সীমান্তে বিএসএফের হয়রানি: বিডিও অফিসে রুদ্ধশ্বাস বৈঠক
দিনহাটা ২ নং ব্লকের নাজিরহাট ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গাড়ালঝড়া সীমান্তে বিএসএফের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ক্ষোভের জেরে গতকাল দিনহাটা ২ নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) নীতিশ তামাংয়ের কার্যালয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, চেকিংয়ের নামে বিএসএফ তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে।
গ্রামবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে বিএসএফ প্রতিদিন সীমান্ত এলাকায় চেকিংয়ের নামে স্থানীয় বাসিন্দাদের হয়রানি করছে। বাজারে বা অন্যত্র যাতায়াতের জন্য তাদের সচিত্র পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই হয়রানি চরমে ওঠায় এবার গ্রামবাসীরা সরাসরি আন্দোলনে নামেন। তাদের দাবি, বিএসএফের এই বাড়াবাড়ি মেনে নেওয়া হবে না।
গতকাল গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিডিও নীতিশ তামাং। তিনি গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলার পর আজ বিকেল ৪টেয় নিজের দপ্তরে একটি বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য, কয়েকজন গ্রামবাসী, সাহেবগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের ওসি অজিত শাহ এবং বিএসএফের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আজকের বৈঠক প্রসঙ্গে বিডিও নীতিশ তামাং জানান, গ্রামবাসীদের মূল অভিযোগ ছিল চেকিংয়ের নামে তাদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা ও হয়রানি করা। এ বিষয়ে বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তাদের অনুরোধ করা হয়েছে যাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক জওয়ান মোতায়েন করে বর্তমান তাপপ্রবাহের কারণে প্রক্রিয়াটি মসৃণ করা হয়।
তবে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য নবীর উদ্দিন মিয়া বিডিওর বক্তব্যে আশ্বস্ত নন। তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, তাদের আন্দোলনের মূল দাবি হলো এলাকায় কোনো চেকপোস্ট রাখা চলবে না। তার মতে, ২০১৯-২০ সালে তৎকালীন বিডিও করোনার কারণে বহিরাগতদের প্রবেশ আটকাতে এই চেকপোস্ট তৈরি করেছিলেন, কিন্তু এখন বিএসএফ এটিকে স্থানীয়দের হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। নবীর উদ্দিন মিয়া আরও বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে এই চেকপোস্ট নিয়ে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তিনি বলেন, "সালমারা থেকে গাড়ালঝড়া যাওয়ার রাস্তাটি রাজ্য সরকারের তৈরি। আমরা ভারতবাসী, আমরা শুধুমাত্র আমাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে আমাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করব, কোনো এন্ট্রির নামে আমাদের হেনস্থা করা চলবে না।"
পঞ্চায়েত সদস্য নবীর উদ্দিন মিয়া আরও বলেন, বিডিও তাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে কয়েক দিনের মধ্যে যদি বিএসএফ পরিস্থিতির পরিবর্তন না করে, তাহলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তাদের দাবি স্পষ্ট – যতক্ষণ পর্যন্ত ওই এলাকা থেকে চেকিং পয়েন্ট তুলে নেওয়া না হবে, ততক্ষণ তাদের আন্দোলন চলবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমরা কাঁটাতারের ওপারে বাসিন্দা নই যে আমাদের এন্ট্রি করে ভারত ভূখণ্ডে ঢুকতে হবে।" তিনি আরও জানান, ওই এলাকায় প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা বসবাস করে, তাদের চেকিংয়ের নামে এই ধরনের হয়রানি বরদাস্ত করা হবে না। নবীর উদ্দিনের দাবি, বিএসএফ তাদের নিজস্ব ডিউটি করুক এবং প্রয়োজনে পর্যাপ্ত বাহিনী দিয়ে সীমান্ত রক্ষা করুক। তিনি বলেন, "আমরা সেনাবাহিনীকে সম্মান করি, আমরা তাদের জন্য জীবন দিতে পারি, কিন্তু কয়েকজন আধিকারিকের জন্য এই হয়রানি আমরা মেনে নেব না।"
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊