ইতিমধ্যে উচ্চপ্রাথমিকের মেধাতালিকা নিয়ে অভিযোগ জানাতে আচার্য সদনে উপস্থিত হয়েছে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী। 2015 সালের অগাস্ট মাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল, 2016 সালে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলেও আটকে পড়ে মামলায় তাই দীর্ঘ দুই বছর পর অর্থাত 2018 সালে ইন্টারভিউয়ের জন্য ভেরিফিকেশন পর্ব শুরু করে স্কুল শিক্ষা কমিশন৷ 2019 সাল থেকে শুরু হয় ইন্টারভিউ নেওয়া। কয়েকটি কাউন্সিলিংয়ের পর তবুও অব্যাহত প্রোসেস।
এক মামলার শুনানিতে সাত দিনের মধ্যে উচ্চ প্রাথমিকের মেধা তালিকার প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করতে কমিশনকে নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য৷ সেখানে তিনি সাফ নির্দেশ দিয়েছেন, মেধা তালিকায় টেটে প্রাপ্ত নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন ও মৌখিক পরীক্ষায় কোন প্রার্থী কত নম্বার পেয়েছে, তার তালিকাও তুলে ধরতে হবে৷ এই চার স্তরের নম্বরের যোগফল উল্লেখ করতে বলা হয়েছে কমিশনকে৷ এমনকি আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এই নিয়োগ প্রক্রিয়া করতেও নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে৷ 

কিন্তু তালিকা প্রকাশ করেই নিয়োগ করা যাবে না। ২১ দিন সময় দিতে হবে। সেই তালিকা দেখে কোনও প্রার্থীর আপত্তি থাকলে, সেটা তিনি যাতে এসএসসিতে লিখিতভাবে জানানোর সুযোগ পান, সেইজন্যই সময় চাওয়া হয়।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে মেধাতালিকা প্রকাশ করে কমিশন।
আর এরপরেই উঠে আসে  একাধিক অভিযোগ। যে অভিযোগ গুলো মুলত সামনে এসেছে-
১) যারা ঘুষ দিয়েছে তাদের নাম আছে লিস্টে।১০/১২/১৪/১৬ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছে কেউ কেউ।
২) টেটের নম্বর বেড়ে হয়েছে ১০৩>১২০, ১০৪>১২২, ১০১>১৪০, ৯২>১০৮(ইতিহাস)
৩) ট্রেইন্ড নয় অথচ নাম আছে
৪)৯০/৯৫ পেয়েও নাম আছে। বাংলা জেনারেল মেল/ফিমেল
৫) ভাইভার নম্বর ইচ্ছেমতো পরে কম্পিউটারে বসানো হয়েছে।
৬) ভাইভায় কেন্ডিডেটের পরীক্ষা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রচুর নম্বর পেয়েছে।
৭) সরকার ইচ্ছে করে এমন লিস্ট দিয়েছে যাতে কেস হয়ে লিস্ট বাতিল হয়।

এরই প্রতিবাদে সল্টলেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসে আগামী কাল অর্থাৎ ১৮-ই অক্টোবর, স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ।
এই ব্যাপারে রাজ্যের বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘শুধু আপার প্রাইমারীতে নয়, ২০১১ সালের পর এ রাজ্যে যতগুলো নিয়োগ হয়েছে সব গুলোতেই ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তবে বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি পাহাড় সমান। আমরা এই ব্যাপারে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি এবং অনেক দুর্নীতি তুলে ধরেছে। স্কুল সার্ভিস কমিশন আদালতে জানিয়েছিল যে তাঁরা ত্রুটিমুক্ত মেরিট লিস্ট বের করবে। কিন্তু দেখা গেল দুর্নীতি ব্যাপক হারে ধারণ করেছে। আমার কাছে বহু চাকরি প্রার্থী আসছেন, তাঁরা বলছেন তাঁদের যা মানদন্ড সেই হিসাবে এসএসসি সুবিচার করেনি। কমিশন এতটাই দুর্নীতি করেছে যে তাঁরা সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের ভরসা দিতে পারছেন না। মেরিট লিস্ট লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ইন্টার্ভিউতে একই নম্বর অন্তত কয়েকশো জন পেয়েছেন, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে কি হারে দুর্নীতি হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে ইন্টার্ভিউটা এক লোক দেখানো। এর মাধ্যমেই হয়তো তারা লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করছে। এখন সাধারণ মানুষের ধারণ এছাড়া চাকরি প্রার্থীদের ধারণা টাকা না দিলে চাকরি হবে না। এই যে মনোভাব তৈরি হয়েছে তা দূর করার জন্য যে সচ্ছতা নিয়ে সার্ভিস কমিশনের কাজ করার দরকার ছিল তারা সেটা করতে পারছেন না। এটা খুব দুঃখের কারণ আমরা ইতি পূর্বেই দেখেছি পশ্চিমবঙ্গে বহুবার এসএসসির মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে। আগেও ভুল ত্রুটি হয়েছে কিন্তু এরকম দুর্নীতির অভিযোগ কখনো ওঠেনি।’


শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সম্পাদক মইদুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আগামিকাল উচ্চপ্রাথমিক নিয়োগ নিয়ে SSC অভিযান কর্মসুচীর অনুমতির জন্য হাইকোর্ট আজ লিভ পিটিশন গ্রহণ করেছে৷ ব্যাপক জমায়েত করুন।’