অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে ভার্চুয়াল ভ্রমণের আয়োজন
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলা হয় আধুনিক ভারতের শিল্প গুরু – ‘ফাদার অফ ইন্ডিয়ান আর্ট’ ।অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধরে শিল্পী, শিল্পগুরু এবং শিল্পরসিক। তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিই আনন্দময় সৃজনের স্বর্ণসম্ভার। অবনীন্দ্রনাথের কালজয়ী প্রতিভার স্পর্শেই লুপ্তপ্রায় ভারতীয় শিল্পকলা সঞ্জীবিত হয়ে উঠেছিল নতুন নতুন সম্ভাবনায়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট আজ " দ্য গ্রেট মায়েস্ত্রো : অবনীন্দ্রনাথ টেগোর" শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল ভ্রমণের আয়োজন করছে।
এন জি এম এ-র সংগ্রহে আছে এই শিল্পীর আঁকা ৯৯টি চিত্রকর্ম।এর মধ্যে ৭৭টি বিখ্যাত ছবি নিয়ে ভার্চুয়াল ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছে। এগুলিকে ভাগ করা হয়েছে (১) পোর্ট্রেট ও ব্যক্তিত্ব, (২) ঐতিহ্য ও সংবেদনশীলতা, (৩) ব্যক্তিগত রীতি, (৪) নিসর্গচিত্র।
ছেলেবেলা থেকেই অবনীন্দ্রনাথ চিত্রাঙ্কনের প্রতি আকৃষ্ট হন। মাত্র ন’বছর বয়সে পিতার ব্যবহ্রত রঙ পেনসিল ব্যবহার করে তাঁর হাতেখড়ি হয় চিত্রশিল্পে। এরপর ১৮৯৭ সালে, ২৫ বছর বয়সে তিনি চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে বিশেষ শিক্ষালাভ করেন তৎকালীন ‘কলিকাতা গভঃ স্কুল অব্ আর্ট’-এর উপাধ্যক্ষ ইতালিয়ান চিত্রশিল্পী ‘Signor Gilhardi’-র কাছে। পরবর্তী সময়ে তিনি ইংল্যান্ডের চিত্রশিল্পী ‘Mr.Charles L.Palmer’-র কাছে তিন থেকে চার বছর টানা চিত্রশিল্পের শিক্ষালাভের পর পোর্ট্রেট তৈলচিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করেন এবং দুই ঘন্টার মধ্যে একটি পোর্ট্রেট শেষ করার সক্ষমতা লাভ করেন। ১৮৯৫ সালে তাঁর অঙ্কিত ‘কৃষ্ন্লীলা’ সম্পর্কিত চিত্রগুলিতে ইউরোপীয় ও ভারতীয় ভাবধারার সংমিশ্রণ দেখতে পাওয়া যায়।
এই সময়ে অবনীন্দ্রনাথ বহু তৈলচিত্র অঙ্কন করেন। ১৯০০ সালে তিনি‘মঙ্গের’(Monghyr)- এ যান এবং এই যাত্রায় তাঁর শিল্পী জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন আসে। তিনি ইউরোপীও ধারার তৈলচিত্র অঙ্কনের পরিবর্তে জল রঙ ব্যবহার শুরু করেন এবং কলিকাতায় ফিরে Palmar -এর কাছে জলরঙে বিশেষ শিক্ষালাভ করেন।
এরপর অবনীন্দ্রনাথ গভঃ আর্ট স্কুলের উপাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন এবং ‘Mr.E.B.Havell’এর অধীনে কর্মজীবন শুরু করেন। Havell অবনীন্দ্রনাথকে ইউরোপীয় ভাবধারা মুক্ত করে মোগল এবং রাজপুত ভাবধারায় চিত্রাঙ্কনের জন্য উৎসাহিত করেন। অবনীন্দ্রনাথের কর্মগুলিতে তার প্রতিফলন খুবই সুস্পষ্ট।
পরবর্তীকালে অবনীন্দ্রনাথ জাপানি চিত্রশিল্পের শিক্ষালাভ করেন জাপানি চিত্রশিল্পী ও চিত্রসমালোচক ‘ওকাকুরা’-র কাছে। ওকাকুরা ভারতে আসেন স্বামী বিবেকানন্দের সাথে। ওকাকুরা বিশ্বাস করতেন, চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে এশিয়া মহাদেশের সমস্ত দেশগুলি এক ও অভিন্ন। ওকাকুরা ১৯০৩ সালে দেশে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে ‘ইয়োকোয়ামা তাইকান’ ও ‘হিলসিদা সুনো’ নামের দুই চিত্রশিল্পীকে ভারতে পাঠান যাদের সান্নিধ্যে অবনীন্দ্রনাথ জাপানি শিল্পের খুঁটিনাটি বিষয় শিক্ষালাভ করেন। তাইকান-এর রীতির প্রতিফলন দেখা যায় অবনীন্দ্রনাথের ওমর খৈয়াম (১৯০৬-০৮) সিরিজে। চিত্রশিল্পের পাশাপাশি ভাস্কর্য শিল্পেও সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ।
বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও সাহিত্যিক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু হয় ১৯৫১ সালের ৫ই ডিসেম্বর ৮০ বছর বয়সে। বাংলার মানুষ তাঁর বহুমুখী শিল্পকলার গুরুত্ব অনুভব করেছেন ধীরে ধীরে, কিন্তু সেই অর্থে কোন স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে এই মহান মানুষটির মহিমান্বিত সাফল্যে। অবনীন্দ্রনাথের মত সহজাত সৃজনী ক্ষমতাশীল ব্যক্তির জন্ম যে কোন দেশের পক্ষেই অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊