Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

খামার সিতাই শিবমন্দির হয়ে উঠতে পারে পর্যটনের জায়গা



খামার সিতাই শিবমন্দির হয়ে উঠতে পারে পর্যটনের জায়গা 
শুভাশিস দাশ 


ঐতিহাসিক মর্যাদা সম্পন্ন কোচবিহার জেলায় একটি শৈব তীর্থ আছে যা আজও অনেকের অজানা থেকেই গেছে l এই জেলার একটি  ব্লক সিতাই । 

সিতাই অঞ্চল এখনো তামাক চাষে জেলার মধ্যে সেরা । কৃষি নির্ভর এই এলাকায় একটা সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল ফলে এই অঞ্চলে উন্নয়ন তেমন পরিলক্ষিত হয় নি । একেবারে সীমান্ত বর্তী অত্যন্ত প্রান্তিক জনপদ lএই সিতাই যেতে হলে দিনহাটা থেকে পশ্চিমে মাইল পনের আদাবাড়ি ঘাট এবং তাঁর পর সিংগীজানি নদী l আর এই জনপদেই রয়েছে খামার সীতাই শিবমন্দির lঐতিহাসিক ভৌগোলিক অবস্থানে এই সীতাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ l কামতাপুররাজের শাসন কেন্দ্র ছিল সিতাই এর কাছে গোসানীমারিতে l সিতাই বন্দরের মূল কেন্দ্র থেকে মাইল খানিক পশ্চিমে অবস্থিত খামার সিতাই গ্রামে এই শিব মন্দিরটি অবস্থিত l স্থানীয় মানুষজন যাঁকে পুরাতন বুড়া শিব বা বুড়া শিব বাড়ি বলে থাকেন l মন্দিরের আদল দেখেই বোঝা যায় এটি প্রাচীন নিদর্শন l মন্দিরের গঠন শৈলী দেখে এর প্রাচীনত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় l জনশ্রুতি আছে জল্পেশ ও বাণেশ্বর শিবমন্দির প্রতিষ্ঠার সময় এর নির্মাণ হয়েছে l মহারাজা প্রাণ নারায়ণ এর ৩৯ বছর কোচবিহারের রাজত্বকালে বাণেশ্বর শিবমন্দির ও খামার  সিতাই শিব মন্দির টি প্রতিষ্ঠিত হয় বলে কথিত আছে । 

 প্রাণ নারায়ণের রাজত্ব কাল ছিল ১৬২৬ খৃ:থেকে ১৬৬৫ খৃ: পর্যন্ত l
খামারসিতাই শিবমন্দির টির পশ্চিমদুয়ারি একটি দরজা l মন্দিরের চারপাশ বারান্দা এবং মন্দিরটি গম্বুজাকার ,দেখতে অনেকটা কচ্ছপের পিঠের মতো l এই কীর্তি দেখে মুঘল আমলের স্থাপত্য রীতির পরিচয় মেলে l উচ্চতা প্রায় কুড়ি ফুট দৈর্ঘ্যে এগারো ফুট এবং প্রস্থে দশ ফুট l
কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট এর অধীনে এই মন্দির টি l
মন্দিরের ভিতরে বিশালাকার শিবলিঙ্গ l দীর্ঘদিন এই মন্দিরটি অবহেলিত থাকার ফলে নতুন সংস্কারে এর প্রাচীন কিছু শৈলী নষ্ট হয়ে গেছে l এই মন্দিরের পাশে একটি পুরনো দীঘিও রয়েছে । 

অনেকটা বানেশ্বর শিব মন্দির সংলগ্ন পুকুরের মত । তবে এখানে কচ্ছপ নেই । 
খামার সিতাই শিবমন্দিরটি দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বছর অনাদরে পড়ে ছিল পরবর্তী সময়ে ২০০৭সালে সেসময়ের সীতাই ব্লকের বিডিও সাহেব অশ্বিনী কুমার রায় ও সমাজসেবী হরিপদ মন্ডল এবং স্থানীয় কিছু ভক্তপ্রাণ মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় আবার এই মন্দির জেগে ওঠে এক মিলন মেলার মাধ্যমে l 

এরপর থেকে এখানে নিত্য পুজো হয় । শ্রাবণ ও ফাল্গুন মাস জুড়ে চলে ভক্তদের যাতায়াত । 

এই মেলাকে কেন্দ্র করে এই জনপদে এক সাংস্কৃতিক বাতাবরণ তৈরি হয়েছে l
ফাল্গুন মাসে বোল ব্যোম করতে খামার সীতাই শিবমন্দির এর বাবার মাথায় জল ঢালতে যাওয়া যেতেই পারে । 
সিংগিমারি নদীর উপর তৈরি হয়েছে সেতু । এখন দিনহাটা থেকে যাওয়া অনেকটাই সুবিধা হয়েছে । কোচবিহার থেকে 


শীতলখুচি হয়ে সিতাই যাওয়া যায় । 

উত্তরবঙ্গের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান । পর্যটন শিল্পে একটা বড় জায়গা করে নিয়েছে এই উত্তরবঙ্গ । এখন যোগাযোগ ব্যাবস্থা অনেকটাই ভালো । 

এই কোচবিহার জেলার বানেশ্বর , ধলুয়া বাড়ি সিদ্ধিনাথের মন্দির যে ভাবে প্রচারের আলোয় এসেছে এবং এখানে পর্যটকরা উত্সব ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময় আসেন সেভাবে কিন্তু খামার সিতাই শিব মন্দির জনসমুখে আসেনি । 

ঐতিহাসিক নিরিখে এই মন্দিরও সেই রাজ আমলের । এই মন্দিরকে ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতেই পারে ! 

কৃষি নির্ভর এই জনপদের মানুষের জীবন যাত্রার মান খুব একটা আশা ব্যঞ্জক নয় । এই শৈবতীর্থ কে ঘিরে এখানে যদি সরকারি উদ্যোগে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠে তবে এই প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী জনপদের আর্থ সামাজিক চেহারা পাল্টে যাবে এটা বলা যেতেই পারে । 

একটা সময় এই অঞ্চলে যোগযোগ ব্যাবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ । দিনহাটা থেকে সিতাই যেতে ভরসা করতে হতো নৌকো । বর্ষা এলে প্রাণ হাতে করে সিংগিমারি নদী পারাপার করতে হতো । এখন এই নদীর উপর পাকা সেতু হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে । 

উত্তরবঙ্গের এই দুর্বল অর্থনীতির জনপদে গড়ে উঠুক পর্যটন শিল্প এই ঐতিহাসিক শৈব তীর্থকে ঘিরে এটা এই অঞ্চলের মানুষের অনেকদিনের দাবি ।

Ad Code