স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'পরশ' এর কয়েকমাস যাবৎ করোনা সুরক্ষা,সচেতনতা ও মানব কল্যানকর নানারকম কর্মসূচীর সফল রূপায়ন 




গৌতম সাহা,সোনারপুরঃ 

পরশ কথার আক্ষরিক অর্থই হল স্পর্শ আর সেটা যদি  হয়ে ওঠে প্রাণের স্পর্শ তাহলে তো ষোলকলা পূর্ণ! 

"প্রতিটি কুঁড়ি ফুটুক,প্রতিটি ফুল হেসে উঠুক"- এই স্বপ্ন কে লক্ষ্য রেখেই কোলকাতার অনতি দুরে সোনারপুরে পথচলা শুরু 'পরশ' নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির। বহরমপুর শহরেও তাদের একটি শাখা একই রকম কাজে নিয়োজিত রয়েছে। 




মূলত শিক্ষকদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটি গতবছর থেকেই মানব কল্যানকর নানা কাজকর্মে নিয়োজিত রয়েছে। যদিও দুঃস্থ শিশুরা অভাবের তাড়নায় যাতে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না হয় সেটাই তাদের প্রধান লক্ষ্য তাছাড়া সমাজের সবথেকে অবহেলিত সেই ভবঘুরেদের জন্য তারা নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে চলেছেন। বিভিন্ন এলাকায় দুঃস্থ শিশুদের পড়াশোনায় উৎসাহিত করতে তাদের বই,খাতা,পেনসহ অন্যান্য সামগ্রী,পোষাক তথা খাদ্য সামগ্রী ইতিমধ্যে তুলে দিতে শুরু করেছে সংগঠনটি। কিন্তু করোনা মহামারী পরবর্তী লকডাউন শুরু হতে সেই কাজে সাময়িক বিরতি দেওয়া হলেও করোনা দূর্যোগেও কিন্তু পথচলা বন্ধ হয়নি তাদের বরং কাজের পরিধি আরও বেড়েছে। লকডাউন শুরু হওয়ায় পর থেকেই সোনারপুর ও পার্শ্ববর্তী সুভাষগ্রাম, মল্লিকপুর স্টেশনে ও সংলগ্ন রাস্তার ভবঘুরে মানুষদের দিনের পর দিন করোনা ভয়কে জয় করে একবেলা আহার জুগিয়ে গেছেন সংগঠনের অকুতভয় সভ্যবৃন্দ। 


তারপর আম্ফান ঝড়ের তান্ডবেও তারা পৌছে গেছেন সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলিতে। এমন দুটি গ্রাম হল কুলতলি বিধানসভার অন্তর্গত মনিরতট ও চুপড়িঝাড়া যেখানে সংগঠনের সদস্যারা রেশনসামগ্রী নিয়ে দূর্গত মানুষদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঐ গ্রামেই আবার দুর্গাপূজার সময়ে দুঃস্থ শিশুদের নতুন জামাকাপড় নিয়েও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা, সঙগে চলেছে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিলি আর করোনা সুরক্ষা,সচেতনতা নিয়ে প্রচার। 

কাকদ্বীপ বিধানসভার অন্তর্গত পয়লা নম্বর গ্রামে ১৫০ টি পরিবার, বটতলা, রামনগর,বসুরমহল গ্রামে ৫০ টি সমেত মোট ২০০ টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে ত্রান সামগ্রী তুলে দেওয়া হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। 



দুর্গাপূজায় সবাই যখন উৎসবের মেজাজে তখন এই সংগঠনই সোনারপুরে দুঃস্থ মানুষদের বস্ত্র বিতরণ করেছে, কয়েকটি ক্যানসার আক্রান্ত শিশুকে আর্থিক সাহায্য এমনকি ক্যাম্প করে ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত আগত দর্শনার্থীদের প্রত্যেকদিন ১০০০ টি করে মাস্ক ও ১০০০ টি করে পাউচ্ স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। একই সঙগে চলে করোনা সুরক্ষা ও সচেতনতা নিয়ে দীর্ঘ প্রচার। 




আগামীদিনে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য  কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে কুলপি থানার বেলপুকুরে করোনা রোগ সম্পর্কে সচেতনতা শিবির, মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ, কিছু দুঃস্থ পড়ুয়াদের পড়াশুনার সামগ্রী প্রদান, 

এই এলাকার নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ৭০ টি দুঃস্থ শিশু কে পোশাক, পড়াশুনার সামগ্রী প্রদান, মিষ্টি বিতরণ ও সূর্যনগর অনাথ অশ্রমে শিশুদের সাথে একসাথে মধ্যান্যকালীন আহার ও তাদের হাতে পড়াশুনার সামগ্রী তুলে দেওয়ার মত কর্মসূচী হতে চলেছে। 




আগামিদিনে দুরদুরান্তে আর অবহেলিত গ্রামগুলিতে তাদের সাহায্যের ডালি নিয়ে পৌছে যেতে চান মানবসেবায় নিয়োজিত এই সংগঠনটির সদস্য- সদস্যাবৃন্দ। 



আশাকরা যায় সংগঠনটির নামের সঙগে সমার্থক হয়ে উঠবে তাদের মানব কল্যানকর কাজগুলি। 'পরশের' প্রাণের ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে ছোট ছোট কুঁড়িগুলি যেগুলো আগামীদিনে পরিণত হবে সদাহাস্য ফুলগুলিতে।