স্বাধীনতার মানে বােঝে নীল আকাশের পাখি -নন্দিতা অধিকারী
"স্বাধীনতা স্টেনগান বুলেটে বুলেটে আমার ঝাঝরা বুকের উপর
ফুটে উঠেছে যে মানচিত্র তার নাম ভারতবর্ষ।
আমার প্রতিটি রক্তের ফোটা দিয়ে চাবাগিচায় কফি খেতে,
কয়লা-খাদানে পাহাড়ে অরণ্যে লেখা হয়েছে যে ভালােবাসা তার নাম ভারতবর্ষ।
আমার অশ্রুজলে সেচে আর হাড়েরফসফেটে ক্ষুনির চেয়েও
রুক্ষ কঠোর মাটিতে বােনা হয়েছে যে অন্তহীন ধান গানের স্বপ্ন তার নাম ভারতবর্ষ।"
স্বাধীনতা দিবস আমাদের দেশের একটি জাতীয় দিবস। নানান আয়ােজনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার জন্য আত্মউৎসর্গ করেছিলেন যে শহীদরা সেই বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পনের মধ্য দিয়ে ১৫ ই আগষ্ট আমরা মহাসমারহে স্বাধীনতা দিবস পালন করি। সমস্ত বিদ্যালয়, অফিস আদালত, কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠান গুলিতে সড়ম্বরের সাথে উৎযাপন করা হয়। উত্ত্যাপনকালে শিক্ষার্থীরা নাচ, নাটক, গান, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রভৃতি প্রতিযােগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রধান অতিথি কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। তারপর সারিবদ্ধভাবে রাস্তায় পথশােভাযাত্রা করা হয়। এদেশের স্বাধীনতার কথাবলতে প্রথমেই সেই মানুষগুলির কথা মনে পড়ে যাঁদের স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ দেশকে দাসত্বের গ্লানি থেকে মুক্তি দিয়েছিল। ভারতের মহান মুক্তি যােদ্ধাদের কিছু নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, ভগত সিং, ক্ষুদিরাম বসু যারা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ দাসত্ব থেকে স্বাধীন করার জন্য কঠোর সংগ্রাম করেছিলেন, তাদের এই অক্লান্ত কঠোর সংগ্রামের ফলে আমরা আজ স্বাধীন। স্বাধীন আমাদের ভারতবর্ষ। প্রায় ২০০ বছর স্বাধীনতার শৃঙ্খল থেকে আপনাদের দেশকেমুক্ত করতেশতবিপ্লবীপ্রাণ দিয়েছে। আরও পড়ুনঃ আগামী নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলিতে মিড ডে মিলে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের নির্দেশিকা
আমরা যদি ইতিহাস দেখি আমরা দেখতে পাব ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর বিরুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লার সংগ্রামে ব্রিটিশ কোম্পানীর জয় ভারতবর্ষকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে দিয়েছিল। সিরাজদ্দৌল্লারসংগ্রামে ব্রিটিশ ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর যে যুদ্ধ সেই সংগ্রামে ব্রিটিশদের জয়ই ভারতে ব্রিটিশ রাজশক্তির পরাধীনতার শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় ১৯০ বছর পর ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগষ্ট বহু অকল্পনীয় অবিস্মরণীয় সংগ্রাম সাধনের মাধ্যমে ভারতবর্ষের আকাশে স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হল কিন্তু স্বাধীনতার বুকে বিদ্ধ হয়ে রইল দেশভাগেরযন্ত্রণা। একদিকে যেমন অগণিতবীর শহীদের রক্তে রাঙানাে স্বাধীনতাতেমনি অন্যদিকে লাখ লাখ স্বজন হারানাের যন্ত্রণায় বিদ্ধ স্বাধীনতা। একদিকে হারানাের গভীর কষ্ট আর অন্যদিকে প্রাপ্তির অপার আনন্দ, একআনন্দ বেদনারবহুমাত্রিক অনুভূতি। এমন অনুভূতিরদিবস আমাদের জীবনে আর একটিও নেই। জাতীয় জীবনেস্বাধীনতারতাৎপর্যতাই অপরিসীম।
যদিও গৌরবজ্জল দিনটি প্রতিবছর আমাদের কাছে নিয়ে আসে আত্মত্যাগ ও আত্মপরিচয়ের বার্তা তবুও আমরাযখন ভারতবর্ষের গভীরে গিয়ে আত্মবিশ্লেষণেতি এই তখনমনের মধ্যে হই তখন মনের মধ্যে জেগে ওঠে বিবিধ প্রশ্ন। সত্যিকি আমরা প্রকৃত স্বাধীনতার অধিকারী হয়ে উঠতে পেরেছি ? স্বাধীনতা মানে সার্বভৌম জাতি হিসাবে আত্মনিয়ন্ত্ৰণৱ স্বাধীনতা। অথচ আজআমরা বড়ই দুঃখেরসহিত লক্ষ্যকরি যে আমাদের দেশেসদর্পেরাজ করছে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্মের নামে হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা, নিরক্ষরতা, অসহিষ্ণুতা, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, বাকস্বাধীনতা হরণ, বেকারত্ব এইরকম অজস্র সামাজিক অসচলতা, নারী তার পূর্ণ স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আজও পায়নি। বর্তমান সমাজের সব থেকে বড় অভিশাপ হল বেকারত্বের সমস্যা যা থেকে যুবসমাজকে মুক্ত করা যায়নি। বেকারত্বের জ্বালায় আত্মগ্লানির কথা আজও খবরের কাগজের শিরােনামে প্রতিনিয়ত দেখা যায়। আমরা প্রকৃতস্বাধীনতার অধিকারীআজও হয়নি।
স্বাধীন ভারতের একজন সুশিক্ষিত ও দায়িত্ববান নাগরিক হওয়ার জন্য আমাদের কর্তব্য এই স্বাধীনতা রক্ষার। তবেই আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। স্বাধীনতা দিতে হবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই। তবেই হয়ত আমরা সেই শিশুটিকে স্বাধীনতা দিতে পারব যে আজও বস্তাকাধে আবর্জনার মাঝে একটু খাবারের টুকরাে খুঁজে বেড়ায়, যে শিশুটিভাের নাহতেই মায়ের সাথে অপরের বাড়ির থালাবাটি পরিস্কার করে, জামা কাপড় পরিস্কার করে, যে শিশুটি বিদ্যালয়ে গিয়ে চায়ের দোকানে চায়ের গ্লাস পরিস্কার করে, সেই অনাথ শিশুটিকে যে আজও কারাে আদর পায়নি, সেই শিশুটিকে ঘার লজেন্স খাওয়ার বয়সে ট্রেনে ট্রেনেলজেন্স ফেরি করে বেড়ায় মানুষের ভিড়ের মধ্যে গুঁতাে খেতে খেতে। তাহলেই আমরা নিজেরাই আমাদের দেশকে সর্বসমকারে প্রথম স্থানে নিয়ে যেতে পারব। তবেই আমরা স্বাধীনতার সুখে স্বাধীন ভাবে পারব।
স্বাধীনতার মানে বােঝে নীল আকাশের পাখি স্বাধীনতার মানে বােঝেই চাঁদ তারাদের পরায় রাখি। স্বাধীনতার মানে বােঝে পাহাড়, সাগর, ঝরণা, নদী।
স্বাধীনতার মানে বুঝেই বাতাস নিরবকার। স্বাধীনতার সঠিক মানেকজনসজন সত্যি জানে? স্বাধীনতার সংজ্ঞা খোঁজো শেকল ছেড়া পাখির গানে।।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊