Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

ছিটমহল বিনিময়ের পর দেশের নাগরিকত্ব পেলেও ভিনরাজ্যে কাজ করতে পারছেন না !

ছিটমহল বিনিময়ের পর দেশের নাগরিকত্ব পেলেও ভিনরাজ্যে কাজ করতে পারছেন না ! 

chhitmahal


দিনহাটা:

ভারত বাংলাদেশ ঐতিহাসিক ছিটমহল বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়েছে বেশ কিছু বাংলাদেশী ছিটমহল বাসিন্দা। এদের মধ্যে কোচবিহার জেলাতেই রয়েছে ৯২১ জন। ২০১৫ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভের পর তারা বসবাস করছে এদেশে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই কর্মসংস্থানের একমাত্র পথ পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করা। সেক্ষেত্রে তাদের গন্তব্য দিল্লি বা ভিন রাজ্য। আর এবার দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে দিল্লি পুলিশের কাছে হেনস্তার শিকার ছিটমহল বিনিময়ের সময় ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ করা এক বাসিন্দা।

শনিবার দুপুর ১২:৩০ মিনিট নাগাদ আবু তাহের নামের দিনহাটা সেটেলমেন্ট ক্যাম্পে বসবাসরত ওই বাসিন্দার অভিযোগ ২০১৫ সালের ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পর তিনি বাংলাদেশের ছোট গারালঝোরা দুই এর ছিটমহল থেকে ভারতে এসে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। সেই সময় আবু তাহের তার স্ত্রী এবং এক কন্যা সন্তান এ দেশে আসলেও ছোট গারালঝড়া দুই নং ছিটে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে থেকে যায় তার বাবা-মা। ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তিনি পেয়েছেন ভারত সরকারের দেওয়া ছিটমহল বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র ট্রাভেল পাস সহ একাধিক নথি। বৈধ উপায়ে সরকারিভাবে তৈরি করেছেন নিজের আধার কার্ড , ভোটার কার্ড সহ অন্যান্য নথিও। কিন্তু সমস্ত নথি থাকা সত্ত্বেও দিল্লিতে কাজ করতে গিয়ে দিল্লী পুলিশের কাছে হেনস্তার শিকার হয়ে একপ্রকার পালিয়ে পুনরায় দিনহাটার সেই সেটেলমেন্ট ক্যাম্পে ফিরে এসেছে আবু তাহের।

অভিযোগ সম্প্রতি দিল্লী পুলিশ দিল্লিতে বসবাসরত বাঙ্গালীদের কাছ থেকে তাদের বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে আবু তাহের তার আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ট্রাভেল পাস সহ একাধিক কাগজপত্র দেখায়। কিন্তু তারপরেও দিল্লি পুলিশ দাবী করে আবু তাহেরের বাবা-মায়ের আধার কার্ড। কিন্তু বাবা-মায়ের আধার কার্ড আবু তাহের কোথায় পাবে? কারণ তার বাবা-মা তো আর ছিটমহল বিনিময়ের সময় ভারতে আসেনি, তারা বাংলাদেশের নাগরিক থেকে গেছেন। কিন্তু দিল্লী পুলিশ বারবার তাকে চাপ দিতে থাকে বাবা-মায়ের আধার কার্ড দেখানোর জন্য। আবু তাহের আরো জানান, তার মত ছিটমহল বিনিময়ের সময় যারা ভারতবর্ষে এসেছিল তাদের অনেকেই বাবা-মায়ের আধার কার্ড দেখাতে না পারায় দিল্লি পুলিশ তাদেরকে আটক করে রেখেছে। আর সেজন্যই সে একপ্রকার ভয়ে পরিবার সহ পুনরায় দিনহাটায় পালিয়ে আসে। সে জানায় তার একমাত্র কর্মসংস্থান পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করা, কিন্তু দিল্লী পুলিশের জ্বালায় সেটাও বন্ধ কারণ সেখানে আর কোনোভাবেই ফিরে যাওয়া যাবে না।

আবু তাহেরের মত একই সুর দিনহাটা সেটেলমেন্ট ক্যাম্পে অবস্থানরত আর এক বাসিন্দার। মহম্মদ নজরুল ইসলাম নামে ওই বাসিন্দা অভিযোগ ছিটমহল বিনিময়ের আগে তার বাড়ি ছিল বাংলাদেশের দাসিয়ার ছড়া এলাকায়। কিন্তু ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের পর তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে দিনহাটার এই সেটেলমেন্ট ক্যাম্পে রয়েছেন।

তিনি আরো জানান তিনিও এর আগে দিল্লিতে গিয়েছিলেন কিন্তু দিল্লী পুলিশ বরাবরই বাঙালি বিদ্বেষী সেজন্যই তিনি সেখানে টিকতে না পেরে ফিরে এসেছেন।

অপরদিকে এই গোটা ঘটনায় ছিটমহল আন্দোলনের প্রথম সারির মুখ এবং ছিটমহল আন্দোলনের জন্য ডাক্তার রাম মনোহর লোহিয়া রিসার্চ ফাউন্ডেশনের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সমাজকর্মী দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, কেন্দ্র রাজ্য দ্বৈরথ না করে উভয় সরকারের উচিত এই মানুষগুলোর দিকে নজর দেওয়া। একই সাথে ২০১৫ সালের যে ৯২১ জন মানুষ ছিটমহল বিনিময়ের ফলে ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, কোচবিহার জেলা প্রশাসনের উচিত তাদের ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করার, যাতে করে তারা দেশের যেকোনো প্রান্তে গিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। একই সাথে ছিটমহলের বাসিন্দাদের জমির কাগজ সহ একাধিক ইস্যু নিয়েও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন দীপ্তিমান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code