকে সম্মান জানাতে সলিব্যাসিলাস কালামি নামে নামকরণ করেছিলেন। অনারারি প্রফেসর, অনারারি ডক্টরেট, হোভর মেডেল, ডক্টর অফ সায়েন্স, ডক্টর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সহ একাধিক সম্মানে সম্মানিত হন তিনি।




২০১৫ সালের ২৭শে জুলাই শিলং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে বসবাসযোগ্য পৃথিবী বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় সন্ধ্যা ৬:৩০ নাগাদ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। তাকে বেথানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে সন্ধ্যা ৭:৪৫ নাগাদ পরলোক গমন করেন। ভারত সরকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কালামের মৃত্যুতে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা করেন।


শিক্ষন একটি মহান পেশা, যা কোনো ব্যক্তির চরিত্র, ক্ষমতা এবং ভবিষৎ কে আকার দেয়। যদি মানুষ আমাকে একজন ভালো শিক্ষক রূপে মনে রাখে তবে তা আমার জন্যসব থেকে সম্মানজনকহবে।


তিনি শুধু ভারতের রাষ্ট্রপতি, মিসাইল ম্যান-ই নন। একজন সুদক্ষ শিক্ষকও ছিলেন। তাঁর দেওয়া মূল্যবান বাণী মানব জীবনকে সাধিত করায় বিরাট ভূমিকা রাখে।


একজন মহান শিক্ষক জ্ঞান,অদম্য ইচ্ছা আর করুনার দ্বারা নির্মিত হন