Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Screen Time : বর্তমান সময়ে আপনার শিশুর সবথেকে বড় শত্রু স্ক্রিন টাইম

Screen Time : বর্তমান সময়ে আপনার শিশুর সবথেকে বড় শত্রু স্ক্রিন টাইম


girl child in red dress use mobile phone at home, her mother in red dress also use phone




"স্ক্রিন টাইম" বলতে টেলিভিশন, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, ভিডিও গেম কনসোল বা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিনের সামনে কাটানো সময়কে বোঝায়। বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিশুদের জীবনে স্ক্রিন টাইম একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, যেখানে এটি শিক্ষামূলক বা বিনোদনমূলক উভয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হতে পারে। তবে আপনার ভুলে শিশুদের জীবনে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে এই 'অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম' । 

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের সমস্যা:


শিশুদের জন্য অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে:

১. শারীরিক সমস্যা: 
দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি: দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চোখে চাপ পড়া এবং দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
স্থূলতা: স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার কারণে শারীরিক কার্যকলাপ কমে যায়, যা স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়। 
ঘুমের ব্যাঘাত: স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত করে, যা শিশুদের ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়। 
ঘাড় ও পিঠের ব্যথা: ভুল ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হতে পারে।

২. মানসিক ও আচরণগত সমস্যা: 
সামাজিক দক্ষতার অভাব: অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুদের বাস্তব জীবনে অন্যদের সাথে মেলামেশা এবং সামাজিক দক্ষতা বিকাশে বাধা দেয়। 
আবেগিক সমস্যা: শিশুরা স্ক্রিনের প্রতি আসক্ত হয়ে গেলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, হতাশা বা উদ্বেগের মতো আবেগিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
মনোযোগের অভাব: দ্রুত পরিবর্তনশীল ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট শিশুদের মনোযোগের সময়কাল (attention span) কমিয়ে দিতে পারে, যা তাদের পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে। 
আক্রমণাত্মক আচরণ: কিছু ভিডিও গেম বা কন্টেন্ট শিশুদের মধ্যে আক্রমণাত্মক আচরণ তৈরি করতে পারে। 
শিক্ষাগত প্রভাব: অতিরিক্ত বিনোদনমূলক স্ক্রিন টাইম শিশুদের পড়াশোনা এবং সৃজনশীল কাজে আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে।

girl child in red dress use mobile phone at home, her mother in red dress also use phone

প্রতিকারের উপায় (স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণের কৌশল):


শিশুদের স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি। কিছু কার্যকর উপায় নিচে দেওয়া হলো:

১. বয়স অনুযায়ী সীমা নির্ধারণ: 
০-১৮ মাস: ভিডিও চ্যাট ছাড়া অন্য কোনো স্ক্রিন টাইম এড়িয়ে চলা উচিত। 
১৮-২৪ মাস: অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষামূলক প্রোগ্রামের জন্য খুব সীমিত স্ক্রিন টাইম দেওয়া যেতে পারে। 
২-৫ বছর: দিনে ১ ঘণ্টা বা তার কম স্ক্রিন টাইম, তাও শিক্ষামূলক কন্টেন্টের জন্য এবং অভিভাবকদের সাথে দেখা উচিত। 
৬ বছর ও তার বেশি: স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শারীরিক কার্যকলাপের সাথে ভারসাম্য রেখে স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করা উচিত।

২. 'নো স্ক্রিন জোন' তৈরি: 
খাবার টেবিল, শোবার ঘর এবং ঘুমানোর আগে অন্তত ১ ঘণ্টা স্ক্রিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করুন। 
পারিবারিক আলোচনার জন্য নির্দিষ্ট সময় রাখুন, যেখানে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস থাকবে না।

৩. বিকল্প কার্যকলাপের ব্যবস্থা: 
শিশুদের জন্য বই পড়া, বোর্ড গেম খেলা, ছবি আঁকা, আউটডোর খেলাধুলা, সৃজনশীল কাজ বা পরিবারের সাথে সময় কাটানোর মতো বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করুন। 
তাদের পছন্দের উপর ভিত্তি করে নতুন শখ বিকাশে উৎসাহিত করুন।

৪. অভিভাবকদের উদাহরণ: 
শিশুরা তাদের অভিভাবকদের অনুসরণ করে। তাই, আপনার নিজের স্ক্রিন ব্যবহারের অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হন এবং একটি ইতিবাচক উদাহরণ স্থাপন করুন। 
পরিবারের সবাই মিলে স্ক্রিন টাইম কমানোর চেষ্টা করুন।

৫. কন্টেন্ট নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণ: 
শিশুরা কী দেখছে বা খেলছে, সেদিকে নজর রাখুন। তাদের বয়সের উপযোগী এবং শিক্ষামূলক কন্টেন্ট বেছে নিন। 
হিংসাত্মক বা অনুপযুক্ত কন্টেন্ট থেকে তাদের দূরে রাখুন।

৬. প্রযুক্তিকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার: 
প্রযুক্তিকে পুরোপুরি বাদ না দিয়ে, এর ইতিবাচক ব্যবহার শেখান। যেমন: শিক্ষামূলক অ্যাপস, ডকুমেন্টারি বা অনলাইন লাইব্রেরি ব্যবহার করা। 
ডিজিটাল সাক্ষরতা (digital literacy) শেখান, যাতে তারা ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারে।

৭. খোলামেলা আলোচনা: 
শিশুদের সাথে স্ক্রিন টাইম ব্যবহারের নিয়ম এবং এর গুরুত্ব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। তাদের মতামত শুনুন এবং তাদের উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীল হন।

এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে আপনি শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করতে পারেন এবং তাদের সামগ্রিক বিকাশে সহায়তা করতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code