স্রোতের বিপরীতে চলা এক জীবনের কথা

students and teacher
শিখা  কর্মসূচী 


নদীর স্রোতের সাথে মল-মূত্র, আবর্জনা সবই ভেসে চলে, কিন্তু স্রোতের বিপরীতে? স্রোতের বিপরীতে চলার নামই জীবন। শিক্ষক জীবন বসাক এমনই একজন শিক্ষক যিনি আর সবার মতন নন, যার ভাবনা সমাজের পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের নিয়ে। 

মাথাভাঙ্গা মহকুমার জোরপাটকি উচ্চবিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক তথা জাতীয় সেবা প্রকল্প ইউনিটের প্রোগ্রাম অফিসার জীবন বসাক ইতিমধ্যে একাধিকবার সংবাদ শিরোনামে এসেছেন তার কর্মকান্ডের জন্য। মূলত বিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের বেছে নিয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তাদের অঙ্ক এবং ইংরেজির আলাদা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিনা পারিশ্রমিকে। তার এই কর্মসূচির নাম 'চলো পড়তে শিখি' । 

২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে প্রতি রবিবার ছুটির দিনে নিজের স্কুলেই তিনি শুরু করেন এই কর্মসূচী। যা ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। জীবন বাবু বলেন, 'এই বিশেষ ক্লাসের উদ্দেশ্যই হল পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েরা যাতা নিজের নাম লিখতে পারে, নিজের ক্লাসে অন্যদের সঙ্গে খুব সহজে মানিয়ে চলতে পারে। এই সমস্ত ছেলেমেয়েদের যদি সাহায্য করা না হয় তাহলে তারা একসময় পড়াশুনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এবং মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দেবে। 

প্রাথমিক অবস্থায় ৩০ জনের মতন ছাত্রছাত্রী নিয়ে এই অবৈতনিক পাঠশালা শুরু করলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ এর কাছাকাছি। একার পক্ষে এদের সকলকে শেখানো সমস্যাজনক হওয়ায় তার বিদ্যালয়ের জাতীয় সেবা প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবকদের এই কাজে নিযুক্ত করেন। আর এই স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহনে বর্তমানে সুন্দর ভাবে চলছে পাঠদান। 

ইতিমধ্যে সুফল ফলতেও শুরু করেছে এই 'চলো পড়তে শিখি' কর্মসূচী। যার দরুন শিক্ষক জীবন বসাকের নেতৃত্বেই সম্প্রতি জোরপাটকি গ্রাম পঞ্চায়েতের আমতলি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য গত কয়েকমাস ধরে একই ধরনের কর্মসূচী শুরু হয়েছে, যার নাম 'শিখা' । মূলত এই এলাকার পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের ABCD, অ, আ, ক, খ, , যোগ- বিয়োগ, নামতা শেখানো হচ্ছে  নতুন এই কর্মসূচীতে। 

ভালো বেতন নিয়ে সুখে শান্তিতেই  জীবন কাটাতে পারতেন জীবন বাবু। কিন্তু না, স্রোতের বিপরীতে গা ভাসিয়েছেন তিনি। শুরুটা প্রতিকূল হলেও বর্তমানে খুব সহজেই এগিয়ে চলছেন জীবন বাবু তার স্বপ্নের দুই কর্মসূচীকে হাতিয়ার করে।