আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে কালি-তুলি কাজের পথিকৃৎ গগনেন্দ্রনাথ
পশ্চিম দিগন্তের একটুখানি আলো এসে পড়ল পুবের আকাশে। সেই নবজাগরণ ।তার আকস্মিক আলোক সম্পাতে যখন অনেকে দিগভ্রান্ত, কেউ পথচ্যুত কিংবা বিদ্রোহী, তখন প্রথম উষার সবটুকু উষ্ণতা গ্রহণ করে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি যেন সারা দেশের ঘুম ভাঙাবার ভার নিয়েছিল।
বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে ঠাকুরবাড়ির যাদের গুরুত্ত্ব সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য তাঁদের একজন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৬৭ - ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮)। ১৮৬৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কলিকাতায় বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন গুনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সৌমাদিনী দেবী। তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে সিনিয়ার কেমব্রিজ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।
বাল্যকাল থেকেই তিনি ছবি আঁকার প্রতি মনোযোগী হন। তিনি কোন বাঁধাধরা নিয়মে ছবি আঁকেননি। তিনি জটিল ও কাব্যধর্মী ছবি অঙ্কন করতেন। বিভিন্ন অঙ্গিকে চিত্ররচনা করলেও কিউবিজম রীতিই তিনি বেশি ব্যাবহার করতেন। এই কারণে ইউরোপের বহু প্রদর্শনীতে তাঁর চিত্র বহু প্রশংসা পায়।
তাঁর আঁকা ব্যাঙ্গ চিত্রগুলির মাধ্যমে পুরোহিত তন্ত্র, ইংরেজদের এবং নানা সামাজিক পরিস্থিতি তুলে ধরছেন। জাপানি কালি-তুলি আর ওয়াশের মাধ্যমে বারোটি কাকের ছবি নিয়ে তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘টুয়েলভ ইঙ্ক স্কেচেস’ । তাঁর ছবিতে পশিমি কৌনিকতার ধরণ লক্ষ্য করা যায় ।
আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে কালি-তুলি কাজের পথিকৃৎ গগনেন্দ্রনাথ কেবল একজন চিত্রকরই ছিলেন না, দেশীয় ঐতিহ্য অনুসরণে আসবাবপত্রের নকশা অঙ্কনে তার মৌলিকতা এবং অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জার ক্ষেত্রে তাঁর অগ্রণী ভূমিকার কথা অনস্বীকার্য।
বিশ শতকের প্রথম দিকে স্বদেশী আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে গগনেন্দ্র প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সময় থেকে সংরক্ষিত পাশ্চাত্য রীতির বিলাসবহুল ফুলদানি ও ভিক্টোরীয় আমলের আসবাবপত্র জোড়াসাঁকোর পৈতৃক বাড়ি থেকে সরিয়ে নেন। স্বদেশজাত দ্রব্যসম্ভারের পুনরুদ্ভাবনে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন।
বাংলার কুটির শিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার কাজে তিনি প্রয়াসী হন এবং ১৯১৬ সালে বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল-এর পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলার গৃহনির্মিত কারুশিল্পের প্রচারার্থে স্থাপিত ‘বেঙ্গল হোম ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর অন্যতম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এই মহান পরপোকারী শিল্পী ১৯৩৮ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি পরলোক গমন করেন।
0 মন্তব্যসমূহ
thanks