বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছে। এই ছুটির পর সারাদেশের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাকেন্দ্রে ফিরে গিয়ে এক নতুন পরিবেশের মুখোমুখি হবে। এই নতুনত্ব আসবে শ্রেণিকক্ষে, পরিবর্তন আসবে পাঠপ্রদানের ধরনে, বাড়বে রিমোট লার্নিং। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে শিশুরাও আগের মতো একসঙ্গে দলবেঁধে শ্রেণিকক্ষে যেতে পারবে না। সব মিলিয়ে উদ্ভূত এই নতুন পরিস্থিতিকে বৈশ্বিকভাবে ‘নিউ নরমাল’ নিয়ম হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর এর পূর্ণাঙ্গ চিত্রপট কেমন হবে— তা নিয়ে বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার।
করোনা পরবর্তিতে বিদ্যালয় চালু করবার ক্ষেত্রে একটি নতুন ফ্রেম ওয়ার্কের কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। বর্তমানে যেখানে বিদ্যালয়ের মোট কার্যদিবস বছরে ২২০ দিন এবং ১৩২০ ঘন্টা সেখানে নতুন ফ্রেম ওয়ার্কে বছরে মোট কার্যদিবস ১০০ দিন হওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলেই সূত্রের খবর।
ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদের সাথে সরাসরি আলাপকালে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল বলেছিলেন- “আমরা এনসিইআরটিকে স্কুল পুনরায় খোলার জন্য গাইডলাইন প্রস্তুত করতে বলেছি এবং তারা বেশিরভাগ কাজ করেছে। গাইডলাইন অনুসারে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ডাকার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি একসাথে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনা হয়, তবে আমাদের কীভাবে এটি করা উচিৎ তা দেখতে হবে।"
তিনি আরও জানিয়েছিলেন বিদ্যালয়ে ডাবল শিফটে বা বিকল্প দিন গুলিতে বিদ্যালয়ে ক্লাস চালু করার বিষয়েও ভাবনা চিন্তা রয়েছে।
তার বক্তব্যে পরিষ্কার বোঝা গিয়েছিলো যে কোনও পরিস্থিতিতে, যে কোনও সময়ে স্কুল শুরু হলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিক্ষা প্রায় 50 শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে।
নতুন ফ্রেম ওয়ার্কে যে সমস্ত পরিকল্পনা গুলি নেওয়া হয়েছে-
১। করোনা পরবর্তি সময়ে বিদ্যালয়গুলি বিধানসভা অধিবেশন, সেমিনার এবং সমাবেশের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
২। বিদ্যালয়গুলিকে মুখোশ পরা, সামাজিক দূরত্বের নিয়মাবলী অনুসরণ এবং একটি ক্লাসে কম শিক্ষার্থীর সাথে বসার ব্যবস্থা করার মতো ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
৩। বিদ্যালয়গুলিকে এমন বাচ্চাদের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে, যাদের অনলাইনে শেখার সুবিধা এবং অন্যান্য শিক্ষার সরঞ্জাম ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই।
৪। বিদ্যালয়ের শিক্ষার সময়কে কমিয়ে বছরে মোট কার্যদিবস ১০০ দিন এবং ৬০০ ঘন্টা করা হবে।
৫। ৫০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬। বাচ্চাদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য স্কুলে বা বাড়িতে ডাক্তার এবং পরামর্শদাতাদের জন্য ২০ দিন বা ১২০ ঘন্টা নির্ধারিত হতে পারে। একটি ক্লাস আগে যেখানে ৪৫ মিনিটের হতো এখন তা কমিয়ে ৩০ মিনিট নিয়ে আসের কথা বলা হয়েছে।
৭। অভিবাসী শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সহজ ট্রান্সফার নিয়ম চালুর সম্ভাবনা।
৮। ক্লাস 1-8 এর শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে 2-4 দিন আসতে পারে
৯। 9-10 শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে 4-5 দিন উপস্থিত হতে পারে।
১০। মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও বড়সর পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। সম্ভবত কুইজ, শ্রেণিতে উপস্থাপনা এবং ঘরে বসে প্রকল্পের কাজ এবং পোর্টফোলিও তৈরির মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা হবে।
১১। খাতা-কলমের ব্যবহার প্রায় নির্মূলের পথে হাটবে নতুন ফ্রেম ওয়ার্ক।
১২। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বিষয়ে ব্যাপক প্রচার করতে হবে।
১৩। শারীরিক দূরত্ব সহ শ্রেণিকক্ষের বাইরে ক্লাস পরিচালনা করার প্রস্তাব করা হয়।
১৪। সমস্ত বিদ্যালয়গুলিতে থার্মোমিটার, জীবাণুনাশক, সাবান, মাক্সের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহের জন্য বাজেট তৈরি করতে বলা হবে এবং COVID সম্পর্কিত পদক্ষেপের জন্য টাস্ক ফোর্স স্থাপন করতে বলা হবে।
১৫। সরকারী বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলের খাবার পরিবেশন করার জন্য স্কুলগুলিকে পৃথক নির্দেশিকা দেওয়া হবে, শাকসবজির জন্য লবণ / হলুদ ধোয়া ম্যান্ডেট করা, রান্না পর্যবেক্ষণ করা, বাচ্চাদের মধ্যাহ্নভোজন পরিবেশন, প্রতিদিনের রান্নাঘরের থার্মাল স্ক্রিনিং এবং স্যানিটাইজ নিশ্চিতকরণ ।
এই পদক্ষেপগুলি মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক শীঘ্রই গ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
Social Plugin