রাজ্যের পার্টটাইম শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ এবার মুখ্যমন্ত্রীর হাতে, দাবী না মানলে ধরনা কর্মসূচি




চরম দুর্দশা ও বঞ্চনার শিকার রাজ্যের প্রায় 10 হাজার অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সমস্ত কলেজের অতিথি শিক্ষকদের সরকারিভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন ২০১৯ সালেই, সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে এখনো সরকারের তরফ থেকেই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরকে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে এবং সরকার অনুমোদন প্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে 886 জন চুক্তিভিত্তিক পার্ট টাইম শিক্ষক রয়েছেন, যারা সরকার থেকে বেতন পেয়ে থাকেন। অথচ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা নিযুক্ত এবং স্কুল ফান্ড দ্বারা পরিচালিত অস্থায়ী পার্টটাইম শিক্ষক শিক্ষিকারা এখনো বঞ্চিত এবং শোষিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ।

অভিযোগ, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগ করে ম্যানেজিং কমিটি এবং স্কুল ফান্ড থেকে তাদের মাসিক সান্মানিক হিসেবে মাসে 1000-3000 টাকা পর্যন্ত বেতন প্রদান করা হয়, যা স্বাধীন ভারতবর্ষে লজ্জাজনকও বটে। এই ধরনের শিক্ষক রাজ্যের উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে 2012 সাল থেকে এখনো নিয়োগ হয়ে চলছে।

আরও গুরুতর অভিযোগ, যেসব অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ান তাদেরকে দিয়ে সরকার বাধ্যতামূলক ভাবে দ্বাদশ শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দেখায় এবং সেই খাতা দেখার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ইতিমধ্যেই তাদের হাতে পৌঁছে গেছে। এদের দিয়েই রাজ্যের বর্তমান বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকারের পক্ষে সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে। অথচ সরকার তাদের কোনো বেতন প্রদানের দায়িত্ব নিতে রাজি নয়, যা ইংরেজ শাসনের শোষণকেও হার মানাবে। অথচ বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষক এলে অমানবিক ভাবে তাদেরকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়।


এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ North Bengal Part-Time Teachers' Welfare Association-এর পক্ষ থেকে গত 2022 সালের অক্টবর মাসে শিলিগুড়িতে উওরকন্যায় একটি মিছিলের মাধ্যমে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি ডেপুটেশন প্রদান করা হয়। ডেপুটেশনে তাদের মূল দাবি ছিল যেহেতু বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা নিযুক্ত এবং স্কুল ফান্ড দ্বারা পরিচালিত রাজ্যের সমস্ত অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের স্কুল ফান্ডের পরিবর্তে সরকার দ্বারা সরাসরি আর্থিক দায়ভার গ্রহণ করা হয় এবং 60 বছর পর্যন্ত কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। এই ডেপুটেশনটি 2023 সালের জানুয়ারী মাসে নবান্নের CMO Grievance Redressal Cell-এর উদ্যোগে বিকাশ ভবনে স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্টে একটি ই-ফাইল তৈরী হয়। ফাইল পরিচালিত হয় North Bengal Part time Teachers Welfare Association-এর নামে। এই ফাইলের মধ্যে স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে প্রায় 10 মাস আগে রাজ্যের সমস্ত উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সকল অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিযুক্তির তারিখ, নিয়োগ পদ্ধতি এবং মোট সংখ্যা কত রয়েছে, সেই সম্পর্কে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয় কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশন ডিরেক্টরেট-এর কাছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনের তরফ থেকে DI-দের দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সুশান্ত সরকার, রাজ্য সম্পাদক শুভ্রা ঘোষ, রাজ্য সহ সম্পাদক আশরাফুল মণ্ডল, দক্ষিণ বঙ্গের রাজ্য সহ সম্পাদক সুমিত ব্যানার্জী এবং পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি সমীর মন্ডল ও কলকাতা জেলার সভাপতি অনুরূপ দত্ত, বাঁকুড়া জেলার সুমনদীপ এবং রাজ্য কমিটির সদস্য তারক নাথ জানা বার বার বিকাশ ভবনে ছুটে গিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর OSD, Principal Secratary, Secratary, Joint Secratary, Deputy Secratary, Assistant Secratary, Commissioner, Assistant Commissioner এবং Deputy Commissioner দের কাছে যাতে তারা ফাইল দ্রুত কার্যকর করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের আর্থিক দায়ভার গ্রহণ করে এবং 60 বছর পর্যন্ত কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায়, গত 18/01/24 তারিখে সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে 2 জন করে প্রতিনিধি বিকাশ ভবনে সমবেত হয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, Principal Secratary, Secratary এবং Commissioner-কে লিখিত ভাবে স্বারক লিপি প্রদান করে জানানো হয় যে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই রাজ্যের সমস্ত ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের আর্থিক দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে, অথবা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যের সমস্ত ধরনের অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক, অতিথি শিক্ষক, চুক্তভিত্তিক শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দিতে হবে এবং আগামী দিনে রাজ্যের কোনো বিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না।

এই বিষয়ে সরকারের মতামত জানতে আজ পুনরায় সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ও অ্যাডভাইজার চেয়ারপার্সন সুশান্ত সরকার এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সভাপতি ও রাজ্য কমিটির সদস্য তারক নাথ জানা এবং কলকাতা জেলার সভাপতি অনুরূপ দত্ত বিকাশ ভবনে হাজির হন। রাজ্য সভাপতি ও অ্যাডভাইজার চেয়ারপার্সন সুশান্ত সরকার জানান- "বিকাশ ভবনে School Education Department থেকে জানানো হয় যে, Commissioner of School Education Directorate থেকে তথ্য সংগ্রহ না করে CMO Grievance Redressal Cell-এর ফাইলে একটি Note দিয়ে স্বীকার করেছে এবং জানিয়ে দিয়েছে যে, "বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকারা রাজ্যের Unapproved Part Time Teachers এবং বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি তাদের নিয়োগ করে, তাই এই ধরনের শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ করে আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করার কোনো আইনি প্রবিধান তাদের কাছে নেই।"

সুশান্ত বাবু আরও বলেন- "এই নোটস সহ এই CMO Grievance Redressal Cell-এর ফাইলটি এক সপ্তাহের মধ্যে নবান্নে পাঠানো হবে বলে স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট সংগঠনকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছে। তাই এবার বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা নিযুক্ত এবং স্কুল ফান্ড দ্বারা পরিচালিত রাজ্যের প্রায় 10 হাজার ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভবিষ্যত পুরোপুরি নির্ভর করছে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশায়ার সিদ্ধান্তের উপর।"

এবিষয়ে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ও অ্যাডভাইজার চেয়ারপারসন সুশান্ত সরকার আরও জানান, "যদি রাজবংশী মাধ্যমের বিদ্যালয়ে সরকার নতুন ভাবে অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক নিয়োগ করতে পারে, সরকারি বিদ্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে পুনরায় সরকার নিয়োগ করতে পারে এবং চুক্তি ভিত্তিক পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকারা সরকার থেকে বেতন পেতে পারেন, তাহলে Govt. Sponsored ও Govt. Aided বিদ্যালয়ে দীর্ঘ 5-12 বছর পর্যন্ত অস্থায়ী পার্টটাইম শিক্ষক শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত থাকার পরও সরকার কেন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের সরাসরি সরকার কেনো বেতন প্রদান করতে পারবে না? তাই বিহার সরকারের মত সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা নিযুক্ত এবং স্কুল ফান্ড দ্বারা পরিচালিত অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের সরকার সরাসরি বেতন প্রদানের দায়িত্ব না নিলে, লোকসভা নির্বাচনের আগেই উচ্চমাধ্যমি পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয়ের গেটের সামনে ধরনা কর্মসূচি পালন করা হবে। আর আমাদের সমর্থনে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কেউ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করবে না, ফলে রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থা অচলাবস্থার সম্মুখীন হবে, তার জন্য দায়ী থাকবে সরকার।"