মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে অ্যাপোলো কলকাতার ICU-তে ২৫ তম বিবাহ বার্ষিকী পালন করলেন ব্যাঙ্ককর্মী



কলকাতা, ডিসেম্বর 17: ম্যালেরিয়ার আক্রমণে প্রদীপ চৌধুরীর ফুসফুস ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এত ক্ষতি হয়েছিল, যে সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশনেও সাড়া দিচ্ছিল না। ফলে ডাক্তাররা এই ৫৩ বছর বয়সী রোগীকে ই সি এম ও যন্ত্রে চাপাতে বাধ্য হন। এই যন্ত্র শরীরের বাইরেই রোগীর রক্তে অক্সিজেন সঞ্চার করে, যাতে হৃদপিণ্ড আর ফুসফুস বিশ্রাম পায়। 

ডাক্তাররা রোগীর পরিবারের লোকজনকে বলেই দিয়েছিলেন, যে প্রদীপবাবুর এই লড়াই জেতার সম্ভাবনা মাত্র ১%। তা সত্ত্বেও ডাক্তাররা চিকিৎসার সমস্ত সম্ভাব্য পথ খোলা রেখেছিলেন এবং শেষ চেষ্টা হিসাবে ঝুঁকি নিয়ে ই সি এম ও ব্যবহার করেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত কাজে লেগে যায়। 




গত সোমবার প্রদীপবাবু দু মাসের বেশি হাসপাতালে থাকার পর তাঁর বেহালার বাড়িতে ফিরেছেন। এই সময়ের তিন চতুর্থাংশই তিনি হয় ভেন্টিলেশনে বা ই সি এম ও-তে ছিলেন। 

অবস্থার উন্নতি হয় একেবারে শেষ মুহূর্তে, এবং গুজরাটের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী প্রদীপবাবু ভেন্টিলেশন থেকে বেরিয়ে এসে নভেম্বর ২৬, ২০২০ তারিখে আই সি ইউ তে থাকা অবস্থাতেই তাঁর বিয়ের রজত জয়ন্তী পালন করতে সক্ষম হন। স্ত্রী মানসীর সাথে তিনি চারটে কেক কাটেন। তার মধ্যে তিনটে এসেছিল হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ থেকে। 

“আমাদের ২৫তম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে রায়চকে বন্ধুদের নিয়ে ধুমধাম করে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছিলাম। সেটা হল না। কিন্তু এই রোগভোগ জীবনটা যেমন তাকে তেমন করেই উদযাপন করতে শিখিয়ে দিল আমাদের। আমার কাছে আমার সেরে ওঠা অলৌকিক ঘটনা ছাড়া কিছুই নয়,” প্রদীপবাবু বললেন। 

গুজরাটের ভদোদরায় কর্মরত প্রদীপবাবু নিজের শহর কলকাতায় ছুটি কাটাতে এসে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি কাঁপুনি দিয়ে ধুম জ্বর আসে। তাই তিনি ই এম বাইপাসে এক হাসপাতালে ভর্তি হন। ম্যালেরিয়ার পরীক্ষায় পজিটিভ ফল আসে, কিন্তু তিনি সেরে ওঠেন এবং আট দিনের মাথায় হাসপাতালে থেকে ছুটি পেয়ে যান। তার পরের কয়েক দিনে তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। অ্যাপোলোতে পৌঁছানোর আগে থেকেই তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। 

ডাক্তারদের যে দলটা প্রদীপবাবুর চিকিৎসা করেছিল, সেই দলের একজন সদস্য বললেন “এমনকি ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনেও ওঁর ফুসফুস কাজ করছিল না। তাই আমরা ন দিনের জন্য ই সি এম ও-তে চাপিয়ে দিই। ভেন্টিলেশন কাজ করছিল না কারণ ওঁর ফুসফুস ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ম্যালেরিয়া থেকে এ আর ডি এস (অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম) হলে প্রায় সবসময়েই এরকম হয়। প্রদীপবাবুর পরিবারকে বলা হয়েছিল ওঁকে বিমানে এমন কোন শহরে নিয়ে যেতে, যেখানে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। কিন্তু ওঁরা অ্যাপোলোতেই চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলেন।” সেই ডাক্তার আরো বললেন “যখন আমরা বুঝলাম রোগীর পরিবার রোগীকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবে না, তখন আমরা কিছু ওষুধের সর্বোচ্চ ডোজ দেওয়া শুরু করলাম এবং স্টেরয়েড দিলাম। সাধারণত এই রোগের এরকম চিকিৎসা করতে বলা হয় না। তবে নভেম্বরের শেষ দিকে আমাদের চেষ্টা সফল হল এবং উনি চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করলেন। তখন আমরা ওঁকে ভেন্টিলেশনের বাইরে আনতে পারলাম।” 

প্রদীপবাবুর স্ত্রী মানসী বললেন: “যীশুখ্রীষ্টের প্রতি আমাদের বিশ্বাস এবং অ্যাপোলোর ডাক্তার আর নার্সদের নিষ্ঠা আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।” 

আই সি ইউ-র নার্স আর ডাক্তাররা এই দম্পতির বিয়ের রজত জয়ন্তী উদযাপন করার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করলেও ওঁরা নদীর ধারের রিসর্টে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটা মিস করেছেন। তবে ওঁরা বললেন যে হাসপাতালকর্মীদের বিভিন্ন দলের এই অনুষ্ঠান পালন তাঁদের মন ছুঁয়ে গেছে। 

ডাঃ শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিরেক্টর অফ মেডিকাল সার্ভিসেস, অ্যাপোলো হসপিটালস, কলকাতা, বললেন “আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে আমাদের ডাক্তাররা শ্রী প্রদীপ চৌধুরীকে তাঁর স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন, কারণ তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই জটিল হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসার গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার পাশাপাশি আমরা আমাদের টেন্ডার লাভিং কেয়ার-এর দর্শনকেও এগিয়ে নিয়ে যাই। আমাদের আই সি ইউ-তে চট করে প্রদীপবাবুর ২৫তম বিবাহবার্ষিকী পালন সেই দর্শনেরই বহিঃপ্রকাশ।”