SER-20, নিগমনগর: 

করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রুখতে প্রায় তিনমাস ধরে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। জারি রয়েছে একাধিক বিধিনিষেধ ও নির্দেশিকা। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে সাধারন মানুষ। অনেকেই কর্মসংস্থান হারিয়েছে। ফলে দুবেলার অন্নসংস্থান করতে শহর হোক কিংবা গ্রাম প্রায় সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে পেশা বদলের ছবি। কোচবিহার জেলার দিনহাটা-২ ব্লকের কিশামতদশগ্রাম, চৌধুরিহাট গ্রামপঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল এলাকায় লকডাউনে পুনরায় ট্যাপাই তৈরীতে উদ্যোগী হয়েছেন বহু কারিগর। 


টেকনোলজির যুগের বর্তমান প্রজন্ম এই জিনিসটি দেখেইনি বা অনেকে হয়তো নামি শোনেনি। শহরাঞ্চলেও হয়তো প্রায় অচেনা এই বস্তুটি।উল্লেখ্য ট্যাপাই বা ট্যাপরাই হল বাঁশের তৈরী এক বিশেষ মাছ ধরার সরঞ্জাম যা একসময় দিনহাটা মহুকুমার গ্রামাঞ্চলে জনপ্রিয় ছিল। মুলত বর্ষার জলে ভরে ওঠা জমি ও জলাশয়ের ছোটমাছ ধরতে জল প্রবাহের পথে বসানো হয় এই ট্যাপাই। জলের স্রোতের সাথে প্রবাহিত হয়ে ছোট মাছ এই যন্ত্রে ধরা পড়ে।


একসময় ব্লকজুড়ে ট্যাপাই কারিগরদের রমরমা ছিল। তবে প্রযুক্তির উন্নতি, গ্রামাঞ্চলে অত্যধিক হারে জনসংখ্যাবৃদ্ধি, খালবিল ও জলাশয় বুজিয়ে বাসস্থান গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি পরিবেশ দূষণের গ্রামাঞ্চলেও ক্রমশ মাছের সংখ্যা কমেছে। এর উপর যুক্ত হয়েছে স্মার্টফোনে সময় কাটানোর বদভ্যেস। এতে ট্যাপাই কারিগরদের অনেকেই এই পেশা ছেড়ে কৃষিকাজ, দিনমজুরি, কৃষিশ্রমিকের কাজে যোগ দেওয়ায় কার্যত হারিয়ে যায় রাজবংশী সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা এই ট্যাপাই বা টেপরাই শিল্প। 


আক্ষেপের সুরে এই শিল্পের এক প্রাক্তন কারিগর বলেন, আগে বর্ষাকালে গ্রামীন বাজারগুলিতে ট্যাপাইয়ের খুব চাহিদা ছিল বলে আমরাও বাঁশ কেটে ট্যাপাই তৈরী করে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে কিছু উপার্জন করতাম। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে চাহিদা কমায় এই পেশা ছেড়ে অন্য্ পথে হাঁটতে হয়েছে। কিন্তু বর্তমান লকডাউনে কাজ হারানোয় পুনরায় ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় ট্যাপাই কারিগররা ফের কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। এই বর্ষার সময়ে লকডাউনের অবসর কাটাতে মাছ ধরে সময় কাটাচ্ছেন অনেকেই। খোঁজ পড়ছে ট্যাপাইয়ের। আর সেসবের জোগান দিতেই ট্যাপাই কারিগরদের অনেকেই ট্যাপাই বানিয়ে গ্রামীন বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন হাট ও গ্রামগঞ্জের বাজারে মাপ অনুযায়ী ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ট্যাপাই। ট্যাপাইয়ের চাহিদা বাড়ায় নিজেদের পুরোনো শিল্পে ফিরতে পেরে খুশি ট্যাপাই শিল্পীরা।