দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পোলোগংঙ্কা অভিযান-উত্তরবঙ্গের অভিযাত্রীদের অসমাপ্ত লড়াই
মানালি, ১৫ জুলাই: লাদাখ (Ladakh) সহ হিমাচলের (Himachal) বিস্তীর্ণ এলাকা গত কয়েকদিন ধরে প্রবল বৃষ্টি এবং হিমপাতের (snowfall) ফলে বিপর্যস্ত। এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও উত্তরবঙ্গ (North Bengal) থেকে আয়োজিত পোলোগংঙ্কা পর্বত শৃঙ্গ (Polokongka Peak) অভিযানের অভিযাত্রীরা (mountaineers) অসম সাহসী লড়াই চালিয়েছেন। তারা পোলোগংঙ্কা শৃঙ্গের প্রায় ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হলেও, আবহাওয়া আরও খারাপ হওয়ায় সেই উচ্চতা থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হন। তবে, স্বস্তির খবর হলো, অভিযাত্রীরা সকলেই বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং আজ অর্থাৎ ১৫ই জুলাই বেস ক্যাম্প (Base Camp) থেকে মানালির (Manali) দিকে রওনা দিয়েছেন।
অভিযানের বিস্তারিত বর্ণনা: গত ৭ই জুলাই অভিযাত্রীরা প্রায় ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় বেস ক্যাম্প বা মূল শিবির স্থাপন করেন। পরের দুই দিন (৮ ও ৯ জুলাই) দলের ১১ জন সদস্যই ক্যাম্প ২-এ (Camp 2) লোড ফেরি (load ferry) করেন। ১০ই জুলাই ক্যাম্প ১ (Camp 1) স্থাপন করা হয় প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায়। এই সময়ে দলের সদস্য হীরক ব্রহ্ম (Hirak Brahma) অসুস্থ হয়ে পড়লে ড. স্বরূপ খান (Dr. Swarup Khan) এবং সুস্মিতা সরকার (Susmita Sarkar) তাকে নিয়ে বেস ক্যাম্পেই থেকে যান।
দলের বাকি সদস্যরা ১১ই জুলাই ক্যাম্প ১ থেকে ২ নম্বর শিবিরে প্রায় ১৯ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় লোড ফেরি করেন। এই দিন পর্যন্ত আবহাওয়া মোটামুটি ঠিকই ছিল। পরদিন, অর্থাৎ ১২ই জুলাই, ক্যাম্প ২ স্থাপন করা হয় এবং দলের আট জন সদস্যই এই ক্যাম্পে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
শৃঙ্গ আরোহণের প্রচেষ্টা ও প্রতিকূলতা: ১৩ তারিখ ভোর রাতে শৃঙ্গ আরোহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও ১২ তারিখ সন্ধ্যা থেকেই হিমপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল, সঙ্গে শুরু হয় প্রচণ্ড হাওয়া। এই খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেই ১৩ই জুলাই ভোর সাড়ে চারটায় দলের আট অভিযাত্রী এবং দুই জন গাইড শৃঙ্গের পথে কঠিন পাথর এবং বরফের দেয়াল ভেঙে আরোহণ শুরু করেন। আবহাওয়া আরও খারাপ হতে শুরু করে, তবে অভিযাত্রীরা এর মধ্যেও এগিয়ে চলেন। প্রায় ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় তুষারপাত ও হাওয়ার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। অভিযাত্রীরা সেখান থেকে আর এগোতে সক্ষম হন না। প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় সেই পাহাড়ের ঢালে তারা দাঁড়িয়ে থাকেন, তবে কোনোভাবেই আবহাওয়ার কোনো উন্নতি হয় না। পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলনেতা ভাস্কর দাস (Bhaskar Das) ও দুই জন গাইড আলোচনা করে নিচে ক্যাম্প ২-তে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
ক্যাম্প ২ বা দ্বিতীয় শিবিরেও অনবরত হিমপাত চলতে থাকে। বেলা ১১টায় আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হলে আবার শৃঙ্গ আরোহণের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় না। ৩০ মিনিটের মধ্যেই আবার প্রচণ্ড বেগে তুষারপাত শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে থাকে। আবহাওয়ার কোনো উন্নতি না হওয়ায় বিকেল ৪টায় ক্যাম্প ১-এ নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তৃতীয় প্রচেষ্টা ও যৌথ উদ্যোগের সাফল্য: সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, পরদিন যদি আবহাওয়ার কোনো উন্নতি হয়, তবে ভোর রাতে ক্যাম্প ১ থেকে তৃতীয় চেষ্টা করা হবে। এই লক্ষ্যে দলনেতা দুই গাইড ছাড়াও ত্রিদিব সরকার (Tridib Sarkar), জয়ন্ত সরকার (Jayanta Sarkar) এবং পিয়ালী বিশ্বাসকে (Piyali Biswas) নিয়ে তিনজনের একটি দল ঘোষণা করেন, যারা ক্যাম্প ১-এ থেকে যান। বাকিরা এই দিনই ক্যাম্প ১ থেকে বেস ক্যাম্পে নেমে যান।
পরদিন অর্থাৎ ১৪ই জুলাইও আবহাওয়ার কোনো উন্নতি না হওয়ায় তৃতীয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। তিন সদস্য ও দুই গাইড সেইদিন মূল শিবিরে নেমে আসেন।
উত্তরবঙ্গের ছয়টি অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের (adventure clubs) যৌথ এই প্রচেষ্টা এক নতুন দিক খুলে দিয়েছে। একসাথে হাতে হাত মিলিয়ে পথ চলা, একসঙ্গে তাঁবু শেয়ার করা, একে অপরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া—এ এক অনন্য শুভ রঙিন পথের সৃষ্টি। আগামীতে এই ধরনের যৌথ প্রচেষ্টা যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হবে, সেটা আশা করাই যায়, আর সেই শুরুর পতাকা উত্তোলন উত্তরবঙ্গই করে দেখাল।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊