কেন আজ শিক্ষক দিবস পালন করা হয়, জানেন কি?
‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল
উদার হতে ভাইরে
কর্মী হবার মন্ত্র আমি
বায়ুর কাছে পাইরে’
কবি সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতাটির উপরিউক্ত অংশটিতে দেখতে পাই বৃহৎ আকাশ আমাদেরকে অর্থাৎ আমাদের মনকে উদার হতে শেখায়, বায়ু যেন আমাদের কানে কর্মী হবার মন্ত্র সর্বদাই গুনগুনিয়ে যাচ্ছে। একজন শিক্ষক শুধুমাত্র পুস্তক শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন তা নয়, তিনি একটি ছাত্রকে ভাল মন্দ বিচার, দূর ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থির করতে হাত বাড়িয়ে থাকেন। পিতা-মাতা যেমন আমাদের প্রথম শিক্ষক প্রকৃতিও তেমন আমাদের একজন শিক্ষক। একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে তা নতুন করে বলার কিছু নেই।
একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে আমরা ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণকে সামনে রেখে শিক্ষক দিবস দিনটি পালন করে থাকি। আমাদের মনে অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে, কেনই বা তাঁকেই এই দিনটিতে স্মরণ করা হচ্ছে?
হ্যাঁ, কারন একটি অবশ্যই রয়েছে। তিনি ১৯৬২ সালে স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হন, এর আগে ১৯৫২ সালে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এছাড়াও তিনি একজন শিক্ষকও ছিলেন। যখন তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশ চালনা করেন, তাঁর অনুগামীরা, ছাত্রছত্রীরা এবং কিছু বন্ধু ৫ই সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন পালন করবেন বলে অনুরোধ করেন। তখন তিনি তাদের কথা রাখতে জানিয়েছিলেন যে ৫ই সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিবস পালন না করে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করলে তিনি বিশেষরূপে অনুগ্রহলাভ করবেন। আর সেই থেকেই বর্তমানেও আমরা সকল ভারতবাসী ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটিকে বিশেষরূপে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকি।
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ১৮৮৮ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন, পরীক্ষায় কখনও দ্বিতীয় হতেন না। ১৯০৫ সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর অধ্যয়নের মূল বিষয় ছিল ‘বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পরিকল্পনা’। বিশ্বদরবারে তিনি একজন সুপরিচিত দার্শনিকও ছিলেন। এছাড়াও ১৯৩১ সালে তাঁকে ব্রিটিশ নাইটহুডে সম্মানিত করা হয় এবং ১৯৫৪ তে ভারতরত্ন সম্মান জ্ঞাপন করা হয়েছিল।
লেখালেখিতে তাঁর ঝোঁক অনেক ছিল, বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা চর্চাও করতেন। তাঁর প্রমান হিসেবে পাই প্রথম গ্রন্থ ‘দ্য ফিলোজফি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ এবং দ্বিতীয় গ্রন্থ হিসেবে ‘দ্য রেন অফ রিলিজিয়ন ইন কনটেম্পোরারি ফিলোজফি’। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপনার জন্য ডাক আসে।
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ১৬ বছর বয়সে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন, তিনি পাঁচটি কন্যাসন্তান এবং একটি পুত্রসন্তান লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৭ই এপ্রিল চেন্নাই এ এই মহান ব্যক্তির দেহাবসান ঘটে। তিনি তাঁর ৮৭ বছরের জীবনের ইতিহাসে সকল মানুষের সাথে নিজেকে চালিত করে সকল ভারতবাসীর কাছে এমনকি বিশ্বমানসে চিরস্মরণীয় হয়ে রইলেন।
১৯৩১ – নাইট উপাধিতে ভূষিত হন
১৯৩৩-৩৭- পাঁচবার সাহিত্য বিভাগে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনিত হন
১৯৩৮- ব্রিটিশ অ্যাকাডেমীর ফেলো হিসেবে মনোনিত হন
১৯৫৪- জার্মানির কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের সাম্মানিক পুরস্কার
১৯৫৪- ভারতরত্ন
১৯৬১- জার্মান বুক ট্রেড প্রদত্ত শান্তি পুরস্কার
১৯৬২- সকল ভারতবাসীর কাছ থেকে ৫ই সেপ্টেম্বরের প্রাপ্তি
১৯৬৩- ব্রিটেনের অর্ডার অফ মেরিট
১৯৬৮- সাহিত্য অ্যাকাডেমী পুরস্কার
১৯৭৫- টেমপ্লেটন প্রাইজ
তথ্য> ইন্টারনেট
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊