বিপর্যয় মোকাবিলায় হ্যাম রেডিও একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, প্রত্যন্ত দ্বীপে অস্থায়ী রেডিও স্টেশন

Radio



নামখানা:

এখন হাতে একটা স্মার্টফোন রয়েছে মানেই প্ৰায় যে কোনও সমস্যার সমাধান রয়েছে আপনার হাতের মুঠোয়৷ ফোন করা, বার্তা পাঠানো, ছবি পাঠানো, লোকেশন পাঠানো, এমন কী বিপদ সঙ্কেত পাঠাতেও স্মার্টফোনকে কাজে লাগানো যায়৷



কিন্তু যে সমস্ত এলাকায় নেটওয়ার্কের সমস্যা রয়েছে বা বড় কোনও দুর্যোগের ফলে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক কাজ করছে না, সেখানে বিকল্প যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় হ্যাম রেডিও।যেমন, প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে, কাজ করছে না মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক, সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে, উদ্ধার কাজের বার্তা সঠিক ভাবে পৌঁছে দিতে হ্যাম রেডিও কে কাজে লাগানো হয়৷ সুন্দরবনের প্রতিবছর প্রাকৃতিক বিপর্যয় লেগেই রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আমফান, ইয়াস, ফর্নী, সহ বিভিন্ন সময় একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় হানা দিয়েছে সুন্দরবনে। বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় কিংবা নদী বা সমুদ্রের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সুন্দরবনের উপকূল এলাকার বাসিন্দারা। 



দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকের প্রত্যন্ত একটি দ্বীপ হল মৌশুনী। একদিকে চিনাই নদী ও অপরদিকে বটতলা নদী এবং সামনে বঙ্গোপসাগর। বিভিন্ন সময় বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় কিংবা প্রবল জলোচ্ছ্বাস তছনছ করে দিয়েছে মৌশুনীকে। যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে মৌশুনী দ্বীপে মানুষজনকে উদ্ধার করতে বেগ পেতে হয় জেলা প্রশাসনকে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় এই দ্বীপের যে সকল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম থাকে সেই সিস্টেম সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হয় জেলা প্রশাসনকে। অতীতের বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে কোনো বিপর্যয়ের সময় উদ্ধার কার্যের গুরু দায়িত্ব দেয়া হল হ্যাম রেডিওকে। 



মৌশুনীর প্রত্যন্ত দ্বীপ এলাকায় যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা যে কোন পরিস্থিতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সংযোগ করার জন্য হ্যাম রেডিও এর পক্ষ থেকে একটি অস্থায়ী রেডিও স্টেশন তৈরির কাজ শুরু হল। এমনকি ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের কিভাবে বিপর্যয়ের সময় অস্থায়ী রেডিও স্টেশন তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সংযোগ করা যায় এই প্রান্তিক এলাকার মানুষদের কাছে যাতে দ্রুত উদ্ধারকারী দল পৌঁছাতে পারে সেই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । ইতিমধ্যেই মৌশুনী দ্বীপে বালিয়ারি এলাকায় একটি অস্থায়ী রেডিও স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে । 


পশ্চিমবঙ্গ হ্যাম রেডিওর সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস জানান যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর ফলে সাধারণ মানুষের কাছে উদ্ধারকারী দল কিংবা প্রয়োজনীয় সামগ্রিক পৌঁছাতে দেরি হয়। অতীতে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর উদ্ধারকার্যে হ্যাম রেডিওর ব্যবহার করেছে জেলা প্রশাসন। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা একটি অস্থায়ী রেডিও স্টেশন নির্মাণ করে যোগাযোগ সম্পন্ন করতে পারি।মৌশুনী দ্বীপে আমরা অস্থায়ী একটি রেডিও স্টেশন নির্মাণ করেছি। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদেরকে নিয়ে কিভাবে এই অস্থায়ী রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে বিপর্যয়ের সময় সাধারণ মানুষদের উদ্ধার করা সম্ভব হয় সেই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমরা সিভিল ডিফেন্স এর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে । এছাড়াও এলাকার মানুষজন দের অর্থনৈতিকভাবে মান উন্নয়ন করার জন্য রেডিও সোসাইটি অফ গ্রেট ব্রিটেন (as 15) এর মাধ্যমে ব্রীজ অন এয়ার প্রোগ্রাম আমরা পালন করেছি । এর মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত একটি দ্বীপ মৌশুনি দ্বীপ রয়েছে তা অনুমোদন পেল। এর ফলে বিদেশ থেকেও বহু পর্যটক এই মৌশুনী দ্বীপে ঘুরতে আসবে এবং মৌশুনি দ্বীপের সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার মান উন্নয়ন হবে। 



নামখানা ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা ম্যানেজমেন্ট অফিসার রূপম দত্ত জানান , যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় সাধারণ মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় আমাদের কাছে। তার কারণ সম্পূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিধ্বংসী ঝড়ে । বড় বড় নেটওয়ার্কিং টাওয়ার ভেঙে পড়ে যায়। দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষজনের সঙ্গে তখন যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা হল হ্যাম রেডিও। যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উদ্ধার কার্যে হ্যাম রেডিওর অনস্বীকার্য। যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিভাবে অস্থায়ী রেডিও স্টেশন নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে হয় সেই বিশেষ প্রশিক্ষণ হ্যাম রেডিও সদস্যরা ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর ফলে যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা বা সদস্যরা প্রস্তুত থাকবে। যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবনের ওপর আঘাত হানলে অতি দ্রুততার সাথে যাতে উদ্ধারকার্য শুরু করা যায় সেই দিকে আমাদের বিশেষ লক্ষ্য থাকবে। তবে দেখার বিষয় যে আগামী দিনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মোকাবিলার ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী হয় এই ব্যবস্থা।