দলের মধ্যে নিজের প্রতি কর্মীদের অসন্তোষকে ঢাকতেই 'দু পয়সার' প্রেস কে দূরে রাখতে চাইছিলেন মহুয়া? 




রবিবার গয়েশপুরে কর্মী সভা করতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এদিন কার্যত মেজাজ  হারিয়ে কথা বলেন দলীয় কর্মীদের সাথে, এমনকি সংবাদমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'কে ঢুকতে দিয়েছে এই দু'পয়সার প্রেসকে?' 

মহুয়ার এই বক্তব্যের পরেই শোরগোল পরে যায়, শুধু তাই নয় বৈঠক শেষ হতেই সভামঞ্চের বাইরে সাংবাদিকরা  প্রশ্ন করতেই মহুয়ার সাফ জবাব- ''কে রেকর্ড করতে বলেছে।'  একথা বলেই সাংবাদিকদের  এড়িয়ে গাড়িতে  চরে  চলে আসেন।  

মহুয়ার এই মন্তব্যে বিজেপি-র কটাক্ষ, 'মহুয়া মৈত্র নিজের দলের কর্মীদেরই সমর্থন পান না। সবাইকে খুব অপমান করেন।' খোদ অমিত মালব্য টুইট করে মহুয়া মৈত্রকে কটাক্ষ করেন।

যানা  গেছে, কল্যাণীর বৈঠক সেরে গয়েশপুরের সুকান্ত সদনে আসেন তৃণমূলের সাংসদ।মহুয়া মৈত্র সেখানে পৌঁছতেই তাঁকে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের কর্মীরা ঘিরে ধরেন। এ বিষয়ে মহুয়া মৈত্র বলেন, 'এটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিছু রাগ অভিমান ছিল। সেগুলো বৈঠকের পর মিটে গিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিতেই পারে। খুব সাধারণ ব্যাপার। আমি আবার জানুয়ারিতে আসব।' 


সেই সভা কভার করতে হাজির ছিল প্রেসও। তিনি প্রেসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'কে ঢুকতে দিয়েছে প্রেসকে? দু পয়সার প্রেস। বেরিয়ে যান।' 

দলের মধ্যে নিজের প্রতি কর্মীদের এই অসন্তোষকে ঢাকতেই কি মহুয়া এদিন সাংবাদিকদের দূরে রাখতে চাইছিলেন-তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ 'সংবাদ মাধ‍্যম'-কে এরকম ভাবে আঘাত করায়, মর্যাদা লঙ্ঘন করায় চারিদিকে নিন্দার ঝড়। খোদ কলকাতার প্রেস ক্লাবকে সোমবার এক বিবৃতি দিতে হল! বিবৃতি দিয়ে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র সাংবাদিকদের সম্বন্ধে যে মন্তব্য করেছেন তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং তীব্র প্রতিবাদ জানায়। নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত, অপমানজনক মন্তব‍্য বলেও জানায়। কলকাতা প্রেস ক্লাব বিবৃতিতে আরো জানায়,  'গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাংবাদিকতার গুরুত্ব এবং এই পেশার সম্মান সর্বজনবিদিত। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে একজন সাংবাদিকের পেশাগত সংগ্রাম ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি রয়েছে। সেই মহান কাজের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকদের আঘাত করার কোন অধিকার কারও নেই। ধিক্কার জানাই সাংসদের মন্তব্যে। আশা করি, সাংসদ তাঁর এই মন্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করবেন।'

একজন সাংসদ হিসেবে মহুয়া মৈত্রের সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভকে নিয়ে এরকম মন্তব‍্য দুঃখজনক। ২০১৯-এর এপ্রিলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা 'রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডাসে'র তালিকায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারত ১৪০তম স্থানে! সেই স্থান যে আর ও নীচে নামতে পারে তা বলাই বাহুল‍্য। যেখানে সংবাদ মাধ‍্যমের মধ‍্য দিয়ে দেশের সকল নাগরিক নিজেদের মত পোষন রাখার সুযোগ পায়, সংবাদ মাধ‍্যমের স্বাধীনতাকে এভাবে আঘাত করে মতামতের ক্ষমতাকেই খর্ব করে দিলেন তিনি!

নিজস্ব ট্যুইটার হ্যান্ডেলে এই নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন, তবে সেই ক্ষমা চাওয়ার ভাষা নিয়েও আবার প্রশ্ন উঠেছে।