Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি বিতর্ক-ভারত-বাংলাদেশ দ্বন্দ্বে নতুন মোড়

সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি বিতর্ক-ভারত-বাংলাদেশ দ্বন্দ্বে নতুন মোড়

সত্যজিৎ রায়, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, পৈতৃক বাড়ি, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ, ভারত, কূটনৈতিক বিতর্ক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, শশী লজ, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী,


বাংলাদেশের ময়মনসিংহে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের কথিত পৈতৃক বাড়ি ভাঙার খবর নিয়ে সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এক কূটনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছিল, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকার ভবনটির সঙ্গে রায় পরিবারের ঐতিহাসিক যোগসূত্র অস্বীকার করেছে। তবে, জনরোষের মুখে ভবনটি ভাঙার কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভারতের উদ্বেগ ও আবেদন: 

এই সপ্তাহের শুরুতে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে, ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ, লেখক-চিত্রশিল্পী উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর পৈতৃক বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এই খবরে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়, বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পদক্ষেপকে "অত্যন্ত বেদনাদায়ক" আখ্যা দিয়ে উভয় সরকারের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ যৌথ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করার আবেদন জানান।

বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA) ভাঙার খবরে "গভীর দুঃখ" প্রকাশ করে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় ভবনটির "ঐতিহাসিক মর্যাদা, বাংলা সাংস্কৃতিক নবজাগরণের প্রতীক" হিসেবে উল্লেখ করে এবং বাংলাদেশকে ভাঙার সিদ্ধান্ত "পুনর্বিবেচনা" করার আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, "ভবনটির ঐতিহাসিক মর্যাদা, বাংলা সাংস্কৃতিক নবজাগরণের প্রতীক হিসেবে, ভাঙার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা এবং এটিকে সাহিত্য জাদুঘর এবং ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে মেরামত ও পুনর্গঠনের বিকল্পগুলি পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয় হবে।" ভারত এই কাঠামোটিকে সাহিত্য জাদুঘর এবং যৌথ সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে সংরক্ষণে পূর্ণ সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক বলেও জানানো হয়।

বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া ও ব্যাখ্যা: 

জবাবে, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করে জানিয়েছে, "প্রশ্নবিদ্ধ বাড়িটির সঙ্গে সম্মানিত সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।" বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে যে, ভূমি রেকর্ড এবং আর্কাইভাল নথি থেকে দেখা যায় যে সম্পত্তিটি মূলত স্থানীয় জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী তার এস্টেট, শশী লজের সংলগ্ন স্টাফ কোয়ার্টার হিসেবে নির্মাণ করেছিলেন। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর, ভবনটি জাতীয়করণ করা হয় এবং পরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীকে ইজারা দেওয়া হয়। কয়েক দশক ধরে এটি জেলা শিশু একাডেমীর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং জমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি খাস সম্পত্তি হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, স্থানীয় ইতিহাসবিদ, প্রবীণ নাগরিক এবং লেখকদের সাথে পরামর্শ করেও রায় পরিবারের সঙ্গে এই কাঠামোর কোনো যোগসূত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং ভবনটি কোনো সুরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবেও তালিকাভুক্ত নয়। এই এলাকায় রায় বংশের একমাত্র স্বীকৃত যোগসূত্র হলো 'হরিকিশোর রায় রোড', যা রায়ের প্রপিতামহের নামে নামকরণ করা হয়েছে, যিনি উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর পালক পিতা ছিলেন। রায় পরিবারের একসময় এই সড়কে একটি বাসস্থান ছিল, তবে সেটি অনেক আগে বিক্রি হয়ে গেছে এবং তার জায়গায় একটি বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয় যে, ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত ২০২৪ সালের প্রথম দিকে নেওয়া হয়েছিল এবং এর পরিবর্তে একাডেমীর অধীনে শিশুদের উন্নয়নের জন্য একটি আধা-স্থায়ী সুবিধা নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। ভাঙার জন্য একটি পাবলিক নিলাম বিজ্ঞপ্তি ২৫ সালের ৭ই মার্চ জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।

ভাঙার কাজ স্থগিত এবং স্থানীয় বিতর্ক: 

এদিকে, দ্য ডেইলি স্টার-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, ময়মনসিংহ সিটি ডেপুটি কমিশনারের আদেশে ভবনটি ভাঙার কাজ স্থগিত করা হয়েছে, যা "জনরোষের" ফলস্বরূপ।

তবে, এই সপ্তাহে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম, যেমন দ্য ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো, পূর্বে জানিয়েছিল যে, ময়মনসিংহের হরিকিশোর রায় চৌধুরী রোডের পাশে অবস্থিত এই ভবনটি এক শতাব্দীরও বেশি আগে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর, সম্পত্তিটি সরকারি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানা যায়। বছরের পর বছর ধরে অবহেলা ও নিষ্ক্রিয়তার পর, প্রায় এক দশক আগে একাডেমীর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য প্রতিবেদনে, স্থানীয় কবি, কর্মী এবং কিছু ইতিহাসবিদ যুক্তি দিয়েছেন যে ভবনটির ঐতিহ্যগত মূল্য দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করা হয়েছে। বাংলাদেশি কবি শামিম আশরাফ দ্য ডেইলি স্টার-কে উদ্ধৃত করে বলেছেন, "বাড়িটি বছরের পর বছর ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল, এর ছাদে ফাটল ধরেছিল—তবুও কর্তৃপক্ষ এই পুরনো ভবনগুলির সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে কখনোই চিন্তা করেনি।"

বর্তমানে, ভবনটি ভাঙার কাজ স্থগিত থাকলেও, এর ঐতিহাসিক যোগসূত্র নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code