সুনিদ্রার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে ২০০৮ সাল থেকে World Sleep Society বিশ্ব নিদ্রা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতি বছর মার্চ মাসে মহাবিষুবের আগের শুক্রবার এ দিনটি পালন করা হয়। এ দিনটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সুস্থ্যতার জন্য সুনিদ্রার প্রয়োজনীয়তা এবং নিদ্রাহীনতা ও এর চিকিৎসা, নিবারণ, শিক্ষা জনসমক্ষে তুলে ধরা।
বিশ্ব নিদ্রা দিবসের মাধ্যমে প্রতি বছর World Sleep Society ঘুমের প্রয়োজনীয়তা এবং সমাজে এর প্রভাবের ব্যপারে জনসচেনতা সৃষ্টি করে।
ঘুম মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় শরীরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। পরিমিত ঘুম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। হৃদ্রোগসহ নানা রোগের ঝুঁকিও কমায়। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। নির্দিষ্ট এই ঘুম হলে প্রতিদিন সকালে আমরা সুস্থ অনুভূতি দিয়ে দিন শুরু করতে পারি। নয়তো অনিদ্রা শরীরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
নিদ্রাহীনতার ফলে স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কায় আছে বিশ্বের জনসংখ্যার ৪৫% মানুষ! আর তাই ঘুমের অভ্যাসটি তৈরি করতে হবে শিশুর শৈশব থেকেই।
আদরের সোনামনিটি না ঘুমালে মা-বাবার দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। মূলত নবজাতক শিশুদেরই এই সমস্যা বেশি হয়। কারণ শিশু দীর্ঘদিন মাতৃগর্ভে থাকার কারণে পৃথিবীর আলোতে এসে দিন-রাত বুঝতে পারে না।
তাই জেনে নিন আপনার সোনামনিকে ঘুম পাড়ানোর জন্য কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
১. শিশুর ঘুমের নির্দিষ্ট সময় বেধে দিন। এমনকি সে যখন বড় হবে, তখনও এ অভ্যাস তার কাজে আসবে। নির্দিষ্ট সময়ে শিশুকে ঘুমানোর জন্য পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করুন।
২. কখনোই শিশুকে রাতে বেশি খাবার খাওয়াবেন না।
৩. শারীরিক ও মানসিকভাবে আপনার শিশু খুবই কোমল। ওকে ওর শরীরের জন্য আরামদায়ক একটা বিছানা দিতে হবে। সাথে দিতে পারেন নরম কোনো পুতুল।
৪. শোনাতে পারেন ঘুমপাড়ানি গান অথবা ছড়া। এতে ওর মন শান্ত থাকবে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সহজেই ঘুম আসবে।
‘ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি মোদের বাড়ি এসো,
খাট নাই পালং নাই খোকার চোখে বসো।
বাটা ভরে পান দিবো গাল ভরে খেয়ো,
খোকার চোখে ঘুম নাই ঘুম দিয়ে যেয়ো।’
৫. ঘুমের জন্য ওর ঘরের তাপমাত্রা কখনোই খুব বেশি বা খুব কম করবেন না।
৬. কোলে নিয়ে বা দোলনায় দোল দিয়ে শিশুকে তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়ানো যায়। মাতৃগর্ভে থাকার সময় মায়ের হাঁটাচলা ও নড়াচড়ার কারণে গর্ভের শিশু দোল অনুভব করে। জন্মের পরেও এই দোল খাওয়াটা শিশুরা পছন্দ করে।
৭. খেয়াল রাখবেন, আপনার শিশু যেন দুধ খেতে খেতে ঘুমিয়ে না পড়ে। প্রয়োজনে পায়ে আলতো টোকা দিন। কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে দিলে শিশু ফ্রেশ থাকবে, এতে ঘুমাবেও কম। সন্ধ্যা থেকে শিশুকে জাগিয়ে রাখলেও রাত ৮-৯টার পর থেকেই শিশুর ঘুমের আয়োজন শুরু করে দিন।
৮. ঘরের আবহাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে সেই অনুযায়ী পোশাক পরান।
৯. বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ঘরের আলো নিভিয়ে দিন। পরিবর্তে অন করতে পারেন নাইট ল্যাম্প। আলো জ্বললে বাচ্চারা আর চোখের পাতা ফেলতে চায় না।
১০. অনেক সময় আলতো স্পর্শে ঘুম আসে। তাই শিশুর মুখে, পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানো যেতে পারে।
১১. খেয়াল রাখবেন সময়ে সময়ে যেন শিশুর ন্যাপি বদলাতে ভুল না হয়। দেখা গেল অনেকক্ষণ হয়তো ন্যাপি বদলানো হয়নি। অথচ ন্যাপি ভিজে গেছে। তাতে শিশুর ঘুম নষ্ট হতে পারে।
১২. শিশু ঘুমিয়ে পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে তার কাছ থেকে সরে যাবেন না। হালকা ঘুমের মধ্যে যদি সে বুঝতে পারে যে তার পাশে কেউ নেই, তাহলে ভয় পেয়ে কেঁদে উঠতে পারে। তাই যদি বিছানা ছাড়তেই হয় তাহলে বাচ্চা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলে তারপরেই সেখান থেকে সরুন।
Social Plugin