শুরু হয়েছে হেয়ারিং, নাম বাদ দেওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ সামনে আসছে
সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান:
বঙ্গে শুরু SIR প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ, বর্ধমানের নিউ কালেক্টর বিল্ডিংয়ে SIR শুনানি চলছে। সন্দেহের তালিকায় যাঁরা তাঁদেরই ডেকে নাগরিকত্ব যাচাইয়ে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম দিনেই বর্ধমানে নাম বাদ দেওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ সামনে আসছে।
বঙ্গে শুরু হয়ে গেল স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ। শনিবার থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তথাকথিত ‘হেয়ারিং’ পর্ব। ম্যাপিংয়ে নাম না থাকা ভোটারদেরই এই ধাপে ডাকা হচ্ছে বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তরফে স্পষ্ট করা হয়েছে, ২০০২ সালে শেষবার হওয়া SIR প্রক্রিয়ায় যাঁদের নিজের বা পরিবারের নাম ভোটার তালিকায় নেই, তাঁদেরই আপাতত সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। এই ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে করা হচ্ছে প্রশ্নোত্তর পর্বও। শুনানি শেষে সন্তোষজনক নথি মিললে তবেই ভোটার তালিকায় নাম বহাল থাকবে বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে।
প্রথম দফায় রাজ্যজুড়ে মোট ৩১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪২৪ জনকে শুনানিতে ডাকা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেককেই ইতিমধ্যে নোটিস পাঠানো হয়েছে। এই শুনানি চলবে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই, যেখানে উপস্থিত থাকবেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা।
এই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে পূর্ব বর্ধমান জেলার শহর বর্ধমানের নিউ কালেক্টর বিল্ডিংয়েও শনিবার থেকে হিয়ারিং শুরু হয়। শুনানির দিন একাধিক অভিযোগ সামনে আসে। বর্ধমান শহরের রশিকপুর তিন নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর, বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ আনোয়ারের পুত্র শেখ আসিফ আনোয়ার শুনানিতে হাজির হন। তিনি জানান, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর বাবা-মায়ের নাম না থাকায় তাঁদের হিয়ারিংয়ে ডাকা হয়েছে। তাঁর দাবি, শেখ আনোয়ার ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বর্ধমান বোর্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। সেই ব্যক্তির নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় না থাকা কীভাবে সম্ভব, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন তিনি। পাশাপাশি SIR প্রক্রিয়া ঘিরে আতঙ্কের কথাও জানান।
অন্যদিকে, অসুস্থ মাকে নিয়ে শুনানিতে হাজির হন বিশ্বজিৎ মণ্ডল। তিনি জানান, তাঁর মায়ের বর্তমান বয়স ৮৩ বছর এবং ৫৮ বছর বয়স থেকেই তিনি নিয়মিত ভোট দিয়ে আসছেন। অথচ ২০০২ সালের তালিকায় তাঁর নাম নেই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিন হিয়ারিং অফিসে উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসও। তিনি জানান, নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড গ্রহণ না করার অভিযোগ তাঁদের কাছে এসেছিল। বিধায়কের দাবি, যাঁরা মাধ্যমিক দিয়েছেন তাঁদের অনেকের বয়স ১৮ পেরিয়েছে, যদিও পরীক্ষায় পাশ না করায় তাঁদের কাছে সার্টিফিকেট নেই। অ্যাডমিট কার্ডেই বয়সের উল্লেখ থাকায় সেটি গ্রহণযোগ্য করার দাবি জানানো হয় এবং পরে তা মেনে নেওয়া হয়।
খোকন দাস আরও দাবি করেন, বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা এলাকায় প্রায় ২৩ হাজারের বেশি ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। শনিবার সাড়ে ১২ হাজারের বেশি মানুষকে শুনানিতে ডাকা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮০০ জন করে ডাকা হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন সকলকেই বাংলাদেশি সন্দেহে বাদ দিতে চাইছে, যা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
SIR প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই উদ্বেগ ও রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊