রবীন মজুমদার,দক্ষিণ ২৪ পরগনাঃ বৃহস্পতিবার সকালে সোনারপুরের রায়পুর দিঘীরপাড় এলাকার ঘটনা। মৃতের নাম নারায়ন বিশ্বাস (‌৪২)‌। তার বাড়ি ওই এলাকাতেই। বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। 

সাত সকালেই গুলির আওয়াজ ও খুনের ঘটনায় ওই এলাকায় প্রবল চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে সোনারপুর থানার পুলিশ আসে। পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধারের চেষ্টা করে। কিন্তু এলাকার মানুষ দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের দাবি খুনীদের ধরতে হবে। পরে স্পেশাল অপারেশান গ্রুপের পুলিশের চেষ্টায় পুলিশদেহ উদ্ধার করে। দেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। কি কারনে এই খুন তা নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে জল্পনার  শুরু হয়েছে।

তবে খুনীদের নৃশংসতা দেখে পুলিশের মনে হয়েছে 'প্রবল আক্রোশের বশেই নারায়ন বিশ্বাসকে খুন করা হয়েছে।' নারায়ণ বাবু বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের BJMTU মন্ডল সভাপতি বলে দাবি করেছেন বিজেপির জেলা ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি বিশ্বজিৎ বড়ুয়া। 

স্থানীয় মানুষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে- 'এদিন সকালে নারায়নবাবু বাড়ির কাছেই বাগান বাড়িতে কুকুরদের খাওয়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর পরিচিত বরুন গায়েন মাঠে কাজ করছিলেন। বরুনকে কাজ করতে বলে নারায়ন কুকুরদের খাওয়াতে যান। সেই সময়ই ৪ দুষ্কৃতী এসে তাঁর ওপর আক্রমন চালায় এবং গুলি ছুঁড়তে থাকে। তাদের একজনের মুখ বাঁধা থাকলেও বাকিদের মুখ খোলা ছিল। নারায়নের মোটর বাইকে বসেই তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। নারায়ন প্রাণ বাঁচাতে ধান খেত দিয়ে ছুটে পালাতে যায়। সেই সময়ই তাকে ধরে ফেলে দুষ্কৃতীরা। তার গলা ও মুখ মিলিয়ে ৩ টি কোপ বসায়। তারপর চলে যায়। নারায়নের সঙ্গী বরুনকে তাড়া করে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই সঙ্গীই নারায়নের বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানায়। পরিবারের লোকজন ছুটে এসে দেখেন খেতের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে নারায়ন। ঘটনার
প্রত্যক্ষদর্শী বরুন গায়েন জানান, দুষ্কৃতীদের মধ্যে এক জনের মুখই গামছায় ঢাকা ছিল। আগ্নেয় অস্ত্র থেকে ৪ রাউন্ড গুলিও চালান হয়েছিল। চপার দিয়ে কোপানো হয়।'

জেলার পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান জানান, 'ওই ব্যক্তি জমি কেনা বেচার কারবার করতেন। এক জমি বহুজনকে বিক্রি করার একাধিক অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। বেশ কয়েকবার সেই অভিযোগে গ্রেপ্তারও হয়েছিল ওই ব্যক্তি। এছাড়া আগ্নেয় অস্ত্র সহও তাকে কয়েক মাস আগে গ্রেপ্তার করেছিল সোনারপুর থানার পুলিশ। একটি খুনের মামলাতেও তার নাম রয়েছে। স্থানীয় মানুষ জানান, আগেও বেশ কয়েকবার নারায়নের ওপর হামলা হয়েছিল। একবার তার হাতে গুলি লেগেছিল। একবার পেটে ছুরিও খেয়েছিল নারায়ন। একটি তেল কোম্পানীতে কাজের পাশাপাশি নারায়ন জমির কারাবারও করত।

তার স্ত্রী এবং এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। পরিবারের তরফে মেয়ে প্রিয়া বিশ্বাস ৬ জনের বিরুদ্ধে   সোনারপুর থানায় অভিযোগ করেছে। পুলিশ  খুনের মামলা শুরু করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী দুজনকে আটক করে পুলিশ জেরা করছে। এদিকে সোনারপুরে পর পর শুট আউটের ঘটনা ঘটায় এলাকার মানুষ আইন শৃঙ্খলার এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।