৫ বছর পূর্ণ করল বন্ধন ব্যাঙ্ক: এখন আরও মজবুত, আরও সমৃদ্ধ
- স্বাধীনোত্তর সময়ে কলকাতায় সদর দফতর স্থাপন করে গড়ে ওঠা প্রথম কোনও ব্যাঙ্ক যা দেশ গঠনে ভূমিকা নিয়েছে। ২০.৩১ মিলিয়ন ভারতীয় এখন বন্ধনের গ্রাহক, ব্যবসার আয়তন ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা।
- উপস্থিতি রয়েছে সর্বভারতীয় স্তরে। ৩৪ টি রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ৪৫৫৯ টি ব্যাঙ্কিং আউটলেট ও ৪৮৫ টি এটিএমের মাধ্যমে পরিষেবা দেয়, তবে মূল ফোকাস রয়েছে আধা শহর ও গ্রামীণ এলাকায়। ৭১ শতাংশ ব্যাঙ্কিং আউটলেট এই ধরনের অঞ্চলেই রয়েছে।
- অত্যন্ত বিশ্বস্ত ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহে সফল হয়েছে। কাসা (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট) অনুপাত ৩৭ শতাংশ, মোট আমানতের ৭৭ শতাংশ হল রিটেল ব্যবসা।
- যে সব এলাকায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছয়নি বা প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল সেখানে তা পৌঁছে দিয়ে আরও মানুষকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে এসেছে। তাতে সুদৃঢ় হয়েছে সমাবেশি অর্থনীতি। তা ছাড়া ছোট উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়ে আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হয়েছে।
আগামী ২৩ অগস্ট, ২০২০ সাফল্যের সঙ্গে পাঁচ বছর পূর্ণ করবে বন্ধন ব্যাঙ্ক। দেশের কনিষ্ঠতম এই সার্বজনীন ব্যাঙ্কের অন্যতম লক্ষ্যই ছিল সমাজের সেই সব অংশে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যেখানে হয় তা আগে পৌঁছয়নি বা প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল।
২০১৫ সালের জুন মাসে বন্ধন গ্রুপকে সার্বজনীন ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার আগে দেশের গ্রাম ও আধা শহর এলাকায় পিরামিডের নিচের অংশের মানুষের আর্থিক চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে নিরলস কাজ করছিল বন্ধন। প্রায় দু’দশক ধরে দেশের অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণিকে সহজে ও সময়ে ক্ষুদ্র ঋণের পরিষেবা দিয়ে তাদের ক্ষমতায়ণে সাহায্য করেছে এই প্রতিষ্ঠান। মহাজনদের শোষণ ও শৃঙ্খল থেকে তাদের মুক্ত করেছে।আরও পড়ুনঃ নির্বাচন কমিশন জারি করল সাধারণ নির্বাচন ও উপ নির্বাচনের একাধিক নয়া নিয়ম
সমাবেশি ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বন্ধনের আত্মায় রয়েছে। সার্বজনীন ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স পাওয়ার ফলে এই প্রতিষ্ঠান একটি মজবুত রিটেল ব্যাঙ্কিং পরিকাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করতে পেরেছে। এর ফলে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের মধ্যে যেমন একটা সঞ্চয় প্রবণতা গড়ে উঠেছে, তেমনই ব্যাঙ্কও ঋণগ্রহীতাদের কম সুদে টাকা দিতে পেরেছে।
সার্বজনীন ব্যাঙ্ক হিসাবে অনুমোদন পাওয়ার পর গোটা দেশে বন্ধন তার ব্যাঙ্কিং পরিষেবাকে ছড়িয়ে দিয়েছে। গোটা দেশের মোট ৩৪ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৪৫৫৯টি ব্যাঙ্কিং আউটলেট ও ৪৮৫ টি এটিএম গড়ে তোলা হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ বন্ধনের সমগ্র পোর্টফোলিওর ৬৪ শতাংশ জুড়ে রয়েছে। তবে ক্ষুদ্র ঋণ ছাড়াও নতুন প্রোডাক্টও শুরু করেছে বন্ধন—যেমন ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের (এমএসএমই) জন্য ঋণ, গোল্ড লোন এবং সাধ্যবিত্তদের জন্য গৃহঋণ (২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে গ্রুহ ফিনান্স বন্ধনের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। এর মাধ্যমেই গৃহ ঋণ দেওয়া হচ্ছে)।
এই পাঁচ বছরে বন্ধন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বিপুল সুযোগ তৈরি করেছে। এই মেয়াদে বন্ধনের কর্মী সংখ্যা ১৩ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৪২ হাজার। ব্যাঙ্কে প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি পরোক্ষেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে বন্ধন। বন্ধনের ১.১২ কোটি ক্ষুদ্র ঋণ গ্রাহক অন্তত একজন করে কর্মী নিয়োগ করেছে ধরে নিলে, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতারা শুধু তাঁদের জীবিকা সুনিশ্চিত করেননি আরও ১.১২ কোটি মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ করে দিয়েছে।
বন্ধন ব্যাঙ্কের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, “গত পাঁচ বছরে বন্ধন ব্যাঙ্ক লক্ষ লক্ষ মানুষ ও ক্ষুদ্র উদ্যোগকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মূলস্রোতে আনতে সফল হয়েছে। যাঁরা আগে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন বা তাঁদের সামনে সেই সুযোগ অপ্রতুল ছিল। এর ফলে তাঁদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এসেছে এবং তাঁরা আগের থেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। বন্ধনের সমস্ত গ্রাহককে তাই আমি অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁরা শুধু ঋণ নেওয়ার জন্য আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন তা নয়, জীবনের সঞ্চয় বিশ্বাস ও ভরসার সঙ্গে আমাদের কাছে রেখেছেন”।
আগামী দিনে দেশের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগকে সাহায্য করতে বন্ধন ব্যাঙ্ক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ, এই উদ্যোগগুলিই দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ তৈরি করবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি মজবুতভাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারলেই আত্মনির্ভর এবং শক্তিশালী ভারতবর্ষ তৈরি হবে। শুধু তা নয়, ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের ছোট উদ্যোগে রূপান্তরিত করার জন্য উৎসাহ দেবে বন্ধন। যাতে তারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে, পণ্য পরিষেবা কর ও আয়করের নিয়ম নীতি মেনে ব্যবসা করতে পারে এবং প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের শ্রেণিতে উঠে আসতে পারে ও এ সব ক্ষেত্রের জন্য সরকারি নীতির সুবিধা পায়।
মানবসম্পদের বিকাশের ব্যাপারে ব্যাঙ্ক নিষ্ঠাবান। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সেই মানবসম্পদের বিকাশ বাঞ্ছনীয়। ব্যাঙ্কের সিএসআর এজেন্সি বন্ধন-কোন্নগরের মাধ্যমে তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং আর্থিক সাক্ষরতার প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গোটা দেশের ১২ টি রাজ্যের ১২, ৯০০ গ্রামের ২৫ লক্ষের বেশি মানুষ এই সব উদ্যোগের সুবিধা পেয়েছেন।
বন্ধনের মূল স্লোগান হল—ভাল আপনার, ভাল সবার। গত পাঁচ বছরে সার্বজনীন ব্যাঙ্ক হিসাবে বন্ধন ষোল আনা এই দর্শন মেনে চলেছে এবং গ্রাহক তথা গোটা সমাজের সঙ্গে একটি দৃঢ় ও স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে নিরলস ভাবে কাজ করেছে। আজ যখন বন্ধন ব্যাঙ্ক আগামীর পথে যাত্রা করছে, এটি ব্যাংকের মূল চালিকাশক্তি গুলির উপর ভর করে আরো বৃহত্তর লক্ষ্যের জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে।
বৃদ্ধির সূচক:
- গ্রাহক সংখ্যা ও আমানত বৃদ্ধি মূলত ব্যাংকের উপর মানুষের আস্থার পরিচয় দেয়। গ্রাহকসংখ্যা : ২.০৩ কোটি, মোট আমানত: ₹৬০,৬১০ কোটি, প্রদত্ত ঋণ: ₹৭৪,৩৩১ কোটি। (জুন ৩০, ২০২০ অবধি হিসেব অনুযায়ী)
- মজবুত রিটেল ব্যবসা: কাসা অনুপাত ৩৭%, মোট আমানতের মধ্যে রিটেলের পরিমান ৭৭.৭%
- খরচ ও আয়ের অনুপাত খুবই লাভজনক: ২৭.৯%
- বিগত ৫ বছরে ডিমনিটাইজেশন, সাইক্লোন ও বন্যা সত্ত্বেও ব্যাংকের অ্যাসেট এর গুণগত মান সমান ভাবে বজায় রাখা হয়েছে। মোট এনপিএ ১.৪৩% এবং নেট এনপিএ ০.৪৮%
- ব্যাংকের মোট শাখার মধ্যে প্রায় ৭১% আধা শহর ও গ্রামীণ এলাকায় খোলা হয়েছে যাতে এইসব জায়গার মানুষদের যথাযথ ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়া যায়
- নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে : ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স পাওয়ার সময়ে যেখানে ১৩ হাজার কর্মী ছিল, এখন সেখানে ৪২ হাজার কর্মী কাজ করে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊