ভেটাগুড়িতে ৪৫টি শূকরের রহস্যজনক মৃত্যু, আতঙ্কে গ্রামবাসী
ভেটাগুড়ি, কোচবিহার: ভেটাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খারিজা বালাডাঙ্গা এলাকায় প্রায় ৪৫টি শূকরের আকস্মিক মৃত্যুতে পুজোর আগে নতুন করে চাঞ্চল্য ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক শূকরের মৃত্যুর কারণ এখনও অজানা। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাইরের কিছু লোক রাতারাতি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। এর আগে সিতাইয়ে অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়ায় মৃত্যুর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এই নতুন ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
জানা গেছে, বাইরে থেকে আসা কিছু লোক শূকরের একটি দল নিয়ে খারিজা বালাডাঙ্গা এলাকার কালির পাট এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের শূকরের পাল একের পর এক মরতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে তারা কিছু মৃত শূকর স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে এবং বাকি মৃত শূকরগুলিকে নিকটবর্তী কাশির ঘাটের কাছে নদীতে ফেলে দিয়ে রাতের অন্ধকারে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
মৃত শূকরগুলি নদীতে পচতে শুরু করলে তীব্র দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দা গোবিন্দ মোহন্ত জানান, "গত শুক্রবার রাতে সম্ভবত মৃত শূকরগুলো নদীর ধারে ফেলা হয়েছে। গত দুদিন থেকে পচতে শুরু করায় বাড়িতে টেকা দায় হয়ে গেছে। পচা গন্ধে আমাদের অনেকেই খাবার মুখে তুলতে পারছেন না।"
পরে স্থানীয়রা পঞ্চায়েত প্রধানকে খবর দিলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেন। ভেটাগুড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান চুমকি মোহন্তের নির্দেশে একটি জেসিবি মেশিন ব্যবহার করে প্রায় ৩৫টি মৃত শূকরকে নদীর ধারে পুঁতে ফেলা হয়। প্রধান জানান, "গ্রামবাসীদের কাছ থেকে খবর পেয়েই আমরা হরিজনদের খবর দিয়েছিলাম, কিন্তু এতগুলো মৃত শূকর দেখে তারাও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এরপর সোমবার জেসিবি এনে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়।"
এই ঘটনার খবর প্রাণী সম্পদ দপ্তরের কাছে পৌঁছালে চার সদস্যের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। তাদের পক্ষ থেকে মৃত শূকরগুলো পচে যাওয়ায় নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই দলের একটি জীবিত শূকর এবং এলাকার দুটি পোষা শূকরের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ আধিকারিক মনোজ গোল্ডারের প্রাথমিক অনুমান, বিষাক্ত কিছু খেয়ে শূকরগুলোর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে একসঙ্গে এতগুলো শূকর বিষ খেলো কিনা, তা নিয়ে তিনিও সন্দিহান। তিনি বলেন, "ওই পালের একটি জীবিত শূকরের রক্তের নমুনা আমরা সংগ্রহ করেছি, যা আগামীকাল (মঙ্গলবার) কলকাতায় পাঠানো হবে। রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।"
এই রহস্যজনক ঘটনায় এলাকার মানুষজন চরম আতঙ্কে রয়েছেন। জয়ন্তী মহন্ত নামের এক বাসিন্দা বলেন, "ভয় তো হয়ই। এতগুলো শূকর কীভাবে মারা গেল তা নিয়ে সন্দেহ থাকেই। পচা গন্ধে দুদিন থেকে আমাদের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।" আরেক বাসিন্দা জ্যোৎস্না বর্মন তার বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, "বাড়িতে বাচ্চা রয়েছে, তাই ভয় হয়। তবে চিকিৎসকরা আসায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে।"
যতদিন না রিপোর্ট আসছে, ততদিন খারিজা বালাডাঙা এলাকার মানুষের মনে এই অজানা আতঙ্ক থেকেই যাবে। এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং কারণ উদঘাটন জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊