উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি, বিপদসীমার উপরে তোর্সার জল, একাধিক এলাকা প্লাবিত
নিজস্ব সংবাদদাতা, কোচবিহার/আলিপুরদুয়ার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫:
উত্তরবঙ্গে গত কয়েক দিনের লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজানের ভুটান ও সিকিমে অতিবৃষ্টির জেরে তোর্সা নদী এবং তার শাখানদীর জল বিপদসীমার বহু উপর দিয়ে বইছে। এর ফলে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নদীর তীরবর্তী একাধিক গ্রাম ও জনপদ জলের তলায় চলে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন ও বিপন্ন।
নদীর বর্তমান অবস্থা:
- তোর্সা নদীর জলস্তর বর্তমানে বিপদসীমার অনেকটাই উপরে রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে ‘লাল সতর্কতা’ (Red Alert) জারি করেছে সেচ দফতর।
- প্রবল জলস্রোতের কারণে নদীর পাড় ও বাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আলিপুরদুয়ারের সুভাষিণী চা বাগান সংলগ্ন এলাকায় তোর্সা নদীর বাঁধ একাধিক জায়গায় ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে, যার ফলে হু হু করে জল ঢুকছে গ্রামে।
- শিল তোর্সা নদীর প্রবল স্রোতে কোচবিহারের শীলবাড়ি হাটের কাছে ২৭ নম্বর জাতীয় সড়কের শীল তোর্সা সেতু থেকে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে ভেসে যাওয়া একটি গণ্ডারকেও দেখা গিয়েছে, যা বন্যপ্রাণীদেরও বিপন্নতার চিত্র তুলে ধরছে।
ক্ষয়ক্ষতি ও প্রভাব:
- কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের একাধিক এলাকা যেমন - তুফানগঞ্জ, বলরামপুর, হাসিমারা, পূর্বকাঠালবাড়ি, পলাশবাড়ি এবং কোচবিহার শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ জলের তলায় চলে গেছে।
- নদীর ভাঙনের কারণে বহু ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে বাঁধের উপরে বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
- জলমগ্ন হওয়ায় জেলাগুলিতে সড়ক যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। তোর্সার স্রোতে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় অনেক গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
- কৃষিজমিতে জল ঢুকে ফসল নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
- বৃষ্টিপাত ও ধসজনিত কারণে এই অঞ্চলে হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে, যদিও শিল-তোর্সা সংলগ্ন এলাকায় মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়।
- জেলা প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর হয়েছে। জলমগ্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
- বিভিন্ন স্কুল ভবন ও সরকারি কেন্দ্রে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।
- পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণের কাজ শুরু হয়েছে।
- তবে, একাধিক এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী ও আশ্রয়ের অভাব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।
ভবিষ্যৎ সতর্কতা: আবহাওয়া দপ্তর উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে আরও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। এর ফলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশাসন স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে থাকার এবং নদীর ধারে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করছে।
এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনকে আরও দ্রুত ও সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষজন।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊