নিজস্ব প্রতিনিধি, আলিপুরদুয়ার ঃ 

কোন নতুন দোকান বা শোরুমের উদ্বোধন হোক কিংবা পুজো মন্ডপের সকলেরই একটাই প্রশ্ন থেকে, কোন 'সেলিব্রিটি' বা 'মন্ত্রী' উদ্বোধন করবেন? হ্যাঁ আমরা হয়তো সেটা দেখতেই অভ্যস্ত।কিন্তু এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে একটু অন্য পথে হাঁটলেন আলিপুরদুয়ারের এক যুবক।নাম বিমান সরকার।আপনি জিজ্ঞাসা করতেই পারেন, উনি কে ?? না , উনি নেতা - মন্ত্রী বা বিখ্যাত কোনো ব্যক্তিত্ব নন।এক সাধারণ যুবক।আর উনি এখনো বিশাল কোন মঞ্চে বিরাট মাপের কিছু করেননি।বুধবার একটি দোকান খুলেছেন আলিপুরদুয়ারে।



প্রসঙ্গত তিনি যাকে দিয়ে দোকানের উদ্বোধন করিয়েছেন সেটা ভাবায়।আপনাকেও ভাবাবে। যিনি উদ্বোধন করলেন উনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি আমার বা আমাদের মত অনেকের বাড়ির লোহার কাজগুলো করে থাকেন। যাকে কাজ করার সময় বা অন্য সময় আমাদের মধ্যে অনেকেই তুই - তাকারি ছাড়া কথা বলতে পারি না। অনেক সময় কাজের মাঝেও ধমক দেই।

যাই হোক নতুন এই সাজসজ্জার দোকানের উদ্বোধক একজন লোহার মিস্ত্রি। নাম আকাশ দাস।হ্যাঁ ঠিক পড়েছেন।কোন নেতা নয়,কোন অভিনেতা নয় একজন সাধারণ লোহার মিস্ত্রির হাতে নিজের দোকানের উদ্বোধন করলেন বিমান।যার হাতটা লোহা কাটাই-ঝালাই করতে করতে লোহার মত শক্ত হয়ে গেছে।হাতে অসংখ্য কাটার দাগ। হাতের পাতায় অসংখ্য লোহা ঝালাইয়ের আগুন দিয়ে হাত ফুটো হওয়ার চিহ্ন।আর এই খেটে খাওয়া মানুষের ওই দুটো হাত দিয়ে নিজের "রোজকার বাজার"-এর উদ্বোধন করালেন বিমান সরকার।

আকাশ বাবু এই উদ্বোধন করতে রাজি ছিলেন না।হয়তো তাদের এই সন্মান পাওয়ার অভিজ্ঞতাটাই নেই।তার কথায়,"অনেক বড়ো বড়ো লোক আছে দাদা, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, এসব করে লজ্জা দেন কেন ?"


আসলে এত শ্রম দেওয়ার পরেও উনাদের বা উনাদের শ্রমের সঠিক সম্মানটা আমরা অনেকেই দিতে পারি না।আমরা সর্বদা 'দ্য বেস্ট'টাই খুঁজি।নিজের ব্যাবসা হোক বা পুজোর প্যান্ডেল কোনো কিছু উদ্বোধনের সময় বিভিন্ন গণ্য মান্য ব্যক্তিদের দিয়ে ফিতে টা কাটাই।যাতে সেটা প্রচার পায়।মানুষের মুখে মুখে ঘোরে খবরটা।কিন্তু বিমানের মনে ছিল অন্যরকম ইচ্ছা। পিছিয়ে পড়া এই মানুষগুলি,আসলে যাদের কাজের ওপর ভর করেই এই এত বড় কাজগুলি পূর্ণতা পায় তাদের লোক সমাজে সন্মান জানানো।বিমানের কোথায়,"এই কাজটা যদি আমরা আমাদের আসে পাশের কৃষক বা শ্রমজীবী মানুষগুলোকে দিয়ে করাই তবে উনারাও সন্মানিত হন, উনাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়ে, পাশাপাশি আমাদের সাথে এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর সম্পর্কও আরও সুন্দর হয়।"

যাই হোক,বিমানের মানসিকতা কি কোন পরিবর্তন আনতে পারবে এই 'সেলিব্রেটি নির্ভর কালচার'-এর।উত্তর তোলা থাক সময়ের কাটায়।