pic credit: pinterest

বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বন, সেই পার্বন ১লা বৈশাখ নববর্ষের দিন থেকে শুরু করে চলে বছরের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তি পর্যন্ত l আর এই পার্বনের মধ্যে অন্যতম মায়েদের পালনকরা জামাইষষ্ঠী l প্রত্যেক বছর জোষ্ঠ্য কিংবা আষাঢ়ের শুরুতে বাঙালির ঘরে ঘরে পালন হয় এই বিশেষ অনুষ্ঠান l

জামাই ষষ্ঠীর দিন জামাই’কে ঘিরে শাশুরি মায়েদের এই অনুষ্ঠান অনেকটা উৎসবের আকার ধারন করে । জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠী পূজা করেন । ষষ্ঠীকে সন্তান-সন্ততি দেবী বা দেববহির্ভূত লৌকিক দেবীও বলা যায় । ঘর ও মন্দিরের বাইরে বট, করমচার ডাল পুঁতে প্রতীকী অর্থে অরণ্য রচনা করে এ পূজা করা হয়। এজন্য জামাই ষষ্ঠীকে অরণ্য ষষ্ঠীও বলা যায়। এ পূজায় ধর্মীয় সংস্কারের চেয়ে সামাজিকতা বিশেষ স্থান পেয়েছে ।

ষষ্ঠী পূজায় ব্রতীরা সকালে স্নান করে উপবাস থেকে নতুন পাখার ওপর আম্রপল্লব, আমসহ পাঁচফল আর ১০৮টি দুর্বাবাঁধা আঁটি দিয়ে পূজার উপকরণের সঙ্গে রাখে। করমচাসহ পাঁচ-সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার ওপর সাজিয়ে পূজার সামনে রাখতে হয়। ধান এ পূজার সমৃদ্ধির প্রতীক, বহু সন্তানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং দুর্বা চিরসবুজ, চির সতেজ অসীমতার বেঁচে থাকার ক্ষমতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ দুর্বা হল দীর্ঘ জীবনের প্রতীক। শাশুড়ি-মেয়ে-জামাতার দীর্ঘায়ু কামনা করে ধানদুর্বা দিয়ে উলুধ্বনিসহ ষাট ষাট বলে বরণ করেন। 
wikipedia

প্রবাদে আছে, যম-জামাই ভাগনা-কেউ নয় আপনা। কারণ যম মানুষের মৃত্যু দূত। জামাই এবং ভাগনা অন্যের বাড়ির উত্তরাধিকারী। তাদের কখনও নিজের বলে দাবি করা যায় না। এদের খুশি করার জন্য মাঝে মাঝেই আদর আপ্যায়ন করে খাওয়াতে হয়। তাই মেয়ে যাতে সুখে-শান্তিতে তার দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে এজন্য জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন জামাইকে আদর করে বাড়িতে ডেকে এনে আম-দুধ খাইয়ে পরিতৃপ্ত করে। আশীর্বাদস্বরূপ উপহারসমাগ্রীও প্রদান করে ।

কোনও কোনও অঞ্চলে আবার সদ্যস্নাত ব্রতীরা পূজার সময় নতুন পাখার ওপর আম্রপল্লব, আম আর ১০৮টি দুর্বা বাঁধা আঁটি দিয়ে পুকুরে কোমর জলে নেমে উলুধ্বনিসহ নতুন প্রকৃতিকে ষাট ষাট বলে বরণ করেন। নারীর কণ্ঠে এ উচ্চারণ জীব-প্রকৃতি-পরিবেশ-মানবতা রক্ষার আহ্বান করে পূজা শেষে ষষ্ঠীর সুতা সবার হাতে বেঁধে পরিবার-সমাজকে এক প্রীতির বন্ধনে বাঁধেন। ষষ্ঠী পূজার ব্রত পাঠের সময় নারীরা ১০৮টি দুর্বার গিঁট খুলে সাতবার গণনা করেন ।


২ বছর অতিক্রম করলো সংবাদ একলব্য। আপনাদের সহযোগিতায় এভাবেই এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। প্রতিটা মুহূর্তে আপনাদের সাথে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার সংবাদ একলব্য’র। আপনার আশেপাশে ঘটেচলা ঘটনা জানান আপনি, আপনিই আপনার এলাকার মুখপত্র। আমাদের ফেসবুক পেজে SMS করুন ঘটনার বিবরণ ছবি/ভিডিও সহ।

আমাদের ফেসবুক পেজের টপ ফ্যানদের মধ্যে লাকি কয়েকজনকে প্রতিমাসে দেওয়া হবে উপহার। তাই নিয়মিত লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করুন।

কিন্তু এই ষষ্ঠী পূজা কি জামাইদের জন্য, আসুন দেখে নেই এর আসল কাহিনী -

জামাইষষ্ঠী আসলে সন্তান প্রাপ্তির আশায় "মা বিন্ধ্যবাসিনী স্কন্দ ষষ্ঠী " এর কাছে মায়েদের নিবেদন l

স্কন্দ ষষ্ঠী পূজার আয়োজনে বাবা মা মেয়েদের বাপের বাড়ি আমন্ত্রণ জানায় সন্তান লাভের প্রার্থনা জানাতে l কিন্তু এখানে জামাই কোথায়, এর ইতিহাস জানতে আমাদের একটু পিছিয়ে যেতে হবে, সেক্ষেত্রে মেয়ে মানেই " অন্তঃ পুরবাসিনী " বাইরের জগতে সহজে সে আসতে পারবে না, তবে মেয়ে আসবে কিভাবে বাপেরবাড়ি তাই বাবা জীবন জামাই এর স্মরণাপন্ন হতে হল শাশুড়িদের l 

বাবা জীবন জামাই আসবে বাড়িতে এই নিয়ে শুরু হল আয়োজন,  নানা ফল, মাছ, মাংস, ক্ষীর, দই মিষ্টি কিছুই বাকি রাখা যাবে না, জামাইকে সন্তুষ্ট করতেই হবে কারণ  কথায় আছে " যম - জামাই - ভাগ্না, কেউ নয় আপনা "

একটু ব্যতিক্রমে পাছে আদরের মেয়েকে কথা শুনতে হয় তাই এই আয়োজন l শুধু পঞ্চব্যাঞ্জন নয় পরম্পরা আছে জামাই মেয়েকে উপহার হিসেবে বস্ত্র দেওয়া l 

কিন্তু প্রত্যেক বছরের মত এবার কি হবে জামাইষষ্ঠী, হবে কি পঞ্চব্যাঞ্জনে খাওয়া l এই বছরটা তো করোনা গ্রাস করেছে বিশ্বকে, মা ষষ্ঠীর কাছে তাই প্রার্থনা মা রক্ষা কর তোমার ধরণীকে আবার ফিরে আসুক নুতন ছন্দে এই বিশ্ব মঙ্গলময় হোক তোমার আশীর্বাদে l


তথ্যসূত্রঃ 

১।  যুগান্তর পত্রিকা
২। উইকিপিডিয়া