চ্যাংরাবান্ধা । আনারুল ইসলাম প্রামাণিকঃ
১৯৭৭ সালে ভোটবাড়ির বাসিন্দা রত্নেশ্বরী দাইস্যা দুই বিঘা জমি ভোটবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয় এ দান করেন। সেই বার প্রথম মা ভান্ডানি পুজা চালু হয়।পূজার প্রথম ১৯৭৭ সালে উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নরেন রায়। প্রথম প্রধান ছিলেন সর্বেশ্বর রায়। রত্নেশ্বরী দাইস্যা ভূমিদাতা হিসাবে ঘোষণা দেন যে এই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান যিনি হবেন তিনি পদাধিকার বলে পুজা কমিটির সভাপতি। সেই সময় থেকে ১৯৭৮ সাল থাকে পুজার মারেয়ানির দায়িত্ব ভার নেন ভূমিদাতা রত্নেশ্বরী দাইস্যা নিজেই। তার পর প্রধানের দায়িত্ব ভার পড়ে মোহাম্মদ মফিজুদ্দিন প্রধান থাকাকালিন পুজার সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তিতে কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটলে ১৯৭৮ সালে। সেই সময় প্রধান হিসাবে নির্বাচনে নির্বাচিত হন শৈলেন্দ্র নাথ রায়, তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে পুজা ধীরে ধীরে বিশাল রূপ ধারণ করে।
এই পূজা নিয়ে লকোপ্রচলিত যে কাহিনী রয়েছে সেটি- মুলত জমিদার বাড়ির পূজায় যখন সাধারণ মানুষ দের প্রবেশ নিষেধ ছিল, তখন গ্রামের মানুষ, বন জঙ্গলে তাকে আটকে রেখে পুজা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান। মা দুর্গা বলেন আমি তো অসুর বধ করে কৈলাশ পথে যাত্রা করছি কি করে তোমাদে পুজা নিব।
মা দুর্গাকে ভক্তরা কিছুতেই ছেড়ে দিতে রাজি হন নি। তারা জানান আমরা জমিদার বাড়ির পুজাতে যেতে পারি নাই তাই জংগলের মাঝেই পূজা গ্রহণ করতে হবে। মা দুর্গা ভক্তদের অনুরোধ রক্ষার্থে জজ্ঞলের মাঝে পুজা গ্রহণ করেন। সাথে কার্তিক, গনেশ, লক্ষী, স্বসরস্বতী কে নেন এবং সিংহের পরিবর্তে বাঘের পীঠে চরে বনের মধ্যে পুজা গ্রহন করেন। সেই প্রচলিত প্রথায় আজও জাকজমক ভাবে পূজা হয়।
প্রতি বছর ভান্ডানি পূজা উপলক্ষ্যে তিন দিন ব্যাপী চলে মেলা। আনন্দময়ী মা দুর্গার আগমনে মানুষ ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেন। দশমীর দিন মাকে বিসর্জন দিয়ে বিষাদ পুর্ণ মনে অপেক্ষামান থাকেন আবার আসবে বলে। প্রতিমা দর্শনে আর শিশুদের কলরব হই চই করে নতুন জামা কাপড় পড়ে মন্ডপে প্রতিমা দর্শনে আনন্দ উপভোগ করেন। এই পুজা বনদুর্গার উদ্যোক্তাদের অনেকেই প্রয়াত হলেও নতুন প্রজন্মর নতুন নতুন প্রধানের ক্ষমতার বলে মেলা জাকজমক ভাবে গড়ে উঠে।
ভোটবাড়ি অঞ্চলের পাশে একটি ভান্ডানি বা বন দুর্গা ঠাকুরের মন্দির স্থাপিত হয়। পূজা উপলক্ষ্যে মেলা বসে। অসংখ্য দোকান পাঠ ভীড় জমে উঠে। বন দুর্গা বা মা ভান্ডানি রসদ দেবী। তার আশির্বাদে শস্য শ্যামলা হয়ে উঠে। এ বছর ৪২ তম পুজা কমিটির সভাপতি প্রধান মৃতুঞ্জয় সিংহ সরকার পুজার দিন করার পর চার দিন যাত্রা গান ও অর্ক্রেস্টার আয়োজন করেন। পূজা কমিটির সম্পাদক অজয় রায় সরকার প্রমুখ জানান এবার মা দূর্গাপুজায় গত বারের তুলনায় এবারের প্রচুর লোকের ভীড় জমে উঠেছে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊