কৃষ্ণনগরে পরিবেশ মেলা


কৃষ্ণনগরে পরিবেশ মেলা


দীপাঞ্জন দে: নদিয়ার কৃষ্ণনগরে এবছরের পরিবেশ মেলা অনুষ্ঠিত হলো ২৩ মার্চ, ২০২৪ (শনিবার)। এই নিয়ে নজরুল স্মৃতিধন্য গ্রেস কটেজে পরিবেশ মেলা তৃতীয় বার আয়োজিত হলো। পরিবেশ মেলা ২৪-এর আয়োজক সংস্থা ছিল গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ, নদিয়া পরিবেশ মঞ্চ এবং সুজন-বাসর। আর এই পরিবেশ মেলা সংগঠনে সহযোগিতা করেছিল বিজ্ঞান অন্বেষক পত্রিকা, নদিয়া সেঁজুতি প্রকৃতি বিদ্যাশ্রম এবং কৃষ্ণনগর গবেষণা পরিষৎ-এর মতো সংস্থা।

গ্রেস কটেজে ২৩ মার্চ ২০২৪ সারাদিনব্যাপী পরিবেশ মেলা চলে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবেশ ও বিজ্ঞানকর্মীরা পরিবেশ মেলায় অংশগ্রহণ করতে এসেছিলেন। এই পরিবেশ মেলার আহ্বায়ক ছিলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানকর্মী দীপককুমার দাঁ এবং পরিবেশকর্মী দীপাঞ্জন দে।

গ্রেস কটেজের প্রথা মেনে প্রথমে নজরুল আবক্ষ মূর্তিতে ও নজরুল প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। পরিবেশ মেলায় স্বাগত ভাষণ রাখেন গোবরডাঙা গবেষণা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা দীপককুমার দাঁ। এরপর পরিবেশ পত্রিকা ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষাবার্তা’-র নতুন সংখ্যাটি (পঞ্চম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪) এদিন প্রকাশিত হয়। অধ্যাপক অনিলকুমার সরকারের হাত দিয়ে পত্রিকার নতুন সংখ্যাটির আবরণ উন্মোচিত হয়। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট জনেরা এবং ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষাবার্তা’-র সম্পাদক দীপাঞ্জন দে ও প্রকাশক দীপককুমার দাঁ। পত্রিকার আবরণ উন্মোচনের পর প্রকাশক দীপককুমার দাঁ ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষাবার্তা’-র নতুন সংখ্যাটি সম্পর্কে এবং পত্রিকাটির চরিত্র সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। অধ্যাপক অনিলকুমার সরকার বাংলা ভাষায় এই ধরনের পরিবেশ পত্রিকার গুরুত্ব সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন এবং এর সাফল্য কামনা করেন।

পরিবেশ মেলায় এদিন বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বর্তমানকালের অন্যতম জনপ্রিয় বিজ্ঞান পত্রিকা ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’-এর নতুন সংখ্যাটিও (বর্ষ ২১ সংখ্যা ২, মার্চ-এপ্রিল ২০২৪) প্রকাশিত হয়। পত্রিকার নতুন সংখ্যাটির আবরণ উন্মোচন করেন বিজ্ঞানী পরিতোষ ভট্টাচার্য। এই সময় মঞ্চে বিশিষ্ট জনেরা এবং ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’-এর সম্পাদক প্রবীর বসু ও প্রকাশক জয়দেব দে উপস্থিত ছিলেন। ‘পরিবেশ মেলা ২০২৪’-এ ‘সমর বাগচী স্মারক বক্তৃতা’-র আলোচক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. অনিলকুমার সরকারকে (বাবু জগজীবন রাম চেয়ার প্রফেসর, ভূতপূর্ব অধ্যাপক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)। সভাকক্ষে উপস্থিত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পরিবেশকর্মী, বিজ্ঞানকর্মী, গুণীজন সকলে মন দিয়ে এই আলোচনা উপভোগ করেন। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরিবেশ মেলা কমিটি এবছর পরিবেশ বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা এবং আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল।

কৃষ্ণনগর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিদ্যালয় ও কলেজগুলি থেকে প্রায় চল্লিশ জন শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বিজ্ঞানী ড. পরিতোষ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট কবি রামকৃষ্ণ দে এবং লেখক সুজিতকুমার বিশ্বাস। আর সহযোগিতায় ছিলেন রোশনী হালসানা। ছাত্র-ছাত্রীদের কুইজ প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন লেখক ইনাস উদ্দীন, বিজ্ঞান সংগঠক সুব্রত বিশ্বাস এবং পরিবেশ বন্ধু তরুণকুমার সাহা। গ্রেস কটেজ প্রাঙ্গণে পরিবেশ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পরিবেশ ও বিজ্ঞান সংগঠনের প্রতিনিধিরা পরিবেশ বিষয়ক একাধিক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল।

পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, গ্রন্থাদির প্রদর্শনী এবং বিপণনের ব্যবস্থা ছিল। নদিয়া জেলার বাদকুল্লার ‘রাখী পত্রিকা’, উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়া বিজ্ঞান দরবারের ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’ পত্রিকা, রানাঘাটের পরিবেশ সংগঠন ‘নেচার ফার্স্ট’ সংগঠনের বার্ষিক পত্রিকা ও তাদের পরিবেশবান্ধব সামগ্রী, ‘লাভ দাই নেচার : রিকানেক্টিং রুটস’-এর বিভিন্ন পরিবেশ সামগ্রী, ‘গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ’-এর পত্র-পত্রিকা ও গ্রন্থাদি, শান্তিপুর নিবাসী বিশিষ্ট জৈব কৃষি প্রচারক শৈলেন চণ্ডীর সংগঠনের তৈরি ত্বক বান্ধব আবীর, সাবান, বিশুদ্ধ ঘি ইত্যাদি বিষমুক্ত সামগ্রী পরিবেশ মেলায় ছিল।

মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতির পর ‘পরিবেশ আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ’ বিষয়ে সাবলীল বক্তব্য রাখেন নির্মল পরিবেশ প্রচারক তুহিনকান্তি মুখার্জি। তাঁর বক্তব্যের পর পরিবেশ মেলার চতুর্থ পর্বে নদিয়া পরিবেশ মঞ্চের বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে নদিয়া জেলা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে মতবিনিময় হয়। নদিয়া পরিবেশ মঞ্চের আহ্বায়ক সুব্রত বিশ্বাস এই সভা পরিচালনা করেন।

জেলা ও রাজ্য পর্যায়ের তিরিশজন প্রতিনিধি এদিনের গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। সুদীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সভা থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।