‘উন্নয়নের পাঁচালি’, ছাব্বিশের ভোটের আগে ১৫ বছরের কাজের রিপোর্ট কার্ড পেশ মমতার!
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দামামা কার্যত বেজে গিয়েছে । চতুর্থ বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে এখন থেকেই ঘুঁটি সাজাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। তার আগে ১৪ বছরের কাজের রিপোর্ট পেশ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই রিপোর্ট কার্ড উন্নয়নের পাঁচালি উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘উন্নয়নে পাঁচালি’ উদ্বোধন করে মমতা বলেন, ‘‘আগামী বছর মে মাস এলে আমাদের সরকারের ১৫ বছর পূর্ণ হবে। এই সাড়ে ১৪ বছরে আমাদের সরকার কী কী কাজ করেছে, তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছি। আমরা রাজ্যবাসীর কাছে দায়বদ্ধ।’’ মমতা বলেন, ‘‘২০১১ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম, তখনের তুলনায় অর্থনৈতিক সাফল্য (জিএসডিপি) বেড়ে এখন প্রায় ২০ লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।’’ এরপরেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রথমেই রাজ্যের কর এবং রাজস্ব আদায়ের কথা বললেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের কর এবং রাজস্ব বেড়েছে ৫.৩৩ গুণ বেড়েছে।’’ এ ছাড়াও, ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার বেড়েছে ১৭.৬৭ শতাংশ। এ ছাড়াও, ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার বেড়ছে ১৭.৬৭ শতাংশ। সোশ্যাল সেক্টর এক্সপেন্ডিচার বেড়েছে ১৪.৪৬ শতাংশের বেশি। কৃষি ক্ষেত্রে বেড়েছে ৯.১৬ গুণ বেশি। ফিজ়িক্যাল সেক্টর এক্সপেন্ডিচার বেড়েছে ৬.৯৩ গুণ বেশি। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল, ১০ বছরে এক কোটি ৭২ লক্ষ মানুষকে দারিদ্রসীমার বাইরে আনা হয়েছে।
মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যে দু’কোটিরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সারা দেশে আমরা বেকারত্ব হার আমরা ৪০ শতাংশ কমিয়েছে।’’ রাজ্যে ছ’টি অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি হচ্ছে বলে জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এখানে আরও এক লক্ষ কর্মসংস্থান হবে।’’ দেউচা পাচামিতেও এক লক্ষ কর্মসংস্থান হবে, আশাবাদী মমতা। তিনি আরও জানান, রাজ্যে মেট্রোর কোচ, লোকাল কোচ, ভারী যন্ত্রপাতি, জাহাজ তৈরি হচ্ছে। সিমেন্ট, ইস্পাত কারখানার কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে রাজ্যে এক কোটি ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ কাজ করছেন। ৪২ লক্ষ ছেলেমেয়েকে স্কিল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ১২ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করেছি, যা গোটা ভারতের মধ্যে বাংলা মডেল।’’
মমতা বলেন, ‘’৩১ লক্ষ ৭৭ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক, যাঁরা ঘরে ফিরেছেন, তাঁদের পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের আমরা শ্রমশ্রী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।’’ দু’কোটি ২১ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়াও, কন্যাশ্রী পায় এক কোটি জন। রূপশ্রী প্রকল্পের অধীনে ২২.০২ লক্ষ মেয়েকে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মমতা। সবুশ্রী প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। আনন্দধারা প্রকল্পে খরচের পরিমাণ এক কোটি ২১ লক্ষ। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয় দু’কোটি ৪৫ লক্ষ পরিবারকে। খরচ ১৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। শিশুসাথী প্রকল্পের অধীনে আমরা বিনা পয়সায় ৬৪ হাজার শিশুর হার্ট অপারেশন হয়েছে। জানান মুখ্যমন্ত্রী। বিধবা ভাতা ২০ লক্ষ ৫৭ হাজার, বার্ধক্য ভাতা ৫৫ লক্ষ ৬১ হাজার, মানবিক ভাতা সাত লক্ষ ৫৯ হাজার, জয় জোহার দু’লক্ষ ৯৮ হাজার, তপসিলি বন্ধু: ১১ লক্ষ ৪৫ হাজার, সমব্যথী ২৮ লক্ষ ভাতা দেওয়া হয়েছে বলেই জানান।
মমতা বলেন, ‘‘গ্রামীণ বাড়ি এবং আবাসন প্রকল্পের অধীনে ৬৭ লক্ষ ৬৯ হাজার বাড়ি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের টাকায় আমরা পথশ্রী প্রকল্প করেছি। এই প্রকল্পে আমাদের ১৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাংলা সড়ক যোজনায় ২০১১ সাল থেকে মোট এক লক্ষ ৩০ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা তৈরি করেছি। তাই তো ওরা (কেন্দ্রীয় সরকার) আমাদের টাকা বন্ধ করেছে।' তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে এখনও পর্যন্ত এক লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি পাই। আমাদের টাকটা দিচ্ছে না। আশা করব দেবেন? কিন্তু কবে আর দেবেন? নির্বাচন তো এসে যাচ্ছে। এর পরে ফেব্রুয়ারিতে দিয়ে মার্চে বলবেন খরচ হল না? চালাকিটা আমরাও বুঝি।’’
মমতার দাবি, 'গঙ্গাসাগর যাত্রীদের সুবিধার জন্য গঙ্গাসাগর সেতু তৈরি করছি। খরচ হবে ১,৭০০ কোটি টাকা। ২০১১ সালে দু’লক্ষ পরিবারের কাছে পানীয় জলের সংযোগ ছিল। গত ১৪ বছরে ৯৯ লক্ষ পরিবারকে আমরা পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছেছে দিয়েছি। খাদ্যসাথী ন’কোটি মানুষ পান। এর জন্য রাজ্যের খরচ হয়েছে এক লক্ষ ন’হাজার কোটি টাকা। ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প থেকে উপকৃত হন সাত কোটি ৪১ লক্ষ জন। তার জন্য খরচ হয়েছে এক হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। ‘বিনামূল্য সামজিক সুরক্ষা যোজনা’র খাতে খরচ দু’হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি। সুবিধা পেয়েছেন এক কোটি ৯২ লক্ষ মানুষ।'
পর্যটনে বাংলা এগিয়ে বলেই জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় মহাকাল মন্দির তৈরির জন্য জায়গাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিউ টাউনে ১৫ একর জমিতে দুর্গাঅঙ্গন তৈরি হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসেই আমরা এর কাজ শুরু করে দেব। দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাটে স্কাইওয়াক তৈরি হয়েছে।’’ দীঘায় গড়ে উঠেছে জগন্নাথ মন্দির। মমতার কথায়, ‘‘আমরা এ বছর ২৫টি চা বাগান খুলেছি। এতে ২৩ হাজারের বেশি চা শ্রমিক উপকৃত হয়েছেন। চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে।’’ এ ছাড়াও বিভিন্ন ভাষার বোর্ডও তৈরি করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊