সুরশ্রী রায় চৌধুরীঃ 
আজ আমাদের সকলের প্রিয় ঋতুপর্ণ ঘোষের  প্রয়াণ দিবস। তাঁর মৃত্যু ছিলো সকলের কাছে চরম আঘাত।

সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক পরবর্তী বাংলা সিনেমার নতুন এক ধারা তৈরি করেছিলেন ঋতুপর্ণ। ১৯৯৪ থেকে ২০১৩, মাত্র ১৯ বছর। ১৯ বছরে ১৯ টি ছবি।

''হীরের আংটি''-র হাত ধরে পথ চলা শুরু। শেষ হয়ে গেল ''চিত্রাঙ্গদায়''-য় এসে। অসম্পূর্ণ রয়ে গেল তাঁর ব্যোমকেশ বক্সী। মাঝে উপহার দিয়েছেন উনিশে এপ্রিল, দহন, উৎসব, চোখের বালি, দোসর, রেনকোট, শুভ মহরত, সব চরিত্র কাল্পনিক, নৌকাডুবি সহ এক গুচ্ছ রত্ন। তাঁর গল্প উপস্থাপনের ধরন তাঁর প্রায় প্রতিটি সিনেমাকেই দর্শকের চোখে কবিতার ছোঁয়াচ লাগাত। শুধু চলচ্চিত্র পরিচালনার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল না তাঁর প্রতিভা। দু’টি বহুল প্রচলিত বাংলা ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসাবেও দাপটে কাজ করেছেন তিনি।

আরেকটি প্রেমের গল্প, মেমরিস ইন মার্চ ও চিত্রাঙ্গদা - এই তিনটি সিনেমায় অভিনেতা ঋতুপর্ণ ঘোষের অনন্য অভিনয় প্রতিভার সাক্ষী থেকেছেন দর্শকরা।

ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের অনুরাগী। দুই দশকের কর্মজীবনে তিনি বারোটি জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ৩০ মে কলকাতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।
১৯৬৩ সালের ৩১ অগস্ট কলকাতায় ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্ম। তার বাবা-মা উভয়েই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র-নির্মাতা ও চিত্রকর। ঋতুপর্ণ ঘোষ সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন।

ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন ভারতের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি রূপান্তরকামী জীবনযাত্রা নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করছিলেন। তিনি নিজের সমকামী সত্ত্বাটিকে খোলাখুলিভাবে স্বীকার করে নেন, যা ভারতের চলচ্চিত্র জগতের খুব কম মানুষ করেছেন।
তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্র   জগতে  অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু তাঁর সৃষ্টি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে আপামর চলচ্চিত্রপ্রেমীদের অন্তরে।