ঊমার চক্ষুদানে কৃষ্ণনগরের একমাত্র মহিলা  মৃৎশিল্পী গীতা পাল



প্রীতম ভট্টাচার্য্যঃ  

কাশের ভেলায় শরতের প্রকৃতি এবছর একটু আলাদা।মেঘ শিউলির খুনসুটি আজ ঘরবন্দী। ঘরের কোনে প্রদীপের আলোয় মা এর মুখ শান্ত। আটপৌরে রাস্তার পাশে সামান্য জীবিকাকে আঁকড়ে ধরে জীবনযাপন শিল্পীর। 


শিল্পের সমালোচনায় পেট ভরানো সোস্যালমিডিয়ায় এদের কদর করে কজন। ভাইরাল হওয়া তো দূরে থাক ঠিক মতো পেট ভরছে কিনা সে খবর তাদের কাছে থাকে না। অন্ধসমাজের আজকের নারী সমাজের দৃষ্টান্ত কৃষ্ণনগরের একমাত্র মহিলা  মৃৎশিল্পী গীতা পাল।



অভাবকে সঙ্গী করেই তার হাতে একটু একটু করে প্রাণ পায় শরতের ঊমা। হাসি মুখে তিনি তার শিল্পী জীবনের চৌষট্টিটা বছর পার করে দিয়েছেন। পিতা দাশরথী পালের কাছে তেরো বছরে হাতেখড়ি।ছোট থেকেই খেলার ছলে বানাতেন দেবদেবীর মূর্তি।আস্তে আস্তে বাড়ির একমাত্র কন্যা কাঠামো থেকে রুপদান করতে লাগলেন দেবী দুর্গার। সারাবছর মূর্তি গড়েন নিজেই। 

কৃষ্ণনগরের আনন্দীময়ী তলার, রথতলার কুমোড়পাড়ায় তার বসতবাড়ি, একচিতলে একটি ছোট টিনের চালা এখন তার মূর্তি গড়ার কারখানা। সারা বছর দূর্গা, কালি, সরস্বতী ও বিভিন্ন দেবদেবী তৈরী করেন।এবছর প্রায় কুড়িটি দূর্গা মূর্তি তিনি বানিয়েছেন। শহর ও জেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ গুলিতে তার তৈরী  প্রতিমা পূজিত হয়।

করোনার  জন্য এবছর একটু অর্ডার কম।কাঠামো থেকে চক্ষুদান তিনি নিজেই করেন। বয়সের ভারে এখন দু- চারজন কর্মচারী তার সাথে এই ঠাকুরগড়ার কাজে হাত দেন। গীতা পাল বলেন ঠাকুর গড়তে আমার খুব ভালো লাগে, নিজে মেয়ে হয়ে  মায়ের এই রুপদান আমার কাছে বিশ্বজয় করার মত। সেভাবে কোনো সাহায্য নেই, ঘরের পুঁজি ও মহাজনদের কাছে অগ্রিম নিয়ে এই কাজ করি।

বার্ধক্য ভাতা জোটেনি এখনও। বায়না ভালো হলে সেবছর একটু অর্থের মুখ দেখতে পায়। সারা বছর অর্ডার ভালোই থাকে,আজ এই কাজে মহিলাদের দেখা মেলা ভার।নতুন প্রজন্ম মোবাইলে ব্যাস্ত, কেউ আর এই কাজ করতে চাইছে না।আমি চাই মেয়েরা এগিয়ে আসুক। 

আশেপাশের অনেকেই বলেন গীতা দিদি আমাদের কাছে প্রেরনা। তিনি যে এই বয়সেও এই কাজ করছেন তা সকল শিল্পীর কাছে দৃষ্টান্ত।এ ভাবেই বেঁচে থাক আটপৌরে দুর্গারা, বেঁচে থাক তাদের স্বপ্ন, মাটির দেশের শিল্পী গীতা পাল কে কুর্ণিশ।