কোভিড ১৯ এর সংকটের পরিস্থিতিতে বহু ব্যবসা বাণিজ্যই বিঘ্নিত। যে ধরণের কাজগুলিতে মানুষের সঙ্গে মানুষের পারস্পরিক সংস্পর্শের সম্ভাবনা বেশি, সেই ব্যবসাগুলি আরো বেশি করে সমস্যায় পড়েছে। সামগ্রিক অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও বলা যায় যে, গ্রামীণ ব্যবসায়ীরা যারা জরুরি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত কাজকর্মে জড়িত আছেন এবং বেশিরভাগই স্থানীয় সরবরাহের উপর নির্ভরশীল, তারা নতুন করে ঋণ নিয়ে ব্যবসার কাজ চালিয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শহরের ব্যবসায়ীরা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত। কোভিড ১৯ এর এই সংকট এভাবে চলতে থাকলে, এটা দেখার বিষয় যে গ্রামীণ ব্যবসা বাণিজ্যের পরিকাঠামোও কতটা প্রভাবিত হয়।

এদিকে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলির দৈনন্দিন কাজকর্মও বিশেষ ভাবে বিঘ্নিত। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় এমনিতেই তাদের ঋণের কিস্তি আদায়ের কাজ প্রায় থেমে গেছে বললেই চলে। তার উপর মানুষের সমস্যার কথা ভেবে, সরকারি নির্দেশে ঋণের কিস্তি কয়েক মাস অবধি পিছিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।

এরই মধ্যে কিছু অসাধু সোশ্যাল চ্যানেল, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু ভুয়ো খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে চলেছে। প্রায় নিয়মিত ভাবেই তারা তাদের ইউটিউব ও ফেসবুক চ্যানেলগুলিতে বলে চলেছে , "সরকার থেকে জানানো হয়েছে ঋণ গ্রহীতাদের আর কিস্তির টাকা ফেরত দিতে হবে না। ব্যাঙ্ক ও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলি সমস্ত ঋণ মকুব করে দিয়েছে।"

এই ধরণের ভুয়ো খবর একদিকে যেমন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলি, যেমন বন্ধন, আশা, আরোহণ- এদের ক্ষতি করছে, আর একদিকে তেমনি ঋণ গ্রহীতাদের ক্ষতি করছে। এখানে একটা কথা পরিষ্কার ভাবে বোঝা দরকার যে "মোরাটোরিয়াম" শব্দটি অর্থাৎ ঋণের কিস্তি আদায় পিছিয়ে দেওয়া এবং সম্পূর্ণভাবে ঋণ মকুব করার মধ্যে বিশেষ পার্থক্য আছে। এখনো পর্যন্ত সরকারি নির্দেশে যা বলা হয়েছে, তা হলো ঋণের কিস্তি আদায় পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে, যদিও সেটা ঋণ সংস্থা ও ঋণ গ্রহীতার সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভরশীল। যদিও কিস্তি আদায় পিছিয়ে গেলেও ঋণের উপর সুদের হার বহাল থাকবে এবং কিস্তি বন্ধ থাকাকালীনও মোট ঋণের উপরে সুদ জমা হতে থাকবে। এর ফলে ঋণ গ্রহীতার উপর পরবর্তীকালে অতিরিক্ত কিস্তির বোঝা চাপতে পারে ও আরো বেশিদিন ধরে তাকে ঋণ পরিশোধ করতে হতে পারে। অথচ পুরোনো ঋণ সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ না করে তিনি নতুন ঋণ নিতেও পারবেন না।

অতএব যে সমস্ত ঋণ গ্রহীতা এইসব খবরকে সত্যি মনে করে কিস্তির টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেবেন, তাদের ব্যবসার উন্নতি বা জীবনের পরিকল্পনাগুলি দীর্ঘায়িত হতে থাকবে। এছাড়াও, গ্রাহকরা যদি মোরাটোরিয়ামের মেয়াদের পরেও কিস্তি না চোকানো শুরু করেন, তাহলে সরাসরি তাদের ক্রেডিট স্কোর-এ এর প্রভাব পড়বে এবং পরবর্তীকালে কোনো সংস্থা থেকে ঋণ পেতে তারা বিশেষ অসুবিধায় পড়বেন।

আর সামগ্রিকভাবে এই ধরণের ভুল ধারণার ফলে রাজ্যের অর্থনীতি তে একটি সাংঘাতিক প্রভাব পড়বে, ব্যবসা বাণিজ্য আরো রুগ্ন হয়ে পড়বে।

এছাড়াও বুঝে নেওয়া ভালো যে, ঋণ মকুব যদি করতেও হয়, তবে সেই অধিকার কেবল মাত্র সরকারের বা অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আছে। ব্যাঙ্ক বা ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী গ্রাহকদের ঋণ মকুব করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

অতএব, গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করা এই ভুয়ো খবরগুলি ও যারা অসৎ উদেশ্যে এই ধরণের খবর প্রচার করছে তাদের এড়িয়ে চলাই ভালো। যে সমস্ত ঋণগ্রহীতারা ঋণ বা ঋণের কিস্তি সম্পর্কে বিশদে জানতে চান, তাদের উচিত সরাসরি ঋণপ্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলা।