আছির আলী, সহ-সম্পাদকঃ
ভারতের ইতিহাস সৃষ্টির এক অনন্য ইতিহাস। যার ইতিহাসের প্রতিটি পদে পদে মিশে আছে একেকজন মহান ব্যাক্তিত্বের কাহিনী। আর এই রকমই একজন মহান ব্যাক্তি গান্ধীজী । যুগে যুগে বহু মানুষ আসেন যাদের দায়িত্ব, ভূমিকা, কর্তব্য, নিষ্ঠা প্রতিটি বস্তুই ভিন্ন ভিন্ন। আর এমন কিছু মানুষের জন্ম হয় যাদের নেতৃত্ব, দর্শন বদলে দেয় গোটা দুনিয়াকে। মানুষের মনে জন্ম নেয় স্বধীনতা। অন্ধকারের মাঝে তারা সৃষ্টি হয় আলোক মশাল রূপে। নতুনত্বের জন্মদেন, নতু চিন্তাধারার উন্মোচন করান। তেমনি একজন কিংবদন্তি হলেন মহাত্মা গান্ধী। যার হাত ধরেই ভারতে স্বধীনতার সূচনা হয়েছে, তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে ব্রিটিশ শাসন।
সম্পুর্ন নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। সমার্থক বিশেষিত নাম- মহাত্মা, মহাত্মা গান্ধী, বাপুজী, গান্ধিজী। ভারত নামক রাষ্ট্রের জনক হিসাবে স্বীকৃত। ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২রা অক্টোবর ভারতের গুজরাটের সমুদ্র-উপকূলীয় শহরে পোরবন্দরের পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন হিন্দু মোধ গোষ্ঠীর। তিনি পোরবন্দর রাজ্যের দেওয়ান ছিলেন। মায়ের নাম পুতলি বাই। তিনি ছিলেন প্রণামী বৈষ্ণব গোষ্ঠীর কন্যা এবং করমচাঁদের চতুর্থ স্ত্রী। উল্লেখ্য করমচাঁদের এঁর আগের তিন স্ত্রী সন্তান প্রসবকালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবা মায়ের পছন্দে ১৪ বৎসর বয়সী কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে (কস্তুর বাই নামে পরিচিত ছিলেন) বিয়ে করেন। এঁদের চার পুত্র সন্তান জন্মেছিল। এঁদের নাম ছিল যথাক্রমে– হরিলাল গান্ধী (জন্ম ১৮৮৮), মনিলাল গান্ধী (জন্ম ১৮৯২), রামদাস গান্ধী (জন্ম ১৮৯৭) এবং দেবদাস গান্ধী (জন্ম ১৯০০) সালে।
২ অক্টোবর ভারতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কল্যান কর্মসূচির মাধ্যমে তার প্রতি নিবেদন করা হয় বিনম্র শ্রদ্ধা। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে। ভারতে এ দিনটিকে গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে পালন করা হয়। গান্ধীর জন্মদিনে থাকে সরকারি ছুটি এবং গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। ভারতসহ গোটা বিশ্বে তিনি মহাত্মা এবং বাপু বা বাবা নামে পরিচিত। ভারত সরকার মহাত্মা গান্ধীকে ভারতের জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেছে।২০০৭ সালের ১৫ জুন জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘের সব সদস্য দেশ এ দিবস পালনে সম্মতি জ্ঞাপন করে। একজন শিক্ষিত ব্রিটিশ আইনজীবী হিসেবে, গান্ধী প্রথম তাঁর অহিংস শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন।
মহত্মা গান্ধী ছিলেন আইনের ছাত্র। তাই প্রথমে তিনি বোম্বাই আদলতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু লাজুক থাকার কারণে তিনি এই আদালতে বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেন নি। এরপর তিনি রাজকোটে ফিরে আসেন। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে তিনি এক বছরের জন্য Dada Abdulla & Co. নামক একটি ভারতীয় কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নাটালে যান। এই কোম্পানির অংশীদার আব্দুল করিম জাভেরি তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত অফিসের মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন। এরপর প্রায় ২১ বৎসর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতে কাটান। তিনি নাটালের সুপ্রিম কোর্টে সর্বপ্রথম ভারতীয় আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। সেসময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের ভোটাধিকার ছিল না। এই অধিকার আদায়ের বিল উত্থাপিত হলে, তা আদালত বাতিল করে দেয়। এই বিষয়টির সূত্রে তিনি সে সেদেশের ভারতীয়দেরকে অধিকার সচেতন করে তুলেছিল। ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর নেতৃত্বে নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে প্রথমেই তিনি ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শেতাঙ্গদের বৈষম্য আচরণ লক্ষ্য করেন। ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে কিছু ঘটনায় তাঁকে ক্রমে ক্রমে প্রতিবাদী করে তোলে। এখানে তিনি একদিন ডারবানের আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট তার পাগড়ি সরিয়ে ফেলতে বলেন। গান্ধী তা অগ্রাহ্য করেন এবং এই কারণে আদালত কক্ষ থেকে ক্ষোভে বেরিয়ে পড়েন। পিটার ম্যারিজবার্গের একটি ট্রেনের ভ্রমণ করার সময় প্রথম শ্রেণীর বৈধ টিকিট থাকা স্বত্ত্বেও, প্রথম শ্রেণীর কামড়া থেকে তৃতীয় শ্রেণীর কামড়ায় যেতে বাধ্য করা হয়। স্টেজকোচে ভ্রমণের সময় এক ইউরোপীয় যাত্রীকে জায়গা না দেওয়ার জন্য করে দেয়ার জন্য, তাঁকে ফুট বোর্ডে চড়তে বলা হলে।
১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতে সংক্ষিপ্ত সফর করেন। এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের অধিকার নিয়ে ভারতে আন্দোলন করেন। এই কারণে ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে জানুয়ারিতে যখন তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আবার দক্ষিণ আফ্রিকা যান, তখন এই সময় প্রবাসী ভারতীয়দের দ্বারা নেতা হিসাবে সম্বর্ধনা পান। এই সময় এক দল শ্বেতাঙ্গ তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। গান্ধী উদারতা দেখিয়ে এদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেশ করেন নি।
১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বেয়ার যুদ্ধের সময় তিনি ভারতীয়দের দ্বারা একটি এ্যাম্বুলেন্স বাহিনী গঠন করেন। এই কারণে তিনি যুদ্ধ পদক লাভ করেন।
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। এই সময় ট্র্যান্সভালে এশীয়দের বিরুদ্ধে আইন প্রবর্তনের বিপক্ষে আন্দোলন করেন। এই কারণে ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রবাসী ভারতীয়দের দ্বারা অনুরুদ্ধ হয়ে, আবার তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যান। এবার তিনি ট্র্যান্সভালে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জোহান্সবার্গে প্লেগ দেখা দিলে তিনি একটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে জুলু বিদ্রোহ শুরু হলে, আহতদের সেবার জন্য একটি ভারতীয় বাহিনী তৈরি করে, সেবা প্রদান করেন।
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে ট্র্যান্সভাল সরকার উপনিবেশের ভারতীয়দের নিবন্ধনে বাধ্য করানোর জন্য একটি আইন পাশ করে। ১১ই সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গের এক সভায় তিনি সবাইকে এই আইন বর্জন করতে বলেন। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে নিষ্ক্রিয় আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এ সময় আইন অম্যান্য করা, নিজেদের নিবন্ধন কার্ড পুড়িয়ে ফেলাসহ বিভিন্ন কারণে অনেক ভারতীয়কে বন্দী করা হয়। একই কারণে অনেক ভারতীয় হতাহত হন। শান্তিকামী ভারতীয়দের উপর এরূপ নিপীড়নমূলক আচরণের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকারর স্থানীয় সাধারণ মানুষও প্রতিবাদ করা শুরু করে। সরকার ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে ট্র্যান্সভাল ত্যাগ করার জন্য আদেশ জারি করে। কিন্তু তিনি এই আদেশ অগ্রাহ্য করলে, তাঁর দুই মাসের কারাদণ্ড হয়। পরে জেনারেল স্মার্টস তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে একটি আপোষ রফায় আসেন এবং তাঁর কারাদণ্ডাদেশ প্রত্যাহার করেন। এই আপোষের কারণে ক্ষুব্ধ ভারতীয় পাঠানরা তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেন। পরে স্মার্টস তাঁর আপোষ নাকচ করলে, তিনি পুনরায় নিষ্ক্রিয় আন্দোলন শুরু করেন। এই কারণে তিনি দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন।
স্বাধীনতার সূচনা গান্ধীজী
নিজের দেশ থেকে অপরের কর্তৃত্ব বিলীন করার নামই শুধু স্বাধীনতা নয়, এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় অনেক আগে থেকে। সে কাজটিই করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। ১৯১৮ সালের চম্পারন বিক্ষোভ এবং খেদা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে তাঁর প্রথম অর্জন ঘটে। সে সময় মারাত্মক দুর্ভিক্ষের মাঝে ব্রিটিশরা একটি শোষণমূলক কর চালু করে এবং তা বাড়ানোর চেষ্টা চলে। এতে পরিস্থিতি প্রচণ্ড অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। তখন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের জড়ো করে গ্রামবাসীর জন্য আশ্রম তৈরি করা হয়। গান্ধী জমিদারদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত বিক্ষোভ এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বরাজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন সংবিধান গ্রহণ করেন। ১৯২২ সালের ১০ মার্চ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শাস্তির দুই বছরের মাথায় তাকে আবার মুক্তিও দেয়। হিন্দু-মুসলিমের অহিংস আন্দোলন চলাকালীন সৌহার্দ্যের ভাঙন ধরে। বিরোধ মেটাতে ১৯২৪ সালের শরৎকালে তিন সপ্তাহের অনশন করেন। স্বরাজ পার্টি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মাঝে বাধা দূর করতে চেষ্টা করেন। অস্পৃশ্যতা, মদপান, অবজ্ঞা এবং দরিদ্রতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। ১৯২৮ সালে তিনি আবার সামনে এগিয়ে আসেন। এর আগের বছর ব্রিটিশ সরকার স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে একটি নতুন সংবিধান সংশোধনী কমিশন গঠন করে। গান্ধী কলকাতা কংগ্রেসে ১৯২৮ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান, অন্যথায় নতুন অহিংস নীতির পাশাপাশি পূর্ণ স্বাধীনতার হুমকি দেন।
তাঁর ৭ মূলনীতি
সত্য : নিজের জীবনকে সত্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং নিজের ওপর নিরীক্ষা চালিয়ে তা অর্জন করেছিলেন।
অহিংসা : গান্ধী জীবনীতে বলেন, ‘যখন আমি হতাশ হই, আমি স্মরণ করি সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালোবাসার জয় হয়েছে। দুঃশাসক ও হত্যাকারীদের অপরাজেয় মনে হলেও শেষ সবসময়ই তাদের পতন ঘটে মনে রাখবেন।
নিরামিষভোজন : নিরামিষভোজনের ওপর ‘দি মোরাল বেসিস অব ভেজিটেরিয়ানিজম বইসহ বেশকিছু নিবন্ধ লেখেন। নিরামিষ খাওয়ার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও মাঝে মাঝে যোগ দেন। গান্ধীর মতে, নিরামিষ শুধু শরীরের চাহিদাই মেটাবে না, এটি মাংসের প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যও পূরণ করবে।
ব্রহ্মচর্য : স্ত্রীর সঙ্গে প্রণয়ের কিছু পর বাবার মৃত্যুর সংবাদ আসে। ঘটনা তাঁর কাছে দ্বিগুণ লজ্জার হয়ে যায়। এই কারণটি গান্ধীকে ৩৬ বছর বয়সে বিবাহিত থাকা অবস্থায় ব্রহ্মচারী হতে বাধ্য করে। গান্ধীর কাছে ব্রহ্মচর্যের অর্থ চিন্তা, বাক্য ও কর্মের নিয়ন্ত্রণ।
বিশ্বাস : একজন সাধারণ হিন্দু হিসেবে তিনি সব ধর্মকে সমানভাবে বিবেচনা করতেন। এই ধারণা থেকে বিচ্যুত করার সব প্রচেষ্টা প্রতিহত করেন। তিনি ব্রহ্মবাদে আগ্রহী ছিলেন এবং সব বড় ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
সরলতা : মহাত্মা গান্ধী প্রবলভাবে বিশ্বাস করতেন যে, সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি অবশ্যই সরল সাধারণ জীবন-যাপন করবে। তিনি নিজেও দক্ষিণ আফ্রিকায় যাপিত পশ্চিমা জীবনাচরণ ত্যাগ করার মাধ্যমে এর প্রমাণ দেন। এমন জীবনধারণ ব্যবস্থাকে শূন্যে নেমে যাওয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁর জীবনাচরণে ছিল অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলা, সাদামাটা জীবন-যাপন গ্রহণ এবং নিজের কাপড় নিজে ধোয়া।
লেখায় পারদর্শী গান্ধীজীঃ
বহুমুখী লেখায় পারদর্শী মহাত্মা গান্ধী সম্পাদনা করেছেন গুজরাটি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার পত্রিকা ‘হরিজন’। তাঁর সম্পাদনায় গুজরাটি ভাষার মাসিকপত্র নবজীবন প্রকাশিত হতো। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন ইন্ডিয়ান অপিনিয়ন ও দেশে ফেরার পর ইয়ং ইন্ডিয়ার সম্পাদনা করেছেন। তাঁর লেখা চিঠি প্রতিদিনই কোনো না কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হতো।
বহুমুখী লেখায় পারদর্শী মহাত্মা গান্ধী সম্পাদনা করেছেন গুজরাটি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার পত্রিকা ‘হরিজন’। তাঁর সম্পাদনায় গুজরাটি ভাষার মাসিকপত্র নবজীবন প্রকাশিত হতো। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন ইন্ডিয়ান অপিনিয়ন ও দেশে ফেরার পর ইয়ং ইন্ডিয়ার সম্পাদনা করেছেন। তাঁর লেখা চিঠি প্রতিদিনই কোনো না কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হতো।
গান্ধীর বেশকিছু বইয়ের মধ্যে রয়েছে আত্মজীবনী, সত্যের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতার গল্প। দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রাম নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ স্বাধিকার বিষয়ে মেনিফেস্টো হিন্দি স্বরাজ ও গুজরাটি ভাষায় জন রাসকিন-এর Unto This Last রয়েছে। এ ছাড়া নিরামিষভোজন বিষয়েও প্রচুর লেখা আছে। ১৯৬০ দশকে ভারত সরকার গান্ধীর রচনাবলি দ্য কালেক্টেড ওয়ার্ক অব মহাত্মা গান্ধী প্রকাশ করে। বইটি শতাধিক খণ্ডে প্রকাশিত হয়।
যেভাবে খুন হনঃ
দেশের মানুষের জন্য যারা জীবনের সব অর্জন উৎসর্গ করেন তাদের বলি হতে হয় নষ্টদের হাতে। তার প্রমাণ মহাত্মা গান্ধী নিজে। পশ্চাৎপদ ভারতীয়দের সামনে যিনি আলোর মশাল হাতে ছিলেন তাকেও ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি নয়াদিল্লিতে পথসভা করছিলেন। তাঁর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন একজন হিন্দু মৌলবাদী। নাথুরামের সঙ্গে চরমপন্থি হিন্দু মহাসভার যোগাযোগ ছিল। গডসে এবং সহায়তাকারী নারায়ণ আপতেকে পরবর্তীতে আইনের আওতায় এনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১৪ নভেম্বর তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়। নয়াদিল্লির রাজঘাটের স্মৃতিসৌধে লেখা ‘ও ঈশ্বর’ শব্দ দুটিকে গান্ধীর শেষ কথা বলে বিশ্বাস করা হয়। গান্ধীর ইচ্ছানুযায়ী তাঁর দেহভস্ম বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রধান নদী যেমন— নীল নদ, ভোলগা, টেমস প্রভৃতিতে ভাসানো হয়। এরপর তাঁর দেহভস্ম সেলফ রিয়ালাইজেশন ফেলোশিপ লেক স্রাইনের মহাত্মা গান্ধী বিশ্বশান্তি সৌধে একটি হাজার বছরের পুরনো চৈনিক পাথরের পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।
স্মরণীয় বাণী
>> জীবন নশ্বর, তাকে অমর করতে শেখো।
>> একজন মানুষ তার চিন্তার দ্বারা পরিচালিত, তার ভাবনার মতোই তার ভবিষ্যতের চেহারা হয়।
>> দুর্বল মানুষ ক্ষমাশীল হতে পারে না, ক্ষমা শক্তিমানের ধর্ম।
>> শক্তি দেহের ক্ষমতা থেকে আসে না, আসে মনের বলের মাধ্যমে।
>> কয়েক টন ব্যক্তিত্বের থেকে এক আউন্স ধৈর্য অনেক দামি।
>> চোখের বদলে চোখ গোটা বিশ্বকে অন্ধ করে দেবে।
>> লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টার মধ্যে সম্মান আছে, শুধু লক্ষ্যে পৌঁছানোর মধ্যে নয়।
>> নিজেকে পাল্টাও, নিজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
>> প্রতিদিন কিছু শেখো, প্রতিদিন পরিণত হও।
তথ্য সংগ্রহঃ
তথ্য সংগ্রহঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Mohandas_Karamchand_Gandhi
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊