Exploration is the Hall-mark of Young Adults

চার বছরের রিয়া আর তার বারো বছরের দাদা পাপাই এর সমস্যার কথা সবাই জেনেছেন । রিয়া চায় আপনমনে খেলতে , কিন্তু সাথে চায় সবার ভালোবাসার নিশ্চয়তা । পাপাই এর চাই নিজের বিশেষ পরিচয় তৈরী করার সুযোগ – একজন স্বাবলম্বী মানুষ হয়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ। না হলেই বিপত্তি । সমাধান হিসাবে মনস্তত্ত্ববিদদের যে মত তুলে ধরেছিলাম , আশা করি অভিভাবকেরা মেনে চলছেন। 

আজ চলুন আরও দু’জনের সমস্যার কথা বলি। রিয়া বা পাপাই এর পরিবারের কেউই নয় এরা ; কিন্তু খুব আপনার। পাশের বাড়ীতেই থাকে তুলি দিদি আর জয় দাদা। তুলি ১৮ বছর বয়স থেকে ১৯ এ পা দিল। কলেজে প্রথম বছরের ছাত্রী। পদার্থ বিদ্যাতে অনার্স নিয়ে পড়ছে। জয় এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। তার ইচ্ছে, কলেজে গিয়ে ইংরাজী সাহিত্য নিয়ে পড়া। বাড়ী দুটো আলাদা। কিন্তু মানুষগুলো সবসময় যাতায়াতের মধ্যেই আছে। ওদের সামনে একটাই প্রশ্ন – কিভাবে তৈরী হলে চাকরীর জগতে সাফল্য পাওয়া যাবে। ওদের বক্তব্য, মা- বাবা সবসময়ই আমাদের পরামর্শ দেন। ভালোও লাগে। কিন্তু কেন যেন , নিজেদের মতো করে ভাবতে ভালো লাগে। ওরা দুজনাই ইন্টারনেট ও খবরের কাগজ দেখে , সিনিয়ারদের সাথেও কথা হয়। সবার শেষে নিজেরা ভাবতে বসে , নিজেদের পছন্দের সাথে মিলবে তো ? 

রিয়া আর পাপাই এর সেই প্রিয় দাদা ও দিদি এখন মহা অশান্তি করছে। পাশের বাড়ী থেকে প্রায়ই শোনা যাচ্ছে তুলি আর জয় ওদের মা - বাবার সাথে কথা কাটাকাটি , ঝগড়া করছে। তুলি দিদি নাকি মোবাইল নিয়ে বেশীরভাগ সময় কাটাচ্ছে। মাকে কাজে সাহায্য করছে না , আবার পড়াশুনাও করছে না। জয় দাদাও খালি ঘুমাচ্ছে। পড়াশুনাতে মন নেই। মা বাবা কিছু বলতে গেলে দু জনের একই রকম কথা –আমাদেরকে নিয়ে ভাবতে হবে না। আমরা তোমাদের ঘাড়ে চেপে বসে থাকবো না। 

মনস্তত্ত্ববিদেরা তুলি আর জয়ের মতো ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের শেষ আর পরিণত বয়সের প্রথমিক পর্বের শুরু – এই হিসাবে চিহ্নিত করেন। সকলের জেনে ভালো লাগবে, সাধারণ মানুষের তো বটেই , একসময় মনস্তত্ত্ববিদদের কাছেও মানুষের জীবনের বয়ঃসন্ধিকালের শেষ আর পরিণত বয়সের প্রাথমিক পর্বের উপস্থিতি ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বয়ঃসন্ধিকালের বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধান শুরু হয়। পরিণত বয়সের প্রাথমিক পর্ব আলাদাভাবে চিহ্নিত হয় বিংশ শতাব্দীতে। সম্ভবতঃ কেনিসটন ( Keniston) ১৯৭০ সালে প্রস্তাব করেন , এই বৃদ্ধির স্তরকে “Youth” বা বাংলায় “নব্য তরুণ” বলা যেতে পারে। বর্তমানে “Youth” এর বদলে “Young Adult” কথাটি বেশী ব্যবহার করা হয় । মোটামুটি মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের পর থেকে স্বাবলম্বী হিসাবে কাজের জগতে প্রবেশ করা পর্যন্ত এই স্তর বিস্তার লাভ করে । এই পর্যায়ের সময়কাল বিভিন্ন হতে পারে।কেউ কেউ কাজের জগতে অল্পদিনের প্রস্তুতি নিয়ে ঢুকে পরে। আবার কেউ কাজের জগতে দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি নিয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু প্রাথমিক স্তরের মানসিক অস্থিরতা সকলের ক্ষেত্রেই বেশী হয়। 

বয়ঃসন্ধিকালের শুরু থেকে ( কম বেশী ১২ বছর বয়সে )আত্মপরিচয় ( Self Identity) তৈরী করার প্রচেষ্টা ধীরে ধীরে তীব্রতর হয়। একইসাথে মা-বাবা/ অভিভাবকের উপরে নির্ভরতা থেকে সরে এসে ধীরে ধীরে সমবয়সী বন্ধুদের প্রতি আকর্ষন ও নির্ভরতা বাড়তে থাকে। মজার কথা, বয়ঃসন্ধিকালের শেষের দিকে যখন আত্মপরিচয় মোটের উপর তৈরী হয়ে যায়, তখন সমবয়সী বন্ধুদের প্রতি আকর্ষন ও নির্ভরতা আবার কমতে থাকে। সকলের সাথেই বন্ধুত্ব থাকে কিন্তু জীবনের পথে অগ্রসর হয় নিজের আত্মপরিচয় আর নিজের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। 

এর সাথে নব্য তরুণের মধ্যে এক নতুন বৈশিষ্ট্য জন্ম নেয় - বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে পরীক্ষা করার প্রবণতা (Exploration)। ভেবে দেখুন শিশু যখন প্রথম হাঁটতে শেখে তখন হঠাৎ করেই বিভিন্ন দিকে চলে যায় – নতুনকে স্পর্শ করার নেশায়। সেটাই আবার যেন ফিরে আসে । একজন পূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার আগে নব্য তরুণ তার স্বকীয় চিন্তার জগত , কাজের জগত তৈরী করতে চায় , আর তার জন্য বারবার ভেঙ্গেচুরে নতুন নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে থাকে। পরবর্তীতে যখন সে একজন পরিণত মানুষ হয়ে ওঠে , তখন এই অস্থিরতা অনেকটাই কমে এসে মোটের উপর স্থিতিশীল ব্যক্তিত্ত্বের একজন মানুষ হয়ে ওঠে। 

আজ আমাদের চিন্তা এই নব্য তারুণ্যকে নিয়ে। একদিকে প্রকৃতি যেমন অসম্ভব মানসিক এবং দৈহিক সামর্থ্য দিয়ে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তোলেন এদেরকে, , অন্যদিকে এদের অভিজ্ঞতার সংগ্রহ এদের প্রায় শূণ্য থাকে। ফলে অসাফল্যের সম্ভাবনা খুবই বেশী থাকে , অসাফল্যকে কিভাবে অতিক্রম করা যায় তার অভিজ্ঞতাও কম থাকে , হতাশায় ডুবে যাওয়ার প্রবণতা বেশী থাকে। এদেরকে সাহায্য কেমনভাবে করবেন ? এদেরকে থামালেও বিপদ। বদ্ধ ঘরে তুলি আর জয়ের যেমন অবস্থা হয়েছে। 

উপায় , সেই সহজ, অথচ কঠিন পন্থা ।ওদের কথা শুনুন। বলবেন , ওরা তো কথা বলতেই চায় না। আসলে তা’নয়। কবিগুরুর সেই লাইনটা মনে পড়ে যায়, “ আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল , শুধাইল না কেহ ।“ ওদের অবস্থা সেইরকম। ওরা বলতে চেয়েছে । কিন্তু বিপরীতে পেয়েছে শাসন বা উপেক্ষা। ছাদে বসে পায়রাকে গম খাইয়েছেন কখনও ?আমার অভিজ্ঞতা বলি। প্রথম প্রথম কাছেই আসতে চাইতো না। ধীরে ধীরে আমার উপরে বিশ্বাস জন্মেছে। পারলে ঘাড়ে চেপে বসে। এইভাবে বিশ্বাস জন্মালে ওরা সত্যিই কথা বলবে। তখনই আপনি জানতে পারবেন , ওরা কোন্ অচেনার আনন্দে মশগুল বা কোথায় ব্যর্থ মনোরথ হয়ে মনমরা হয়ে পড়েছে। লড়াইয়ের উৎসাহ দিন আর দিন রসদ। শিশুদের ক্ষেত্রে বলেছিলাম , ওদের দরকার ভালোবাসার নিশ্চয়তা। আর এই তরুনদের দরকার ঝুঁকিপূর্ণ লড়াই-এর পরে আশ্রয়ের নিশ্চয়তা। 

তুলি আর জয়ের মা বাবার মতো আরও অনেক অভিভাবক আছেন যাঁরা ওদের বয়সী সন্তানদের নিয়ে সমস্যায় আছেন। সবাইকে আমার বিনীত অনুরোধ - ওদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠুন, ওদের কি করা উচিত সে প্রসঙ্গে ওদের প্রশ্নের উত্তরে আপনার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিন , ওদেরকে চাপিয়ে দিয়ে বলতে যাবেন না – ওদের এইটাই করা উচিত। 

Dr. Nita Mitra Chanda 
Honorary Coordinator of Find_Mind, Siliguri 
(Psychological Research and Counseling Unit) 
And 
Associate Professor, Siliguri B.Ed.College