নবান্ন থেকে নতুন প্রকল্প 'আমার পাড়া, আমার সমাধান' ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
কলকাতা, ২১শে জুলাই: ২১শে জুলাই ধর্মতলার সমাবেশ থেকে দলীয় স্তরে নির্বাচনী সুর বাঁধার ঠিক পরের দিনই, মঙ্গলবার নবান্ন থেকে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এক নতুন সরকারি প্রকল্প ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি পরিষেবা আরও তৃণমূল ও প্রান্তিক স্তরে পৌঁছে দিতে চালু হচ্ছে এই নতুন প্রকল্প, যার নাম ‘আমার পাড়া, আমার সমাধান’। এদিন এক সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পের বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ছোট ছোট কাজের জন্য আমাদের নতুন প্রকল্প – আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান। মানুষের প্রকল্প নিয়ে সরকার এবার পথে নামছে। এটা ছোট্ট প্রোগ্রাম, কিন্তু পরে বিস্তৃত হবে। সারা দেশে এধরনের উদ্যোগ এই প্রথম। মানুষ নিজেদের বুথ, নিজেদের গ্রামের সমস্যার সমাধান পাবে।"
প্রকল্পের বিস্তারিত রূপরেখা:
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই প্রকল্পের আওতায় তিনটি করে বুথ নিয়ে একটি কেন্দ্র গঠিত হবে। রাজ্যে মোট ৮০ হাজার বুথ রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সপ্তাহে একদিন করে ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২রা আগস্ট থেকে এই ক্যাম্পগুলি শুরু হবে এবং কাজ শেষ করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগবে। ক্যাম্পগুলিতে সারাদিন সরকারি আধিকারিকরা উপস্থিত থাকবেন। গ্রামবাসীরা তাঁদের বুথ বা গ্রামের ছোটখাটো সমস্যার কথা আধিকারিকদের জানাবেন। আধিকারিকরা তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করবেন, ঠিক কতটুকু কাজ করা সম্ভব। সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে, অনলাইনে একটি পোর্টালে এই কাজের বিবরণ নথিভুক্ত করা হবে।
অর্থ বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন:
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল অর্থ বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রতিটি বুথের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে, যা সবমিলিয়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য রাজ্যস্তরে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। একইভাবে জেলাস্তরেও এই টাস্ক ফোর্স তৈরি হবে। দুই মাসব্যাপী এই কাজের মাঝে দুর্গাপূজার জন্য ১৫ দিনের ছুটি থাকবে, যার বদলে পরবর্তী অন্য দিনগুলিতে কাজ করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "পরিষেবা একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দিতে হবে। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে যাবে সরকারি আধিকারিকরা। যেমন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ স্তরে কাজ চলছে, সেরকম চলবে। এছাড়াও অনেক ছোটখাটো সমস্যা থাকে, যা এসব পরিষেবার মধ্যে পড়ে না। আপনার গ্রামের নির্দিষ্ট কোনও কাজ দরকার হলে, যেমন আইসিডিএস সেন্টারের পাঁচিল বা ছাদ অথবা ঘর তৈরি হবে। সেই কাজটা এই ‘আমার পাড়া, আমার সমাধান’ প্রকল্পের মাধ্যমে হতে পারে। ছোট স্তরে কাজগুলো হবে।"
রাজনৈতিক তাৎপর্য:
নতুন এই প্রকল্প ঘোষণা থেকেই স্পষ্ট যে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের তৃণমূল সরকার গড়ার লক্ষ্যে এখন থেকেই সরকারি তরফে জনসংযোগে জোর দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবার নির্বাচনের আগে তিনি কোনো না কোনো জনকল্যাণমূলক প্রকল্প ঘোষণা করে থাকেন। অতীতে 'দিদিকে বলো', 'দুয়ারে সরকার', 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' - এর মতো প্রকল্পগুলি জনসমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এবারও তাঁর ঘোষণা 'আমার পাড়া, আমার সমাধান' - অর্থাৎ, জনতার কাজের মাধ্যমেই জনসমর্থন আদায় করতে চান জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊