শুরু হয়ে গেল কোচবিহার রাজবাড়ির বড়দেবী মূর্তির তৈরির প্রক্রিয়া

Coochbehar



আজ ভাদ্রের শুক্লাষ্টমী উপলক্ষ্যে ময়না কাঠকে যুপ স্থাপনের মধ্যে দিয়ে কোচবিহার রাজবাড়ির বড়দেবী মূর্তির তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলো দেবীবাড়ির মন্দিরে।

ভাদ্র মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে রাজপ্রতিনিধি দুয়ারবক্সী মহাশয় কুচবিহার রাজবংশের রাজদণ্ড " হনুমানদন্ডের " উপস্থিতিতে এবং রাজপুরোহিতের ধর্মপাঠ পুজোর মধ্যে দিয়ে ময়না গাছের কাঠকে বেদীর ওপর যুপ স্থাপন করা হোলো এটাই বড়দেবীর শক্তিগোজ । শক্তিগোজ তিনদিন বেদীতে হাওয়া খাওয়ার পরে রক্তবর্ণা দশভূজা বড়দেবী দূর্গা মূর্তি তৈরী করা হবে। এটাই কুচবিহার রাজবংশের প্রাচীন নিয়ম চলে আসছে ৫১৫ বৎসর ধরে । কুচবিহার রাজবংশের পুজো হয়ে থাকে দেবী পুরান মতে।



ইতিহাস মতে , ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে কোচ রাজবংশের মহারাজা বিশ্বসিংহ বা বিশু শৈশব কালে আসামের চিকনাঝাড় নামক গভীর বনে কুমার চন্দন , কুমার মদন ও কুমার শিষ্য সিংহ এই তিনভাই ও তেরো জন বন্ধুদের সাথে খেলার সময় ময়না গাছের ডালকে দেবী দুর্গা কল্পনা করে বনফুল , ফল ইত্যাদি দিয়ে ভগবতীর পুজো করেছিলেন । সঙ্গীদের মধ্যে কেউ কেউ নাচ গান আরম্ভ করলো। এই আনন্দময় মুহূর্তে দেবীর কাছে বলির চিন্তা করে এক বালককে শিশু বা শিষ্যসিংহ পাঠার ন্যায় ধরলে কনিষ্ঠ ভাই বিশ্বসিংহ কুশের খড়গ দিয়ে " ভগবতী বলিং গৃহ্ন " বলে আঘাত করা মাত্র সত্যি সত্যি বালকটির শিরচ্ছেদ হয়ে রক্ত বইতে আরম্ভ করে । এই আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখে উপস্থিত বালকের শিশু ও বিশু এক বালককে বধ করেছে বলে চিৎকার করতে করতে পালিয়ে যায়। এসব দেখে শিষ্যসিংহ ও বিশ্বসিংহ গভীর বনে চলে যায় ।




এদিকে ক্লান্ত দুইভাই বনমধ্যে ঘুমিয়ে পড়লে বিশ্বসিংহ স্বপ্নে দেখতে পান দেবী পূজায় সন্তুষ্ট , তাঁদের আর কোনো ভয় নেই। দেবী দুর্গা বলেন - " যে স্থানে তোমরা পূজা করেছ সেখানে গিয়ে দেখবে দেবীর কৃপায় ময়না কাঠ নতুন পাতায় সুশোভিত হয়েছে । " ভগবতী দুর্গা নিজ হাতের কঙ্কন ও তীক্ষ্ণ খড়গ তাদের এই সময় দিয়েছিলেন । এই ঘটনাকে অনেকে কুচবিহার রাজ্যের প্রথম দুর্গাপুজোর কথা বলে থাকেন । পরবর্তীকালে স্বপ্নাদিস্থ হয়ে কুচবিহার রাজবংশের দশভূজা দুর্গামূর্তি পুজোর প্রচলন করেন বিশ্বসিংহের সুযোগ্য পুত্র কামরূপের দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্য মহারাজা নরনারায়ণ।




তাই আজোও ময়না গাছের ডালকে কুচবিহার রাজবংশের বড়দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মাণে শক্তি গোজ হিসেবে পুজো করা হয়।