কেরালায় বাঙালি শ্রমিককে বহিরাগত অপবাদে মার, প্রতিবাদ ঐক্য বাংলার


গতকাল সোমবার ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ তে অনেক বাংলা সংবাদ মাধ্যমই প্রকাশ করে একটি দুঃখজনক খবর - কেরালার তিরুভানান্থাপুরাম এ বছর 26 এর মতো বাঙালি যুবক গৌতম মন্ডল কে বারবার "বহিরাগত" অপবাদ দেবার সাথে সাথে তার আধার কার্ড দেখতে চান এবং তাকে  মারধর করেন এক স্থানীয় অটোচালক। প্রতিবাদে এগিয়ে আসেননি কোন পথচারী, যদিও পথচলতি এক ব্যক্তির মোবাইল ক্যামেরা তে ধরা পড়ে ভিডিওটি। 


সোমবার সকাল থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ঘটনাটির তীব্র প্রতিবাদ জানায় বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ঐক্য বাংলা। সোমবার বিকেলে তারা দক্ষিণ কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এর সামনে একটি প্রতিবাদ জমায়াতের আয়োজন করে। 


অনুষ্ঠানের শুরুতে ঐক্য বাংলার সাধারন সম্পাদিকা শ্রীমতি সুলগ্না দাশগুপ্ত উপস্থিত জনতাকে মনে করিয়ে দেন - বাইরের রাজ্যে বাঙালিকে বহিরাগত বলে দাগিয়ে দেওয়া এবং হেনস্থা করার এই ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। 2017 তে রাজস্থানে মালদার যুবক আফরাজুল কে পুড়িয়ে মারার ঘটনা থেকে শুরু করে কয়েক মাস আগে ব্যাঙ্গালোরে বহু হাউসিং কম্প্লেক্স এ বাংলাদেশী সন্দেহে বাঙালি গৃহকর্মীদের নিষিদ্ধ করে দেয়া, এবং সেই সাথে বাঙালি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের কারো কারো থেকে বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে থানায় নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করা - বাইরের রাজ্যে বাঙালির হেনস্তা, লাঞ্ছনা এবং হিংসাত্মক ঘটনার শিকার হবার এই ভিন্ন ভিন্ন ঘটনাগুলি আসলে সবই এক সর্বভারতীয় বাঙ্গালী বিদ্বেষের সুতোয় গাঁথা। 


কেন এই ক্রমবর্ধমান বাঙালি বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে? 


একে ব্যাখ্যা করতে সুলগ্না তুলে ধরেন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এন আর সি, সি এ এ, এন পি আর এর ভূমিকা। সাম্প্রতিককালে সর্বোচ্চ আলোচিত বিষয় সিএ এ আপাতদষ্টিতে মুসলিম বিরোধী হলেও এটি আদতে বাঙালি বিরোধী বলে তিনি মনে করেন বলে তিনি জানান। "হিন্দি আর উর্দু তো অনেকটাই সমান সমান। কখনো কি শুনেছেন কোনো হিন্দিভাষী র মুখের ভাষা শুনে তাকে পাকিস্তানি অপবাদে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কোন রাজ্য থেকে বা হেনস্তা করা হচ্ছে? আপনার মুখের ভাষাতেই আপনি ভারতের যেকোনো কোনায় হয়ে যাচ্ছেন অবৈধ বিদেশি অনুপ্রবেশকারী। কেউ কিন্তু আপনার ধর্ম দেখতে যাচ্ছে না। ওদের কাছে আপনার একমাত্র পরিচয় আপনার মুখের ভাষা," উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন তিনি। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাতে বহিরাগতদের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে বাইরের রাজ্যে কর্মরত বাঙ্গালীদের সুরক্ষা কমবে না বাড়বে বলে তিনি মনে করেন বলেও জানান। 


প্রতিবাদ জমায়েতে  উপস্থিত ছিলেন বঙ্গ ব্রিগেড সংগঠনের সভাপতি এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের দীর্ঘ দিনের দৈনিক কেশব মুখোপাধ্যায়। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ ই বোধহয় ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে স্থানীয় ভাষা না জানলেও স্বচ্ছন্দে চাকরি করে ব্যবসা করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেঁচে-বর্তে কাটিয়ে দেওয়া যায়।" বাঙালি পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে পারলে তবেই সে বাকি ভারতে সম্মান পাবে বলে মনে করেন বলে জানান কেশব বাবু। 


ঐক্য যোদ্ধা গৌতম সরকার এর কণ্ঠে ও ছিল আক্ষেপের সুর, "বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অথচ স্বাধীনতা সংগ্রামে সব থেকে বেশি রক্ত দিয়েছে বাঙালি।" এই সুরে সুর মিলিয়ে ঐক্য যোদ্ধা বীরেশ্বর দাশগুপ্ত বলেন, "বহুদিন ধরে বাঙালিকে বাংলার বাইরে হেনস্থা হতে হচ্ছে। বাঙালির এক জোট হবার সময় এসেছে।" বাঙালি সমাজের বিশ্ব মানবিক চেতনায় অনুপ্রাণিত অংশকে নিন্দা করে ঐক্য যোদ্ধা অভিজ্ঞান সাহা জানান, "আমরা ভাবতেই পারি সবাই ভারতীয়, কিন্তু অবাঙালি ভারতীয়রা সেই ভাবে ভাবে না। তাদের কাছে আপনি বাংলাদেশি, আপনি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তাই বাঙালি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হোন।"


ঐক্য যোদ্ধাদের বক্তব্য শুনে এগিয়ে আসেন অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এর সামনে উপস্থিত শ্রোতামন্ডলীর একাংশ। উপস্থিত বাঙালি জনতার বেশিরভাগই বাঙালির ঐক্যবদ্ধ হবার প্রয়োজন এর সাথে সহমত পোষণ করেন।


সোমবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী বাঙালি শ্রমিককে বাইরের রাজ্যে "বহিরাগত" অপবাদে মারধর এর এই ঘটনার প্রতিবাদে এখনো পর্যন্ত এগিয়ে আসেননি অন্য কোন বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন অথবা রাজনৈতিক দল।