তিনে সপ্তাহ আগে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শিলিগুড়ির পুরনিগমের প্রশাসক তথা বর্ষীয়ান বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। তারপর টেস্টে পজিটিভ আসে। কিন্তু তিনদিন আগে লাস্ট টেস্টে নেগেটিভ আসে। এখনো তিনি হাসপাতালে রয়েছেন। এখন বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়।  

আজ হাসপাতালে থেকেই  শোনালেন করোনাকে নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অনেক কথাই। জানালেন কীভাবে এই লড়াইয়ে এক ফল বিক্রেতা তাঁকে বাঁচিয়েছে। বর্তমানে কি করা উচিৎ বা রাজ্যের চিকিৎসার দুর্বল দিক গুলোও তুলে ধরলেন তিনি। 

তিনি জানান- "আমার করোনা আক্রমণের প্রায় 20দিন হলো। কয়েকদিন আগে আমার লাস্ট টেস্টে নেগেটিভ এসেছে। এখন সুস্থ বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি।COVID-19 নিয়ে অনেক রকম প্রচারের কথা শুনে আসছি। আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো, এই কদিনে। প্রথম অভিজ্ঞতা হলো করোনা হলেই মৃত্যু নয়। মরার আগেই মরবো কেন? লড়াই করার মানসিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা নির্ভর করে early detection and early treatment. দেখা যাচ্ছে এটা সঠিক ভাবে হচ্ছে না। আমার ক্ষেত্রেও বিলম্ব হয়েছিল। অনেক করোনা রোগী সেভাবে কোনো শারীরিক অসুবিধেটা বুঝতেই পারেনা। অনেক ডাক্তার এই সমস্ত রোগী দের avoid করে থাকেন। তখন তাকে একের পর এক ডাক্তারের কাছে ছুটে বেড়াতে হয়। এই সময়ে রোগীর যা ক্ষতি হবার হয়ে যায়। বিশেষ করে তার রক্তে অক্সিজেন কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে এই অবস্থায় রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। এতো দিন শুনতাম বেশী বয়স্ক দের ঝুকি বেশী। শিলিগুড়িতে দেখলাম ৩০বছরের নিচের কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও অল্প দিনের মধ্যে অনেক রোগী নেগেটিভ হয়েছে। এরকম উদাহরণ ও আছে। আমার আর একটি বিষয় মনে হয়েছে তা হলো একটু আন্তরিকতার সাথে ট্রিটমেন্ট ও চিকিৎসা কর্মীদের সাহসিকতার সাথে সেবা করা। আমি দেখেছি এদের ডেডিকেশন ও সাহস। এদের জন্যেই আমার মতো অনেকে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। কিন্ত ওরাই বলছিলো সমাজের যে সন্মান বা মর্যাদা এদের পাওয়া উচিত তা কিন্তু তারা পায় না, তাঁদের সবসময় থাকতে হয় আতঙ্কের মধ্যে। এখানেই পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি প্রগেসিভ রাজ্যের লজ্জা।" 


অশোক বাবু আরও বলেন- "এটা ঠিক গত দু মাসে আমি এবং আমার সহ কর্মীরা বহু আক্রান্ত রোগীদের কাছে গেছি তার কারণ এদের একটু সাহস দেওয়া, আর প্রচুর তরুণ প্রজন্ম যারা সাহস নিয়ে এদের খাবারের ব্যবস্থা করছে তাঁদের কিছুটা উৎসাহিত করা।" 

প্রসঙ্গত অশোক বাবু বলেন- "যে দিন আমার জ্বর হলো সেদিনও তিনটি স্থানে গেছিলাম। তবে ফল ওয়ালার সাথে কথা বলে দেখেছি ওর মধ্যে কখনো মৃত্যু ভয়ের অনুভব ছিলোনা। সত্যি কথা বলতে কি এই ফল ওয়ালা ই আমাকে এই বাঁচার লড়াইতে সাহস দিয়েছে।" 

সবশেষে সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- "সতর্কতা ও সাবধানতা র কোনো বিকল্প নেই। তবে মানুষ কী সামাজিক দায়িত্ব থেকে দূরে থাকতে পারে? আমার মনে হয়েছে এতো বাধার মধ্যেও এই রোগ মানেই মৃত্যু নয়, এরও চিকিৎসা আছে, ফ্রন্ট লাইন এ থেকেও full protection নিয়ে তা সম্ভব, আমি সামনে থেকে তা অনুভব করলাম। আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম. মানুষের জীবন একবারের জন্যেই, মানুষের স্বার্থেই এই জীবনকে যতোটা সম্ভব নিয়োজিত করা উচিৎ আমাদের।"