উত্তরে রাজবংশী সম্প্রদায়ের তেরেয়া পূজা



মধুসূদন রায়, ময়নাগুড়িঃ 



১৩ ফাল্গুন প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে রাজবংশী সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে পালিত হচ্ছে তেরেয়া পূজা ও রাখাল সেবা। জানা যায়, প্রতিবছর ১৩ ই ফাল্গুনের দিনটিতে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষেরা ঠান্ডা কে বিদায় জানানোর জন্য তেরেয়া পূজার আয়োজন করে। এবং এই পূজার পরিসমাপ্তি ঘটে পাড়ার সকল কে নিয়ে ভোজন এর মধ্য দিয়ে যা রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে রাখাল সেবা নামে পরিচিত । রাজবংশী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পূজার মধ্য দিয়ে ঠান্ডা কে বিদায় জানিয়ে নতুন ঋতু কে স্বাগত জানানো হয়। রাজবংশী সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা জানান, এই পূজার উপকরণ হিসেবে একটি কলার ঢাকনা শিমুল, পলাশ ও বসন্তের নানা ধরনের ফুল, গোবর, জল, তুলসি পাতা ও ধূপ-কাঠির প্রয়োজন হয়। প্রথমে কলার ঢাকনায় শিমুল, পলাশ প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে সাজানো হয়। তারপর রাস্তার মোড়ে সেই কলার ঢাকনায় ধুপ জ্বালিয়ে পূজো দেওয়া হয়। সেখানে ঠান্ডা শেষ হয়ে বসন্ত ঋতুকে স্বাগত জানান বাসিন্দারা।


 
দেবতার কাছে ঠান্ডা শেষ করার প্রর্থনা জানিয়ে ছেলে মেয়ে ও পুরুষেরা রাস্তার মোড়ে জল নিয়ে গিয়ে স্নান করেন। কথিত আছে তেরেয়া পূজার পর সেখানে স্নান করে দৌড়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। পিছন ফিরে দেখা চলবে না। রাজবংশীদের বিশ্বাস অনুযায়ী পিছন ফিরে দেখলে সেই ব্যক্তির মন থেকে ঠান্ডা যায় না। পুজোর দ্বিতীয় ধাপ অবশ্য রাত্রিতে। ওই দিন প্রত্যেক পাড়ায় পাড়ায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষেরা মিলিত ভাবে পাড়ার মাঠে ভোজন বা পিকনিকের আয়োজন করেন যা তাদের কাছে রাখাল সেবা নামে পরিচিত। সেখানে গ্রামের পুরুষেরা দেবতাদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে রান্নাবান্না করে পরিবেশন করেন। 




এ বিষয়ে ময়নাগুড়ি ব্লকের সাপ্টিবাড়ি ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের কাশীর ডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা কমল রায় বলেন, এদিন প্রায় প্রতিটি রাজবংশীর ঘরে ঘরে তেরেয়া পূজা পালন করে যেমন তারা বসন্ত ঋতু কে স্বাগত জানায় তেমনি রাখাল সেবার মাধ্যমে রাত্রিবেলায় বসে গান বাজনার আসর বসে সেখানে কীর্তনও করা হয়। সব শেষে সকলে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে এক আনন্দের পরিবেশ তৈরি করে। এটি রাজবংশী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিচয়। পাশাপাশি তিনি বলেন বর্তমান দিনে অনেক রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের প্রাচীন সংস্কৃতিকে ভুলে যাচ্ছে। আবার অনেক নতুন প্রজন্মের মানুষেরা সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য তেরেয়া ও রাখালসেবা পালন করে থাকে।