ইচ্ছেশক্তির জোর থাকলে কোনও কিছুই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, দুরন্ত উদাহরণ প্রশান্ত 

Prasanta Das


বীরভূমের সাঁইথিয়া:-

ইচ্ছেশক্তির জোর থাকলে কোনও কিছুই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন সাঁইথিয়ার প্রশান্ত দাস, স্থানীয়রা তাকে অবশ্য হাত কাটা মামু বলতেই পছন্দ করেন। জন্ম‌ থেকেই সব কিছু আর ৫টা মানুষের মত স্বাভাবিক থাকলেও ক্লাস সিক্সের পর থেকেই জীবনে ঘটে বড়সড় বিপত্তি। কাঁধের দু’পাশ থেকে দুটো হাত নেই।এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও হার মানেননি প্রশান্ত। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে কাটা হাত নিয়ে রোজগার করছেন তিনি। 



বীরভূমের সাঁইথিয়া শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড এর বাসিন্দা প্রশান্ত দাস। প্রতিবন্ধকতাকে জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে কখনও জিততে দেননি। শুধুমাত্র দুটো অন্ন সংস্থানের জন্য নিজের জীবনের কঠিনতম অবস্থা থেকেও এক‌ কঠিন কাজ বেছে‌ নিয়েছেন তিনি। কাটা হাতের অবশিষ্টাংশে একটি বালা পরে কাসর বাজিয়ে বিভিন্ন ট্রেনে চেপে কীর্তন গেয়ে উপার্জন চালাচ্ছেন তিনি। তবে প্রশান্তের জীবন কাহিনী সিনেমার প্রেক্ষাপটকেও হার মানাবে। 




প্রথম থেকেই যে তার হাত দুটি কাটা বা হাত নেই সেটা কিন্তু নয়। তবে কিভাবে ঘটল এই বিপত্তি? এই বিষয়ে প্রশান্ত দাস আমাদের জানান তিনি যখন ক্লাস সিক্সে পড়তেন সেই সময় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি দেখতে পান রাস্তার মধ্যে একটি ইলেকট্রিক তার ছিড়ে পড়ে রয়েছে। ছোট্ট সেই বয়সে তিনি অনুভব করেন যে এই ইলেকট্রিক তার অন্য কারো হাতে বা পায়ে লাগলে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। আর সেই কারণেই অবুঝ মনে সে ইলেকট্রিক তারটিকে তিনি পায়ে করে সরাতে গেলে তারের মধ্যে হাত পড়ে যায়। আর সেখানেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে বাড়ির লোকজন তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকরা দেখেন তার হাতের অবস্থা খারাপ।তার দুটি হাট কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তারপর থেকে শুরু তার জীবন যুদ্ধ। তবে বিশেষভাবে সক্ষম বলে যে তার পাশে পরিবারের লোকজন ছিল না সেটা নয়।বাড়ির লোকজন এর সহযোগিতায় তিনি ধীরে ধীরে সেই দুর্ঘটনা ভুলে স্বাভাবিক হন। বড় হওয়ার পর তার বাবা-মা তার বিয়ে দেন।তবে থেকে তার স্ত্রী তার সঙ্গী ছায়া হয়ে রয়েছে। বর্তমানে প্রশান্তের বাড়িতে রয়েছে তার স্ত্রী,তার মা,বাবা এবং তার একটি ছোট ছেলে এবং একটি মেয়ে। 



ট্রেনের মধ্যে কীর্তন গেয়ে কোন কোন দিন তিনি ৩০০-৪০০ টাকা আবার কখনও কখনও ১০০০ টাকা পর্যন্ত প্রত্যেকদিন উপার্জন করেন। সকালে উঠে তিনি খাওয়া-দাওয়া সেরে হাতে বালা পড়ে কাসর নিয়ে বেরিয়ে পড়েন স্টেশনে।সেখান থেকে বিভিন্ন ট্রেনে চেপে তিনি এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে কীর্তন গেয়ে উপার্জন করে নিজের সংসার চালাচ্ছেন।