ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে কখন সুতো কেটে গেছে টের পাইনি 
শুভাশিস দাশ 


শিল্পীর শিল্পী দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা কাল আসছেন । চারদিকে সাজ সাজ রব উঠেছে । বাজার ভর্তি কুশার অর্থাৎ আখ , জমবুড়া , আপেল সহ অনেক ফল । সাথে শোলার তৈরি কদম ফুল আর কাগজের মালা । 
দুচাকা তিন চাকা চার চাকা এবং বহু চাকার গাড়ি গুলোকে একটু ধুয়ে মুছে বাবার কাছে কিছুক্ষণের জন্য আশিস প্রার্থনা । 

কল মিল , দোকান যন্ত্রপাতি সব মিলে এক আরাধনা এই দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার কাছে । হরিশ ওঁরাও মুখ ভার করে বসে আছে বন্ধ চা বাগানের এক কোণে । হাঁড়িয়া খেয়েও ভুলতে পারেনা অভাবের তাড়নায় হারিয়ে যাওয়া বিশ্বকর্মা কে । কতই বয়স ছিল তার ? ঠিক এই দিনে বাগানে লক আউট ঘোষণা হয়েছিল । 

ব্রিজ ভেঙে পড়ে কত প্রাণ বলি হয়েছে আজ সেকথা দেব কে নাই বা জানালাম । কোথায় কী হচ্ছে তিনি সব জানলেও উত্তরবঙ্গ নিয়ে তাঁর কৌতূহলের শেষ নেই । তিনি জানেন বড্ড অবহেলা এই বঙ্গে । 
দান ছত্রের এই কর্মসূচির ভিতরও লুকিয়ে রাজত্ব করে পলিটিক্স ! 

ছোট বেলার কথা খুব মনে পড়ে এই বিশ্বকর্মা পুজো এলে ! হাতে লাটাই আর ঘুড়ি । সকাল থেকে অনেকটা সময় আকাশের খুব কাছে চলেই যেতাম , বাতাসের নিবিড় আলিঙ্গন মুগ্ধ করতো আমাদের শৈশবকাল । 


দেখতে দেখতে কখন সুতো কেটে গেছে টের পাইনি । 
ঘুণে পোকা বাসা বেঁধেছে সেই লাটাই এ । সুতোয় মাঞ্জা দেবার পরিকল্পনার সাথে কেমন একটা উটকো গন্ধ জানিয়ে দেয় নষ্ট পরিবেশ । 
ডিগ্রি নিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা রুখতে শিল্প গড়ার কোন পরিকল্পনা নিতে হবে যে । 

শুধু ভোঁ কাট্টা খেলে গেলেন আপনি । বাজার ভর্তি এখন আপনার মানি খোড় ভাই রা । আত্মজনের রক্ত জল করা পয়সায় আপনার মসনদ মখ্মলে সেজে ওঠে । সিঙ্গুরের বিবাগি প্রতিশ্রুতি বারবার আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তাপসী মালিক কে । 
আজো সেই কান্না ভেসে বেড়ায় সিঙ্গুর নন্দী গ্রামে । 

সেদিন শ্রমিক বস্তির কে যেন বলছিল শালা ! সব মালিক এক হ্যায় । আমি শুনে একটু হেসে মনে মনে বললাম আরে বুদ্ধু বিশ্বকর্মাও যে ওদেরই দলে ! এটা আর বুঝবে কবে ?