খামার সিতাই শিবমন্দির হয়ে উঠতে পারে পর্যটনের জায়গা 
শুভাশিস দাশ 


ঐতিহাসিক মর্যাদা সম্পন্ন কোচবিহার জেলায় একটি শৈব তীর্থ আছে যা আজও অনেকের অজানা থেকেই গেছে l এই জেলার একটি  ব্লক সিতাই । 

সিতাই অঞ্চল এখনো তামাক চাষে জেলার মধ্যে সেরা । কৃষি নির্ভর এই এলাকায় একটা সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল ফলে এই অঞ্চলে উন্নয়ন তেমন পরিলক্ষিত হয় নি । একেবারে সীমান্ত বর্তী অত্যন্ত প্রান্তিক জনপদ lএই সিতাই যেতে হলে দিনহাটা থেকে পশ্চিমে মাইল পনের আদাবাড়ি ঘাট এবং তাঁর পর সিংগীজানি নদী l আর এই জনপদেই রয়েছে খামার সীতাই শিবমন্দির lঐতিহাসিক ভৌগোলিক অবস্থানে এই সীতাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ l কামতাপুররাজের শাসন কেন্দ্র ছিল সিতাই এর কাছে গোসানীমারিতে l সিতাই বন্দরের মূল কেন্দ্র থেকে মাইল খানিক পশ্চিমে অবস্থিত খামার সিতাই গ্রামে এই শিব মন্দিরটি অবস্থিত l স্থানীয় মানুষজন যাঁকে পুরাতন বুড়া শিব বা বুড়া শিব বাড়ি বলে থাকেন l মন্দিরের আদল দেখেই বোঝা যায় এটি প্রাচীন নিদর্শন l মন্দিরের গঠন শৈলী দেখে এর প্রাচীনত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় l জনশ্রুতি আছে জল্পেশ ও বাণেশ্বর শিবমন্দির প্রতিষ্ঠার সময় এর নির্মাণ হয়েছে l মহারাজা প্রাণ নারায়ণ এর ৩৯ বছর কোচবিহারের রাজত্বকালে বাণেশ্বর শিবমন্দির ও খামার  সিতাই শিব মন্দির টি প্রতিষ্ঠিত হয় বলে কথিত আছে । 

 প্রাণ নারায়ণের রাজত্ব কাল ছিল ১৬২৬ খৃ:থেকে ১৬৬৫ খৃ: পর্যন্ত l
খামারসিতাই শিবমন্দির টির পশ্চিমদুয়ারি একটি দরজা l মন্দিরের চারপাশ বারান্দা এবং মন্দিরটি গম্বুজাকার ,দেখতে অনেকটা কচ্ছপের পিঠের মতো l এই কীর্তি দেখে মুঘল আমলের স্থাপত্য রীতির পরিচয় মেলে l উচ্চতা প্রায় কুড়ি ফুট দৈর্ঘ্যে এগারো ফুট এবং প্রস্থে দশ ফুট l
কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট এর অধীনে এই মন্দির টি l
মন্দিরের ভিতরে বিশালাকার শিবলিঙ্গ l দীর্ঘদিন এই মন্দিরটি অবহেলিত থাকার ফলে নতুন সংস্কারে এর প্রাচীন কিছু শৈলী নষ্ট হয়ে গেছে l এই মন্দিরের পাশে একটি পুরনো দীঘিও রয়েছে । 

অনেকটা বানেশ্বর শিব মন্দির সংলগ্ন পুকুরের মত । তবে এখানে কচ্ছপ নেই । 
খামার সিতাই শিবমন্দিরটি দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বছর অনাদরে পড়ে ছিল পরবর্তী সময়ে ২০০৭সালে সেসময়ের সীতাই ব্লকের বিডিও সাহেব অশ্বিনী কুমার রায় ও সমাজসেবী হরিপদ মন্ডল এবং স্থানীয় কিছু ভক্তপ্রাণ মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় আবার এই মন্দির জেগে ওঠে এক মিলন মেলার মাধ্যমে l 

এরপর থেকে এখানে নিত্য পুজো হয় । শ্রাবণ ও ফাল্গুন মাস জুড়ে চলে ভক্তদের যাতায়াত । 

এই মেলাকে কেন্দ্র করে এই জনপদে এক সাংস্কৃতিক বাতাবরণ তৈরি হয়েছে l
ফাল্গুন মাসে বোল ব্যোম করতে খামার সীতাই শিবমন্দির এর বাবার মাথায় জল ঢালতে যাওয়া যেতেই পারে । 
সিংগিমারি নদীর উপর তৈরি হয়েছে সেতু । এখন দিনহাটা থেকে যাওয়া অনেকটাই সুবিধা হয়েছে । কোচবিহার থেকে 


শীতলখুচি হয়ে সিতাই যাওয়া যায় । 

উত্তরবঙ্গের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান । পর্যটন শিল্পে একটা বড় জায়গা করে নিয়েছে এই উত্তরবঙ্গ । এখন যোগাযোগ ব্যাবস্থা অনেকটাই ভালো । 

এই কোচবিহার জেলার বানেশ্বর , ধলুয়া বাড়ি সিদ্ধিনাথের মন্দির যে ভাবে প্রচারের আলোয় এসেছে এবং এখানে পর্যটকরা উত্সব ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময় আসেন সেভাবে কিন্তু খামার সিতাই শিব মন্দির জনসমুখে আসেনি । 

ঐতিহাসিক নিরিখে এই মন্দিরও সেই রাজ আমলের । এই মন্দিরকে ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতেই পারে ! 

কৃষি নির্ভর এই জনপদের মানুষের জীবন যাত্রার মান খুব একটা আশা ব্যঞ্জক নয় । এই শৈবতীর্থ কে ঘিরে এখানে যদি সরকারি উদ্যোগে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠে তবে এই প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী জনপদের আর্থ সামাজিক চেহারা পাল্টে যাবে এটা বলা যেতেই পারে । 

একটা সময় এই অঞ্চলে যোগযোগ ব্যাবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ । দিনহাটা থেকে সিতাই যেতে ভরসা করতে হতো নৌকো । বর্ষা এলে প্রাণ হাতে করে সিংগিমারি নদী পারাপার করতে হতো । এখন এই নদীর উপর পাকা সেতু হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে । 

উত্তরবঙ্গের এই দুর্বল অর্থনীতির জনপদে গড়ে উঠুক পর্যটন শিল্প এই ঐতিহাসিক শৈব তীর্থকে ঘিরে এটা এই অঞ্চলের মানুষের অনেকদিনের দাবি ।