লকডাউনে আটক অভুক্ত ভবঘুরেদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে চলেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'পরশ'

গৌতম সাহা,কোলকাতাঃ

বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাসের দাপট মহামারীর রূপ নেওয়ায় বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে লকডাউন এবং সোশাল ডিসটেন্সিং।সর্বত্রই দোকানপাট বন্ধ,রাস্তাঘাট ফাঁকা,বন্ধ হয়েছে যানবাহন।সরকারী নিয়ম মেনে বা প্রাণের ভয়ে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন নিজের সুরক্ষিত ঘরে।কিন্তু সমস্যায় পড়েছেন দিন আনা -দিন খাওয়া মানুষ এবং রাস্তা ঘাটে,বাজারে,বাস স্টান্ডে কিংবা রেল স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া সহায় সম্বলহীন মানুষরা যারা ছোটখাটো কাজ বা ভিক্ষাবৃত্তি করেই দিন গুজরান করেন আর সেখানেই মাথা গুঁজে পড়ে থাকেন।

এমনই একটা জায়গা সোনারপুর থেকে মল্লিকপুর রেল স্টেশন এবং বাস রোড সংলগ্ন অঞ্চল। গত ২৪ শে মার্চ থেকে চলে আসা লকডাউনে তাদের অবস্থা বোদহয় সবথেকে করুণ। প্রায় অভুক্ত অবস্থায় তারা দিন কাটাচ্ছেন আর এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে এগিয়ে চলেছেন।এমতাবস্থায় তাদের কাছে দেবদূতের মতো হাজির হলেন দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার সোনারপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'পরশ'।বেশ কয়েকদিন হলো তারা প্রায় ৩০ -৪০ জন ভবঘুরের জন্য রাতের খাবারের ব্যাবস্থা করে চলেছেন মানব সেবায় ব্রত নেওয়া সংগঠনটি।মূলতঃ সোনারপুর থেকে মল্লিকপুর স্টেশন পর্যন্ত চলছে তাদের কর্মসূচী।এই অসময়ে তাদের কাছ থেকে খাবার পেয়ে আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন অসহায় ভবঘুরেরা,কৃতজ্ঞ চিত্তে তাদের খাবার গ্রহণ করছেন আর সাধুবাদ জানাচ্ছেন তাদের উদ্যোগকে।

অবশ্য এর আগে বেশ কিছুদিন ধরেই সংগঠনটি মানবসেবার নানা কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন।কিছু দিন আগেও এই সব অসহায় মানুষদেরকে শীতের কম্বল দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

এছাড়া পুরুলিয়ার জেলার এক প্রত্যন্ত হতদরিদ্র গ্রাম 'সিঁদুরপুর' এ বেশ কিছুদিন আগে থেকেই হতদরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য এক কর্মসূচী চালিয়ে আসছেন। সিঁদুরপুর হল এমন একটি গ্রাম যেখানে বসবাসকারী মানুষদের অনেকেরই দুইবেলা দুমুঠো খাবার জোটেনা,পড়াশোনাটা তাই তাদের কাছে বিলাসিতা।সেই গ্রামে সংস্থাটির তরফ থেকে ২ জন গৃহশিক্ষক রেখে আপাততঃ সপ্তাহে ৫ দিন সকালে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং সেই ছাত্র ছাত্রীদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। অবশ্য লকডাউন পরবর্তী বর্তমান পরিস্থিতিতে সাময়িক ভাবে সে পরিষেবা বন্ধ আছে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তারা কাজ শুরু করবেন বলে জানা গেছে।সেই কাজে প্রচুর খরচও বহন করে আসছেন সংস্থাটি।বর্তমান তারা ৩২ জন ছাত্র ছাত্রীদের সাহায্য করে আসছেন।তবে সেই সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে আগামী দিনে তাদের খরচ আরো যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।

সিঁদুরপুর গ্রামের ১৩৫ টি পরিবার কে এককালীন  খাদ্যদ্রব্য যথা- চাল,ডাল,তেল,সোয়াবিন, মশলা ইত্যাদি প্রদান করা ও পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করে একটি স্বাস্থ্যশিবিরের আয়োজন  হলেও বর্তমান লকডাউনে যাতায়তের সব রাস্তা বন্ধ থাকার জন্য তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তারা এই কর্মসূচি সম্পন্ন করবেন বলে জানা গেছে।এই বিষয়ে ওখানকার মাননীয় সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক মহাশয় তাদের খুব সাহায্য করছেন বলে জানা গেছে।