রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ ইস্যুতে এবার সরব হলেন সুজন চক্রবর্তী। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তিনি বলেন-" রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের নামগন্ধ নেই। ৭বছর অতিক্রান্ত। উচ্চপ্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। বন্ধ। প্রাইমারি টেট পরীক্ষার ফর্মফিলাপ ২০১৭-তে করা হলেও এখনও পরীক্ষার কোন বন্দোবস্ত হয়নি। গেস্ট লেকচারারদের যে প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন, তা এখনও কার্যকরী হয়নি।"

শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে গতকাল মখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়কে তিনি একটি চিঠিও লেখেন। চিঠিতে জানান-
" রাজ্যের অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতনই শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়ােগ, অনুমােদন ও বেতন সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার বিষয়ে ইতিপূর্বে একাধিক বার আপনার কাছে উত্থাপন করেছি। কিন্তু কোন সুরাহা না হওয়ায় আবারও আপনার দৃষ্টি আর্কষণ করতে বাধ্য হচ্ছি। কোভিড-১৯ অতিমারী পরিপ্রেক্ষিতের অনেক আগে থেকেই এই সমস্যাগুলাে বহাল রয়েছে। দ্রুত যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং তা কার্যকরী করতে না পারলে শিক্ষাদানের কাজ যেমন ব্যহত হচ্ছে, তেমনই শিক্ষকসমাজ ও কর্মপ্রার্থী শিক্ষিত যুবসমাজ চুড়ান্ত বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। প্রতিটি বিষয়েই আপনি সম্যকভাবে জানেন। অনেকগুলি ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি প্রদান বা সিদ্ধান্ত ঘােষনা করেছেন, কিন্তু তা এখনও কার্যকরী হয়নি।"

সুজনবাবু এদিন চিঠিতে উল্লেখ করেছেন- "শিক্ষক নিয়ােগ সংক্রান্ত প্রাথমিক টেট পরীক্ষার আবেদনপত্র ২০১৭ সালে জমা নেওয়া হলেও এখনাে পর্যন্ত পরীক্ষা গ্রহণ অথবা নিয়ােগ প্রক্রিয়ার কাজ শুরুই হয়নি। ইতিমধ্যে তিন বছর অতিক্রান্ত। চরম বিপর্যস্ত শিক্ষিত যুবসমাজ তথা এই কর্মপ্রার্থীরা। এছাড়াও প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়ােগ সংক্রান্ত বহু বিষয় সরকারের কাছে আজও অমীমাংসিত অবস্থায় পরে রয়েছে। আর কতদিন তাদের অপেক্ষা করতে হবে?


উচ্চপ্রাথমিক শিক্ষক নিয়ে তিনি লেখেন- "উচ্চপ্রাথমিকে শিক্ষকপদে নিয়ােগ গত ৭ বছরে হয়নি। চাকরিপ্রার্থীরা অসহায়তার শিকার। জীবনের মূল্যবান সময় এই কর্মপ্রার্থী যুবকদের নষ্ট হচ্ছে। এরা দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু সরকারের দিক থেকে বিগত ৭বছরেও ইতিবাচক কোন উদ্যোগ নেই। নিয়ম মত প্রতি বছর এসএসসি পরিক্ষা হচ্ছেনা। বিশাল অংশের শিক্ষিত যুবসমাজ ধারাবাহিকভাবেই বঞ্চনার শিকার। কার অপরাধে?" 


 তার লেখা এদিনের চিঠিতে বাদ যায়নি অতিথি অধ্যাপকদের কথাও। তিনি জানান- "উচ্চশিক্ষায় অতিথি অধ্যাপক সহ অন্যান্যদের সরকারি অন্তর্ভুক্তিকরনের ঘােষণা আপনি করেছেন ১৯শে আগষ্ট,২০১১। দুটি ভাগে এই অন্তর্ভুক্তিকরণ, SACT-1 and SACT-2 । তদনুযায়ী রাজ্য সরকার মেমােরেন্ডাম( No2081-Edn(Cs)/ioM-83/2019, dated 23.12.2019)) প্রকাশ করে এবং ০১.০১.২০২০ থেকে ঘােষিত ভাতা চালু করার কথা জানায়। সেই অনুযায়ী তথ্য যাচাই এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া সাধারণভাবে সম্পন্ন করা হয়। অথচ প্রায় ৬ মাস ধরে তা কার্যকরী করা হয়নি। স্বভাবতই সরকার ঘােষিত ভাতা থেকে এরা যেমন বঞ্চিত, তেমনই কলেজগুলাে যে ভাতা এদের দিত তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিনা পারিশ্রমিকেই এরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। চুড়ান্ত বিপর্যস্ত হচ্ছেন এরা। আপনার ঘােষণা এবং সরকারি সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকরী করা জরুরি।


এছাড়াও আংশিক-অস্থায়ী- চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের অবস্থা আপনি নিশ্চয়ই জানেন। প্রচন্ড সংকটে তারা, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। চুড়ান্ত অপরিকল্পনা, অস্থিরতা এবং সিদ্ধান্তহীনতার শিকার হয়ে বিপর্যস্ত রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষক সমাজ। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বহুবার আপনাকে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বলা হয়েছে, তা নিশ্চয়ই আপনার স্মরণে আছে।

জরুরি এবং বকেয়া সিদ্ধান্ত গ্রহন ও কার্যকরী করার জন্য সুজনবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।