গৌতম সাহা,কোলকাতাঃ

আজ ২৪ শে জুন - UUPTWA সংগঠনের ঐতিহাসিক বিধানসভা অভিযান প্রথম বর্ষে পদার্পণ করল।গত বছর এই দিনেই পশ্চিম বঙগের বৃহত্তর প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন UUPTWA এর ডাকে সারা রাজ্যের প্রায় ৭০,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক- শিক্ষিকা সমবেত হয়েছিল সুবোধ মল্লিক স্কয়ারে - লক্ষ্য নায্য বেতন,নায্য সম্মান ও বিভিন্ন জেলায় বদলী প্রাপ্ত শিক্ষক -শিক্ষিকাদের নিজের জেলায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার দাবীতে বিধানসভা অভিযান ও মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী কে স্মারক লিপি প্রদান।ঠিক সকাল ১১ টা নাগাদ হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা সুশৃঙখল ভাবে মিছিল করে এগিয়ে যান বিধানসভা অভিমুখে।

এরপর মিছিল রাণী রাসমণি রোডে এলে প্রশাসন সেখানে ব্যারিকেড করে আঁটকে দেন সমস্ত শিক্ষক- শিক্ষিকদের।শিক্ষক-শিক্ষিকারা ব্যারিকেড ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ একাধিক জলকামান ব্যাবহার করে আর বেধড়ক লাঠিপেটা করে মিছিল ছত্রভঙগ করেদিতে চায়।পুলিশের এমন অমানবিক হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা আহত হন।প্রশাসনের চেষ্টায় তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য। 

সংগঠনের সম্পাদিকা  পৃথা বিশ্বাস সহ শতাধিক শিক্ষক- শিক্ষিকা পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বিধানসভায় প্রবেশের চেষ্টা করেন।সেখানে প্রায় সমস্ত শিক্ষক -শিক্ষিকাদের গ্রেপ্তার করে লালবাজার জেলে পাঠানো হয়।পরে অবশ্য মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী সংগঠনের সম্পাদিকা সহ কয়েকজন প্রতিনিধির সঙগে সাক্ষাৎ করেন।সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস মাননীয় মন্ত্রী কে তাদের সমস্ত অভাব অভিযোগের কথা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন।কিন্তু মন্ত্রী মশাই কোন নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি না দেওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প করেন। কিন্তু লালবাজারে বন্দী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিভিন্ন ধারায় মামলা দেওয়ার হুমকি ও বিভিন্ন হাসপাতালে অসুস্থ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথা ভেবে সেদিনের মত আন্দোলন তুলে নিতে বাধ্য হন সংগঠনের নেতৃত্ত্ব।


কিন্তু দেড় বছর ধরে তাদের নায্য দাবীর সমর্থনে কোন সরকারী উদ্যোগ নেওয়া দুরের কথা তাদের সংগঠনের সঙগে কোন ইতিবাচক কথা বলা হয়নি সরকারী মহল থেকে।তাছাড়া নানা মহল থেকে অসম্মানজনক মন্তব্য ছুঁড়ে দেওয়া হয় তাদের উদ্দেশ্যে।অথচ সর্বভারতীয় NCTE এর যোগ্যতা বেশ কয়েকবছর আগে শিক্ষক-শিক্ষিকারা অর্জন করেছিলেন।সেই যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যুনতম বেসিক ৯৩০০ টাকা ও গ্রেড পে ৪২০০ টাকা থেকে শুরু হওয়ার কথা এবং পশ্চিমবঙগ বাদে প্রায় সমস্ত রাজ্যেই সেই বেতনক্রম বহুদিন আগে চালু হয়ে গিয়েছিল। একমাত্র ব্যাতিক্রম ছিল পশ্চিমবঙ্গ।পশ্চিমবঙ্গে বহু শিক্ষক সংগঠন থাকলেও এ বিষয়ে কোন রকম লড়াই, আন্দোলন সংগঠিত করতে পারেনি।


একমাত্র UUPTWA এর এই আন্দোলন এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত ও তীব্রতর ছিল যে রাজনৈতিক তথা প্রশাসনিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।বহুদিন পশ্চিমবঙ্গবাসী এধরনের শিক্ষক আন্দোলনের সাক্ষী হননি।এই আন্দোলন বহু শিক্ষক তথা বিভিন্ন গণ সংগঠনের ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছিল।পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে নিয়মিত চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল UUPTWA সংগঠনের এই আন্দোলন কে নিয়ে। যদিও কাঙখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে একমাস পরেই বিধাননগরে উন্নয়ন ভবনের পাশে আমরণ অনশন কর্মসূচী নিতে হয়েছিল তাদের।তারপরে সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনে সংশোধন করার লিখিত অর্ডার প্রকাশ করেন। 

নতুনহারে বেসিক ৭৪৪০ টাকা ও গ্রেড পে ৩৬০০ টাকা অনুযায়ী বেতনকাঠামো তৈরী করেন কিন্তু সিনিয়র শিক্ষকদের সঙগে জুনিয়র শিক্ষকদের বেতনের ফারাক আনতে বা সিনিয়ারিটি অনুযায়ী বেতনক্রমে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বা বর্ধিত গ্রেড পে যোগ করার কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি।এতেই বিরাট সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা বঞ্চিত হন নতুন ভাবে।সেই ব্যাপারেও সংগঠন বেশ কয়েকটি মিটিং- মিছিল, আন্দোলন করলেও সেই বঞ্চনা এখনও মেটেনি।তাই তাদের আন্দোলনে এখনও ইতি ঘটেনি।এদিকে আদালতেও বেশ কয়েকটি মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
 
এদিকে করোনা পরবর্তী লকডাউনে তাদের সংগঠনের হাজার হাজার শিক্ষক- শিক্ষিকা সারা রাজ্য জুড়ে অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণ সরবারাহ করে চলেছেন।এমনকি আম্ফান পরবর্তী দুর্যোগেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন UUPTWA সংগঠনের সমর্থকরা।
 
আজ ২৪ শে জুন- সেই ঐতিহাসিক দিবস। শিক্ষক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই দিনটি।আজেকের দিনটি পশ্চিমবঙগের লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা কৃতঙগ চিত্তে স্মরণ করছেন আর সংকল্প নিচ্ছেন অন্যায়, অবিচার থেকে মুক্তি পেতে ও নায্য দাবীতে পরবর্তী সংগ্রাম,আন্দোলনেও এই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।