আইএটিটিইউসির সম্মেলনে কড়া সমালোচনা স্বপন দেবনাথ

Burdwan news


সঞ্জিত কুড়ি, পূর্ব বর্ধমান:-

রবিবার বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির ডাকে মিলন উত্সবে বক্তব্য রাখতে এসে আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি সন্দীপ বসুকে রীতিমত কড়া সমালোচনায় বিদ্ধ করলেন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী তথা পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাক্তন জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ। 


এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বপন দেবনাথ বলেন, আমরা গরীবের কথা বলি, কিন্তু গরীব কে? যাঁরা লোকের বাড়িতে কাজ করেন, যে রিক্সা চালায়, টোটো চালায়, ফুটপাতে যিনি হকারি করেন তাঁরা গরীব নয়? এই সমস্ত মানুষের জন্যই মমতা বন্দোপাধ্যায় সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্প চালু করেছেন। স্বপনবাবু বলেন, যাঁরা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেন তাঁদের নজর দেওয়া প্রয়োজন এই যোজনাতে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট ৫৫ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ৮ লক্ষ ১০ হাজার ৮৮৯ জন শ্রমিক এতে এখনও নাম নথীভুক্ত করেছেন। আর চলতি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত রাজ্য সরকার ১০৮ কোটি ৩৭ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬১৭ টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্ধমানে তো এত ইউনিয়ন রয়েছে। অনেক নেতাকেও দেখি। কিন্তু এই কার্ড করাতে কেন নেতাদের এত অনীহা। অথচ গল্প করতে, আড্ডা মারতে, পরের সমালোচনা করতে তো সময় পান। মোটর গাড়ির গ্যারেজ কর্মী, সাইকেল মেরামত কর্মী সকলেই এর আওতায় আসতে পারেন। 


স্বপনবাবু বলেন, খোদ কালনাতেই ২০টি বেকারি রয়েছেন। কখনও সন্দীপ বসু গেছেন তাদের কাছে? যাননি। স্বপনবাবু বলেন, এখন তো দেখি মাষ্টার মশাইরা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা। যারা শ্রমিকের 'শ' করলো না তারাই এখন দেখি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাও। অথচ দেখি ঋতব্রতবাবুর কাছে গিয়ে ওকে সভাপতি, সম্পাদক করার জন্য দরবার করেন। স্বপনবাবু বলেন, মমতা বন্দোপাধ্যায় টাকা দেবার পর দেখছি ডেকরেটরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বর্ধমানে তো হোটেল, রেঁস্তোরা তো কম নয়। নেতারা তো সেখানে যান। সেখানকার কর্মীদের গিয়ে কখনও বলেছেন এই কার্ড করানোর জন্য। বর্ধমানে তো অনেক বড় বড় দোকান রয়েছে, শপিং মল রয়েছে, কখনও খোঁজ নিয়ে দেখেছেন সেখানকার কর্মীদের কার্ড করানো হয়েছে কিনা, অথচ সেখানে তো জামাকাপড় কিনতে যান। 


এরপরেই স্বপনবাবু বলেন, সন্দীপ ওরফে বুবাই বলেই তিনি এটা বলতে পারলেন, অন্য কারও সম্পর্কে বলতে গেলে হয়তো তাকে মারতে আসবে। তিনি বলেন, যাঁরা আয়ার কাজ করেন তাঁরাও এই প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। বিউটি পার্লারে তো সব ফেসিয়াল করতে যায় মুখটা ফর্সা দেখানোর জন্য, তাঁরাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। বাড়িতে যাঁরা রান্নার কাজ করেন, পরিচারিকার কাজ করেন তাঁরাও এর আওতায় আসতে পারেন। তাঁদের কাছে যেতে হবে, বোঝাতে হবে। এজন্য আমাদের মাঠে নামা দরকার। 


স্বপনবাবু এদিন বলেন, আমি করজোড়ে নেতৃবৃন্দদের কাছে আবেদন করছি, এই তৃণমূল স্তরের মানুষের কথা ভাবুন, তবেই শ্রমিক আন্দোলন সার্থক হবে। উল্লেখ্য, স্বপনবাবু এদিন জানান, সারা বাংলা তৃণমূল তাঁত শ্রমিক ইউনিয়ন তৈরী হয়েছে। তার প্রথম জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বর্ধমানে আগামী ১২ ডিসেম্বর। বর্ধমান জেলায় ৫৫ হাজার তাঁত শ্রমিক রয়েছে বলে এদিন স্বপনবাবু জানিয়েছেন। এদিন স্বপনবাবু বলেন, সরকারী টাকা দেবার কথা শুনে এখন হয়তো অনেকেই তাঁতি হয়ে যাবেন, এটাও সমস্যা। যাঁরা প্রকৃত তাঁতি তাঁদের জন্যই এই ইউনিয়ন। এদিন মিলন উত্সবে উপস্থিত আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় সন্দীপ বসুকে নির্দেশ দিয়ে যান সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে নাম নথীভুক্ত করণের জন্য ব্লকে ব্লকে ক্যাম্প করতে হবে। 


অন্যান্যদের মধ্যে এদিন উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ‌্যামাপ্রসন্ন লোহার, যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদার, বিধায়ক অলোক মাঝি, মধুসূদন ভট্টাচার্য্য, এসটি সেলের রাজ্য সভাপতি দেবু টুডু, দক্ষিবঙ্গ রাষ্ট্র্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল প্রমুখরাও।