ধ্বংসের মুখে শতাব্দি প্রাচীন দিনহাটার বড়োনাচিনার তাঁত শিল্প



weaving industry




তপন বর্মন, সংবাদ একলব্য:

একটা সময় খট খট আওয়াজে ঘুম ভাঙত। গভীর রাত পর্যন্ত চলত এই আওয়াজ। এই আওয়াজ আর কিছু নয় চলমান তাঁতের খট খট শব্দ। দূর্গা পূজার কয়েক মাস আগ থেকেই তাঁতি পাড়ায় এই আওয়াজে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠত। কিন্তু এখন,আর সেদিন নেই। ম্লান হয়ে আছে তাঁতি পাড়া।

শতাব্দি প্রাচীন বড়োনাচিনার তাঁত শিল্প আজ ধ্বংসের পথে। অস্তিত্বের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এই কুটির শিল্প গুলি। দিনহাটা শহরের অনতিদূরে পুটিমারী ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বড়োনাচিনা গ্রামের তাঁতি পাড়ায় একসময় প্রতিটি বাড়িত তাঁত শিল্প ছিল। বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হত তাঁতের শাড়ি। পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন জেলা সহ আসামের বাজারে সেগুলির বিশেষ চাহিদা ছিল। সারাবছর ধরে তাঁতিরা নিরলস পরিশ্রম করে তাদের এই কুটির শিল্প গুলিকে আশ্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার চাপে মুখ থুবড়ে পড়েছে তাঁত শিল্প। বাজারে ছেয়ে গেছে কলের তৈরি সস্তা ছাপা শাড়ি। সুতা এবং রঙের মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরির জোগান সর্বোপরি বাজারের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারায় তাঁতিরা নিজেদের কুটির শিল্প গুলোকে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে । বর্তমানে বড়োনাচিনার দুটি কারখানায় কয়েকজন শ্রমিক তাঁতের শাড়ি বানানোর কাজ করছে। তাঁতি পাড়ার প্রায় সকলেই ভিন রাজ্যে শ্রমিক কিংবা অন্য পেশার সাথে নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছেন।

বর্তমানে যে তাঁতিরা এই পেশায় নিযুক্ত তাদেরও দাবি সারাদিন কাজ করে ২০০ অথবা ৩০০ টাকা মজুরিতে তাদের সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁতের কাজেই করে আসছেন ফলে অন্য কাজ করাটাও তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে।এই অবস্হায় সরকারি সহায়তা পেলে তাদের অবস্হার কিছুটা উন্নতি হত।

weaving industry

বড়োনাচিনার তাঁতিপাড়া এলাকার বাসিন্দা পেশায় তাঁতশিল্পী সঞ্জিত দত্ত আক্ষেপের সুরে বলেন, "এই শিল্প আগামী দিনে বন্ধ হয়ে যাবে। কেউ এই শিল্পে আর কাজ করতে চাইছে না। পরিশ্রম অনুযায়ী আমাদের মজুরি অনেক কম। একটা শাড়ি বানালে ১০০ টাকা। সারা দিনে তিনটে শাড়ি বানালে ৩০০ টাকা। সেটা দিয়ে সংসার চলে না। কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধাও আমাদের জন্য নেই।"